আদিবাসী স্বীকৃতির অন্তরালে দেশ বিরোধী চক্রান্তের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন
নিউজ ডেস্ক
আদিবাসী স্বীকৃতির দাবির অন্তরালে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।
সংগঠনটির খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আয়োজনে আজ মঙ্গলবার (৮ আগষ্ট) সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের অঅয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের সংবিধান পরিপন্থী হিসেবে আদিবাসী শব্দের ব্যবহার ও অসাংবিধানিক আদিবাসী দিবস পালনের সংবিধান বিরোধী আদিবাসী শব্দের বহুল প্রয়োগ ও স্বার্থান্বেষী একটি মহল কর্তৃক বাংলাদেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জোরপূর্বক আদিবাসী দাবি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির চেয়ারম্যান কাজী মো: মুজিবর রহমান, মহাসচিব আলমগীর কবির, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আ. মজিদ, এস এম মাসুম রানাসহ জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে জানান, প্রতিবছর ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদিবাসীর মত এদেশের ক্ষুদ্র- নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি জাতিসত্বা নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য ডামাডোল পিটিয়ে নিজেদের সরব উপস্থিতি জানান দেয় আর তথাকথিত গণমাধ্যমগুলো তা সরগরম করে প্রচার করে। আদিবাসী দিবসকে কেন্দ্র করে সুশীল, বুদ্ধিজীবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পত্রপত্রিকার সম্পাদকরা টিভির টকশো ও সভা-সেমিনারে সংবিধান বিরোধী আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করে এদেশের উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে এনজিও, দাতাসংস্থা, খ্রিস্টান মিশনারী ও পশ্চিমা দাতাসংস্থার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার পায়তারা করছে।
বক্তারা বলেন, ২০০৭ সালের জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের অনুচ্ছেদগুলো কেবল আদিবাসীদের জন্য প্রযোজ্য। আর এমন লোভনীয় অনুচ্ছেদগুলোর সুবিধা নিতেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো নিজেদের আদিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারী ও বৈদেশিক কিছু এনজিও এবং মিশনারীদের খপ্পরে পড়েই আদিবাসী স্বীকৃতি দাবি করে। ১৯৯৭ সনে পার্বত্য চুক্তি করেছে উপজাতি হিসেবে। সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে উপজাতি কোটায়, দাবি করে নিজেদেরকে আদিবাসী! এমন দাবি হাস্যকর!
নেতৃবন্দ আরো বলেন, যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা আদিবাসী হিসেবে স্বিকৃতি লাভের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে পারে তাহলে বাংলাদেশ এক দশমাংশ হারাবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতা খর্ব হবে, সার্বভৌমত্ব হারাবে বাংলাদেশ। উপজাতি কুচক্রি মহলের স্বপ্নের জুম্মলেন্ড বাস্তবায়ন তরান্বিত হবে।
এসময় আদিবাসী শব্দটি স্পর্শকাতর এবং সংবিধান পরিপন্থী দাবি করে দেশপ্রেমিক জনতা হিসেবে এই শব্দ বন্ধে এবং দিবসটি পালনের উপর সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ কামনা করেন সংগঠনটির নেতারা।
আগামীকাল ৯ আগষ্ট, সংবিধান পরিপন্থী, বিতর্কিত ও স্পর্শকাতর আদিবাসী দিবস পালনের নামে দেশবিরোধী চক্রান্তের প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের ব্যনারে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির উদ্যোগেও মানববন্ধন করা হবে বলেও জানান নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, আদিবাসী শব্দ ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে সরকার তার অবস্থান বারংবার তুলে ধরেছে এবং গত ২০২২ সালের ১৯ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শেখ শামছুর রহমান স্বাক্ষরিত স্মারক নং-১৫.০০.০০০০.০২৪.১৮.১৪.৫৯৬ মূলে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার না করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় এতে। প্রজ্ঞাপনে সংবিধান সম্মত শব্দ ব্যবহারের নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত টকশোতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে প্রচারের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছে।