কোরবানির জন্য রোহিঙ্গারা পাচ্ছেন ২৫০০ গরু, টেকনাফে অসন্তোষ - Southeast Asia Journal

কোরবানির জন্য রোহিঙ্গারা পাচ্ছেন ২৫০০ গরু, টেকনাফে অসন্তোষ

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

কক্সবাজারের উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরে কোরবানির জন্য ২ হাজার ৫০০টি গরু, ৬০০টি ছাগল ও ২ হাজার কেজি মাংস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত দেশি-বিদেশি অন্তত ২০টি বেসরকারি সংস্থা পশুগুলো সরবরাহ করছে। কাল বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সকালে পশুগুলো জবাই করে রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে মাংস বিতরণ করা হবে।

তবে টেকনাফের ১০টি আশ্রয়শিবিরে এবার কোনো কোরবানির পশু বরাদ্দ না দেওয়ায় অসন্তোষ বিরাজ করছে। অর্থসংকটের কারণে কোনো সংস্থা পশু সরবরাহ করেনি। শেষ মুহূর্তে কোরবানির জন্য রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে গরু, মহিষ ও ছাগল কেনার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। ৮ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। এর মধ্যে উখিয়ায় ৯ লাখ ও টেকনাফে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। ৮ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। এর মধ্যে উখিয়ায় ৯ লাখ ও টেকনাফে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস।

রোহিঙ্গা নেতারা জানান, গত বছর উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরের পৌনে ২ লাখ রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ৩ হাজার গরু ও ২ হাজার ছাগল। কিন্তু এবার ১ হাজার পশু কম দেওয়া হচ্ছে। এতে হাজারো রোহিঙ্গা পরিবারের ঈদ আনন্দে কমতি তৈরি হবে। কারণ, ঈদের দিন রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে গরুর মাংসের সঙ্গে চালের রুটি খেতে দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রেওয়াজ আছে।

বেসরকারি সংস্থার দেওয়া আড়াই হাজার কোরবানির পশুর মাংস রোহিঙ্গা পরিবারে বণ্টনকাজের সমন্বয় করছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়। কাল সকালে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ শেষে বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে পশুগুলো কোরবানি দেওয়া হবে। এরপর ক্যাম্প ইনচার্জের তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিটির লোকজন রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে মাংস পৌঁছে দেবেন। ঈদের দিন বৃষ্টি হলে পশু জবাইয়ের বিকল্প ব্যবস্থা, বর্জ্য অপসারণ ও কোরবানির পশুর চামড়া উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এতিমখানায় বিনা মূল্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, গত বছরের মতো এবার উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে কোরবানির পশু সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরে ২ হাজার ৫০০টি গরু, ৬০০টি ছাগল ও ২ হাজার কেজি মাংস বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু টেকনাফের ১০টি আশ্রয়শিবিরে এবার কোরবানির পশু দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে রোহিঙ্গাদের অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে বেশ কিছু গরু কিনে কোরবানি দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

আরআরআরসি কার্যালয় ও একাধিক বেসরকারি সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধপরবর্তী পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ যেমন কমেছে, তেমনি তহবিলসংকটে মানবিক সহায়তার কাজও সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এ জন্য এবার বহু সংস্থা রোহিঙ্গাদের কোরবানির পশু কিনে দিতে পারেনি। গত বছর নানা সংকটের মধ্যেও প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবার প্রায় দুই কেজি করে মাংস পেয়েছিল। এবার এক কেজি থেকে সর্বোচ্চ দেড় কেজি করে মাংস পেতে পারে।

টেকনাফের শালবাগান আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জামাল হোসেন বলেন, গতবার তাঁদের আশ্রয়শিবিরে কোরবানির জন্য ৭০টি গরু দিয়েছিল বিভিন্ন সংস্থা। এবার একটিও দেওয়া হয়নি। এতে আশ্রয়শিবিরের ২২ হাজার রোহিঙ্গা হতাশ। তবে কিছু রোহিঙ্গা, যাঁদের আত্মীয়স্বজন মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন, তাঁরা ব্যক্তি উদ্যোগে উখিয়া ও টেকনাফের হাট থেকে কিছু গরু-ছাগল কিনেছেন।

টেকনাফের জাদিমুরা আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নবী হোসেন বলেন, মালয়েশিয়ায় তাঁর এক ভাই থাকেন। তাঁর পাঠানো টাকায় তিনি গতকাল বিকেলে একটি ছাগল কিনেছেন। একই আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা কেফায়েত উল্লাহ বলেন, তাঁরা পাঁচজন রোহিঙ্গা মিলে দেড় লাখ টাকায় একটি গরু কিনেছেন। আজ বিকেলে গরুটি আশ্রয়শিবিরে নেওয়া হবে।

সরেজমিনে টেকনাফের গোদারবিল, হ্নীলা, জাদিমুরা, হোয়াইক্যং এবং উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, পালংখালী ও মরিচ্যা বাজার থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য গরু–ছাগল কিনতে দেখা গেছে।

রোহিঙ্গাদের জন্য স্থানীয় বাজার থেকে কোরবানির গরু–ছাগল কেনা হচ্ছে জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, গত বছরও রোহিঙ্গাদের জন্য ৭০০টির বেশি গরু কেনা হয়েছিল। দুই বছর ধরে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বন্ধ থাকায় এবার কোরবানির পশুর দামও অনেক চড়া। এ জন্য কয়েকজন ভাগাভাগি করে এবার কোরবানি দিচ্ছেন।

আরআরআরসি কার্যালয়ের তথ্যমতে, উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১০) কোরবানির জন্য ১০০টি গরু বরাদ্দ হয়েছে। কাল পশুগুলো জবাই করে আশ্রয়শিবিরের ৬ হাজার ৩৭৭ রোহিঙ্গা পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। একইভাবে বালুখালী (ক্যাম্প-১১) আশ্রয়শিবিরে ৬ হাজার ২৩০ পরিবারের জন্য ৬ হাজার কেজি মাংস, কুতুপালং (ক্যাম্প-১-ই) আশ্রয়শিবিরে ৮ হাজার ৭৩৭ জন রোহিঙ্গার জন্য ১০০টি গরু ও ৩৯টি ছাগল, কুতুপালং (ক্যাম্প-১ ডব্লিউ) আশ্রয়শিবিরে ৮ হাজার ২৭১ রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য ১৯০টি গরু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পশুগুলো আশ্রয়শিবিরে পৌঁছে গেছে।

কুতুপালং ও বালুখালী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা কামাল উদ্দিন ও দলিলুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য কেনা এবারের গরুগুলো ছোট। ওজন দেড় থেকে আড়াই মণ হবে। এতে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবার এক কেজির মতো মাংস পেতে পারে। চাহিদা পূরণ করতে কয়েক শ রোহিঙ্গা ব্যক্তি উদ্যোগে উখিয়ার বিভিন্ন বাজার থেকে পশু কেনার চেষ্টা করছেন।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে থাকা ৭ হাজার ৪৫৩ রোহিঙ্গা পরিবারের জন্যও ২২০টি গরু সরবরাহ করা হয়েছে। ইসলামিক রিলিফ নামে একটি বিদেশি সংস্থা পশুগুলো কিনে আশ্রয়শিবিরে সরবরাহ করেছে।