তালেবান নেতাদের সঙ্গে দেখা করলেন জাতিসংঘের শীর্ষ নারী কর্মকর্তারা - Southeast Asia Journal

তালেবান নেতাদের সঙ্গে দেখা করলেন জাতিসংঘের শীর্ষ নারী কর্মকর্তারা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের শাসনব্যবস্থায় মাধ্যমিক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নারীরা নিষিদ্ধ। ত্রাণ সংস্থাসহ অনেক কর্মস্থলেও নিষিদ্ধ তারা। এমন অবস্থায় আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক ত্রাণ কার্যক্রম হুমকির মধ্যে আছে। প্রচণ্ড শীত আর দুর্ভিক্ষের মুখে থাকা দেশটির জন্য এখন মানবিক সহায়তা খুব জরুরি। এমন অবস্থায় জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল বুধবার কাবুল সফর করেছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তান সফর করা জাতিসংঘের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদল এটি। শুধু তা–ই নয়, দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন এক নারী, যিনি অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তাঁর উপমহাসচিব আমিনা মোহাম্মদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলকে আফগানিস্তানে পাঠান। ওই প্রতিনিধিদলে জাতিসংঘের আরও এক নারী কর্মকর্তাও আছেন। তিনি হলেন জাতিসংঘের নারীর ক্ষমতায়নবিষয়ক সংস্থা ‘ইউএন উইমেন’–এর প্রধান সীমা বাহাউস।

নারী ত্রাণকর্মীদের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা প্রত্যাহার করা নিয়ে জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতাদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়া হয় এই প্রতিনিধিদলকে। নারী ত্রাণকর্মীদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে জরুরি মানবিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলাউয়ি আমির খান মুত্তাকি আফগানিস্তানের কাবুলে জাতিসংঘের ওই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাওলাউয়ি আমির খান মুত্তাকির মুখপাত্র বলেছেন, প্রতিনিধিদলটি বিশ্বের কাছে আফগানিস্তানের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরবে, এমন আশায় বৈঠক শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তালেবান শাসনের প্রতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকা এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না।

আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সমন্বয়ক রমিজ আলাকবারভ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘লোকজন ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে। সময় ফুরিয়ে আসছে। আমাদের এখন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা প্রয়োজন।

তবে এ রক্ষণশীল সমাজে নারীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য যদি আমাদের সঙ্গে নারী ত্রাণকর্মী না থাকেন, তাহলে আমরা কাজ করতে পারব না।’

আফগানিস্তানে তাপমাত্রা মাইনাস ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। পার্বত্য এলাকাগুলোয় তাপমাত্রা আরও কম। নিয়মিত বিদ্যুৎ থাকে না। এমন অবস্থায় ত্রাণ সংস্থায় নারীদের কাজ করা নিষিদ্ধ করায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সহায়তা সংস্থা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।

ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ছাড়া আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে কিছু কিছু সংস্থা তাদের কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করেছে।

স্বাস্থ্য খাতে নারী চিকিৎসক ও সেবিকাদের উপস্থিতি জরুরি। তালেবান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন বলছে, নারীরা স্বাস্থ্য খাতে কাজ করতে পারবেন। এতে অবশ্য স্বাস্থ্যবিষয়ক কিছু কর্মসূচি আবারও চালু করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

চলতি সপ্তাহে দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের বেশির ভাগ কর্মসূচি থেমে থাকলেও স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষাসহ কিছু কার্যক্রম আমরা আবারও শুরু করছি। এসব ক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুস্পষ্ট, নির্ভরযোগ্য নিশ্চয়তা পেয়েছি যে আমাদের নারী কর্মীরা কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়া নিরাপদে কাজ করতে পারবেন।’

কাবুলে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির কর্মী সামিরা সাইদ রহমান বলেছেন, আফগান নারীদের সব জায়গায় কাজ করার সুযোগ দেওয়া জরুরি। মাঠপর্যায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জরিপ করা থেকে শুরু করে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করা পর্যন্ত সব সুযোগই দিতে হবে।

সামিরা বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা বাস্তবসম্মত পথ বেছে নিচ্ছি, বিভিন্ন খাতে তালেবানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছি।’ তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলটি আফগানিস্তানে যাওয়ার আগে এর প্রতিবেশী দেশগুলো সফর করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধভাবে সরব করে তোলাটাই এ সফরের লক্ষ্য। এর অংশ হিসেবে ইসলামি সম্মেলন সংস্থারও (ওআইসি) দ্বারস্থ হন তাঁরা।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগান জনগণ যখন ভাবছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় অংশ তাদের ভুলে গেছে, তখন জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের সফরটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হতে পারে।