নাইজারে অভ্যুত্থান: সামরিক অভিযান না কূটনীতিতে সমাধান! - Southeast Asia Journal

নাইজারে অভ্যুত্থান: সামরিক অভিযান না কূটনীতিতে সমাধান!

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পশ্চিম আফ্রিকার নেতাদের বেঁধে দেয়া সাতদিনের আলটিমেটাম শেষ হয়ে আসছে। কিন্তু সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজোমকে তার পদে পুনর্বহাল করেনি সামরিক জান্তা। এ অবস্থায় আফ্রিকার ১৫ দেশের আঞ্চলিক সংগঠন ইকোয়াস কি নাইজারে যৌথভাবে সামরিক অভিযান চালাবে! এ প্রশ্ন এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

গত রোববার সন্ধ্যায় সামরিক জান্তাকে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ফেরাতে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেয় ইকোয়াস। যদি তা না করে তাহলে নাইজারে সামরিক শক্তি প্রয়োগের হুমকি দেয়া হয়। এরই মধ্যে নাইজারে অভ্যুত্থানের নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। পার্শ্ববর্তী নাইজেরিয়া থেকে দেশটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সীমান্ত। ফলে কোনো পণ্য নাইজারে প্রবেশ করতে পারছে না। ভূমি দ্বারা বেষ্টিত দেশটি কোনো বন্দর ব্যবহারের সুযোগও হারিয়েছে।

এমন অবস্থায় সেখানে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় আলটিমেটাম শেষ হয়ে যাওয়ার পর কি করতে পারেন ইকোয়াস নেতারা!
তারা আলটিমেটামের মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে পারেন। যদি তা করেন, তাহলে বিপদ দেখে তারা পিছিয়ে এসেছেন বলে মনে করা হবে। কিন্তু ১৫ রাষ্ট্রের সংগঠন ইকোয়াসের নেতারা এমন সমালোচনার জবাবে মুখরক্ষা করতে পারেন। তারা বলতে পারে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় অগ্রগতি হয়েছে। এ জন্য সামরিক জান্তাকে আরও সময় দেয়া দরকার। এখন সমস্যা হলো এখনও ইকোয়াসের মধ্যস্থতা কোনো ফল বয়ে আনেনি। বৃহস্পতিবার নাইজারে পাঠানো হয়েছিল ইকোয়াসের একটি প্রতিনিধি দলকে। কিন্তু কয়েক ঘন্টার মধ্যে তারা দৃশ্যত খালি হাতে ফিরে গিয়েছেন। পক্ষান্তরে পশ্চিমা দেশগুলো এবং ইকোয়াসের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় কথা বলেছেন অভ্যুত্থানের নেতা। নাইজেরিয়া, টোগো, যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ফ্রান্সের সঙ্গে সামরিক চুক্তি বাতিলেরও ঘোষণা দিয়েছেন। এই চুক্তির অধীনে নাইজারে অবস্থান করছিল ফ্রান্সের প্রায় ১৫০০ সেনা সদস্য। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজোম এখনও সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কড়া ভাষায় একটি আর্টিক্যাল লিখেছেন। এতে তিনি নিজেকে একজন জিম্মি হিসেবে অভিহিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার দেশে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া পুনঃস্থাপনে সহায়তা করতে। শুক্রবার নাইজারে সরকারকে ত্রাণ সহায়তা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তারা মানবিক ও খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

পরিস্থিতিকে শান্ত করতে এবং একটি মধ্যবর্তী ক্ষেত্র খুঁজে পেতে সামরিক জান্তা এবং ইকোয়াস গণতান্ত্রিক শাসন ফিরিয়ে দিতে একটি টাইমটেবিলে রাজি হতে পারে। এর অধীনে মুক্তি পেতে পারেন প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজোম। মুক্তি পেতে পারেন অন্য রাজনৈতিক বন্দিরা। সমাধান খুঁজে পেতে আলোচনার জন্য তাদের আরও সময় প্রয়োজন হতে পারে। আফ্রিকা এবং অন্য যেকোনো স্থানে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে যারা, এটা তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি। নাইজারের প্রতিবেশি সাহেল অঞ্চলে, মালি ও বুরকিনা ফাসোকে এরই মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরা অনুমোদন করেছে ইকোয়াস। এসব দেশে সম্প্রতি ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী। কিন্তু মধ্যস্থতা বা সমঝোতা প্রক্রিয়ায় সমস্যা আছে। নির্বাচনের সময়সীমা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষেই ক্ষমতা হস্তান্তর হবে কিনা, এ নিয়ে এখনও কোনো নিশ্চয়তা মেলেনি। সুদানে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসামরিক-সামরিক সরকার। সেখানে অভ্যুত্থানের পর এই সরকার গণতান্ত্রিক পথ বের করে আনবে বলে বলা হয়েছে। কিন্তু দেশটিতে তিক্ত বিরোধে লিপ্ত সামরিক বাহিনীর দুটি পক্ষের মধ্যে লড়াই তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে কি ঘটবে সেখানে তা নিশ্চিত নয়।

নাইজারের প্রেসিডেন্ট বাজোমকে যদি পুনর্বহাল করা না হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই দেশটিতে সামরিক অভিযান চালানো হবে- এমনটা নিশ্চিত করে বলেননি পশ্চিম আফ্রিকার নেতারা। তবে তারা বলেছেন, এমন সম্ভাবনা আছে। সামরিক শক্তি প্রয়োগকে শেষ অবলম্বন হিসেবে বর্ণনা করেছেন নাইজেরিয়ার কর্মকর্তারা। ইকোয়াসের প্রধান বর্তমানে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু। তিনি বলেছেন, নাইজারে সামরিক অভিযান হতে পারে শেষ অস্ত্র। অতীতে এই সংগঠন সাংবিধানিক ধারা পুনর্বহালে সামরিক শক্তি ব্যবহার করেছে। ২০১৭ সালে গাম্বিয়াতে তারা এই শক্তি প্রয়োগ করেছে। তখন নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলেন ইয়াহিয়া জামেহ। কিন্তু এবার নাইজারের ক্ষেত্রে কি ঘটবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। হয়তো হতে পারে আরও জটিল কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দেশটি।

পশ্চিম আফ্রিকার ভৌগলিকভাবে সবচেয়ে বড় দেশ নাইজার। অন্যদিকে গাম্বিয়া হলো একটি ছোট্ট দেশ। তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে সেনেগাল এবং আটলান্টিক মহাসাগর। ফলে তাদের সেনা পাঠানো হবে জটিল বিষয়। প্রতিবেশী নাইজেরিয়া এখন নাইজারের প্রেসিডেন্ট বাজোমকে পুনর্বহাল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশের ভিতরে তারা নিজেরাই নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ফলে নাইজারে সেনাবাহিনীর বড় একটি অংশকে পাঠানো হবে তাদের জন্যই বিপজ্জনক। অন্যদিকে নাইজারে সেনা পাঠানোকে দেখা হবে একটি যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবে। এমনটা মনে করছে মালি এবং বুরকিনা ফাসো। সামরিক অভিযান চালালে তা প্রতিহতের চেষ্টা করবে নাইজারের সামরিক নেতা।