বাংলাদেশ-ব্রুনাই ৪ দলিল স্বাক্ষর, ঢাকা ছাড়লেন সুলতান - Southeast Asia Journal

বাংলাদেশ-ব্রুনাই ৪ দলিল স্বাক্ষর, ঢাকা ছাড়লেন সুলতান

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশ ও ব্রুনাই দারুসসালামের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে জ্বালানি, বিমান চলাচল, জনবল নিয়োগ এবং দুই দেশের নাবিকদের জন্য সনদের স্বীকৃতি সংক্রান্ত চারটি দলিলে স্বাক্ষর করেছে ঢাকা ও বন্দর সেরি বেগাওয়ান। এর মধ্যে একটি চুক্তি ও তিনটি সমঝোতা স্মারক।

রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ ও ব্রুনাই দারুসসালামের প্রতিনিধি দলের মধ্যে ফলপ্রসূ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

একমাত্র চুক্তিটি বিমান পরিষেবা সংক্রান্ত এবং সমঝোতা স্মারকগুলো হলো- বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থান ও নিয়োগ, এলএনজি ও অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহে সহযোগিতা, সমুদ্রযাত্রীদের জন্য প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেশন এবং পর্যবেক্ষণের মান সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক কনভেনশনের বিধানের অধীনে জারি করা সনদের স্বীকৃতি।

‘বিমান পরিষেবা সংক্রান্ত’ চুক্তিতে সই করেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং ব্রুনাইয়ের ফাইন্যান্স ও ইকোনোমি মন্ত্রী আমিন আবদুল্লাহ। ‘বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগ’ বিষয়ে ঢাকার সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং ব্রুনাইয়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদিন বিন হাজি আবদুল রহমান।

‘এলএনজি ও প্রেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ’ বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে সই করেন ব্রুনাইয়ের ফাইন্যান্স ও ইকোনমি মন্ত্রী আমিন আবদুল্লাহ এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। সমুদ্রযাত্রীদের জন্য প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেশন এবং পর্যবেক্ষণের মান সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক কনভেনশনের বিধানের অধীনে জারি করা সনদের স্বীকৃতি বিষয়ক সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশের নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং ব্রুনাইয়ের ফাইন্যান্স ও ইকোনমি মন্ত্রী আমিন আবদুল্লাহ।

জ্বালানি সহযোগিতা
জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ও ব্রুনেই। বাংলাদেশের জ্বালানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে একটি স্থিতিশীল ও আঞ্চলিক জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ব্রুনেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য রপ্তানির বিষয়ে রাজি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রুনেইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহর আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।

যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের ক্ষেত্রে দুই দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই মুহূর্তে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ সম্ভাবনার তুলনায় অনেক কম। তাই দুই দেশ বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দুই পক্ষ হালাল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারে রাজি হয়েছে।

বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ব্রুনেইকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। এই প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট খাতে বিনিয়োগ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে ব্রুনেই। অন্যদিকে ব্রুনেই সে দেশের অর্থনীতি বহুমুখীকরণ কার্যক্রমের সুবিধা কাজে লাগিয়ে খাদ্য, কৃষি ও মৎস্যশিল্পে বিনিয়োগে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে।

ব্রুনেইয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের ২০–২৫ হাজার কর্মী কাজ করছেন। মূলত সে দেশে অবকাঠামো নির্মাণকাজে কর্মীরা যুক্ত রয়েছেন। ব্রুনেই তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীদের ভূমিকার প্রশংসা করেছে। দক্ষ কর্মী, পেশাজীবীসহ ব্রুনেইয়ের যেসব খাতে প্রয়োজন, সেখানে বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নিয়োগ নিয়ে আলোচনার বিষয়ে দুই দেশ রাজি হয়েছে। বাংলাদেশ ও ব্রুনেই স্বচ্ছ, নিয়মতান্ত্রিক ও নৈতিক উপায়ে কর্মী নিয়োগপ্রক্রিয়া পরিচালনায় সম্মত হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সামর্থ্য এবং আধুনিক ও উন্নত স্বাস্থ্য অবকাঠামোতে ব্রুনেইয়ের সক্ষমতার বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে দুই দেশ স্বাস্থ্য খাতে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে আলোচনা করেছে। এই সমঝোতা স্মারকটি হবে স্বাস্থ্য খাতের পেশাজীবী, বিশেষায়িত সেবা খাত ও ওষুধশিল্পে উৎপাদনে জড়িত কর্মীদের প্রশিক্ষণ, নিয়োগের জন্য পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে।

শীর্ষ বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ব্রুনেইয়ের সুলতানের সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

ব্রুনেইয়ের সুলতানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ব্রুনেইয়ের ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। এ লক্ষ্যে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একসঙ্গে কাজ করবেন। এ ছাড়া একটি যৌথ পরামর্শ কমিশন গঠন করে সমস্যা থাকলে তা সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেছে উল্লেখ করে ব্রুনেইয়ের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান। ব্রুনেইয়ের সুলতান বাংলাদেশ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, মৎস্য ও হালাল মাংস বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা ছাড়লেন সুলতান
ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দীন ওয়াদ্দৌলাহ তিন দিনের সফর শেষে বন্দর সেরি বেগাওয়ানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। আজ সোমবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে সুলতানকে বহনকারী বিশেষ বিমান ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।

বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ব্রুনাইয়ের সুলতানকে বিদায় জানান।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে শনিবার ঢাকায় আসেন সুলতান বলকিয়াহ। ব্রুনাইয়ের সুলতানকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি। সেখানে সুলতানকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এরপর সুলতান সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সুলতানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ঐদিন সন্ধ্যায় সুলতান বঙ্গভবনের ক্রিডেনশিয়াল হলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে সুলতান রাষ্ট্রপ্রধানের রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার সুলতান ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর বিকেল পৌনে ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে শেখ হাসিনা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এরপর সরকার প্রধান ও সুলতান বেশ কিছুক্ষণ একান্তে বৈঠক করেন।

পরে বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন, অন্যদিকে ব্রুনাইয়ের নেতৃত্ব দেন সুলতান।