মণিপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও তোলপাড় - Southeast Asia Journal

মণিপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও তোলপাড়

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

শুক্রবার রাত থেকে বিষ্ণুপুরের একাধিক জায়গায় মর্টার ও গ্রেনেড হামলা হয়েছে। গুলি করে ও কুপিয়ে খুন করা হয়েছে অন্তত ৬ জনকে। শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম ইম্ফলের লাঙ্গোল গেমস গ্রামে প্রায় ১৫টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।

মণিপুরে দুই সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক দিনগুলোর মধ্যে একটি ছিল শনিবার।

এই পরিস্থিতিতে মণিপুরের বিজেপি সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছে ‘কুকি পিপলস অ্যালায়েন্স (কেপিএ)।’ ‘কেপিএ’ মণিপুরের একটি ভারতীয় রাজ্য স্তরের রাজনৈতিক দল। সংগঠনটির প্রধান টেংমাং হওকিপ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, রাজ্যের যে পরিস্থিতি তাতে আর বীরেন সিং সরকারের প্রতি সমর্থন দেওয়া সম্ভব নয়।

এমন ঘোষণায় এবার মণিপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও তোলপাড় শুরু হলো। এক বিজ্ঞপ্তিতে কুকি পিপলস অ্যালায়েন্স বলছে, ‘বর্তমান উত্তেজনাকে সতর্কভাবে বিবেচনা করার পর, মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন মণিপুরের বর্তমান সরকারের প্রতি অব্যাহত সমর্থন আর ফলপ্রসূ নয়। তাই মণিপুর সরকারের প্রতি কেপিএ-এর সমর্থন প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং এটি বাতিল বলে বিবেচিত হতে পারে।’

বীরেন সিং সরকারের ওপর সমর্থন তুলে নেওয়া, নিঃসন্দেহে মণিপুরের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থায় একটি বড় ঘটনা।

ভারতের বর্তমান শাসক জোট এনডিএর জন্যও বেশ বড় ধাক্কা। কারণ, মণিপুর ইস্যুতে দিল্লির সংসদে ক্রমাগত বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ছে তারা।
এদিকে, নয়াদিল্লিতে মণিপুরসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের আটটি রাজ্যের সাংসদদের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসবেন মোদি। মণিপুর নিয়ে মোদির বিবৃতির দাবিতে অধিবেশনের শুরু থেকেই উত্তপ্ত লোকসভা ও রাজ্যসভা। বিরোধী দল প্রশ্ন তুলেছে, বিবৃতি না দিয়েও নিজের দলের সাংসদদের সঙ্গে কীভাবে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন? এই পরিস্থিতিতেই আজ সোমবার নয়াদিল্লিতে হতে যাচ্ছে বৈঠকটি।

জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট বা এনডিএ ভারতের মধ্য-ডান এবং ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর একটি জোট। এই জোটের নেতৃত্বে আছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এনডিএ সাংসদদের সঙ্গে ১২ দিন ধরে ধারাবাহিক বৈঠক করে ২০২৪-এর দিক নির্দেশনা স্পষ্ট করার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, আর সেই লক্ষ্যেই এই বৈঠক হতে যাচ্ছে।

এদিকে পুলিশ সূত্র জানা যায়, মণিপুরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার ইম্ফলের পূর্ব ইম্ফলে ও পশ্চিম ইম্ফলের জেলাগুলোতে কোনো কারফিউ শিথিল করা হবে না। শনিবার বিষ্ণুপুর জেলার কোয়াকতা এলাকায় একটি গ্রামে ভোরের আগে হামলায় বাবা-ছেলেসহ তিন নিরস্ত্র গ্রামবাসী নিহত হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মণিপুরে আরো ৯০০ আধাসামরিক জওয়ান পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই মণিপুরে ৪০ হাজারেরও বেশি সেনা ও আধা-সামরিক সেনা মোতায়েন রয়েছে। মণিপুর পুলিশের দাবি, অস্ত্রাগার থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৩২২টি অত্যাধুনিক অস্ত্র লুট হয়েছে। তার মধ্যে এখন মাত্র ২ হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা গিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৩ মে মণিপুরে ‘ট্রাইবাল সলিডারিটি মার্চ’ থেকে শুরু হয়েছে মণিপুরে সংঘাত। মূলত, রিজার্ভ বনের কাছে কুকি গ্রামগুলো সরিয়ে নেওয়া ঘিরেই এই সংঘাত। এ নিয়ে কুকি এবং মেইতিই সম্প্রদায়ের মধ্যে শুরু হয় সহিংসতা। জ্বলতে থাকে এন বীরেন সিংয়ের শাসিত মণিপুর। তিন মাস কেটে গেলেও, শান্তি ফেরেনি মণিপুরে।

মণিপুরে এখন পর্যন্ত ১৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংখ্যাটা আরো বেশি হতে পারে। গত ৪ মে দুই নারীকে নগ্ন করে ঘোরানোর ঘটনায় ৫ পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় ৩০০ জনকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ্যের দুই জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ কীভাবে থামবে তার সমাধান নেই এন বীরেন সিং সরকারের কাছে।