ভারত-চীন সেনাবাহিনীর ১৯তম বৈঠকেও আলোচনায় হতাশা
নিউজ ডেস্ক
পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর সংঘর্ষ-পূর্ববর্তী স্থিতাবস্থা ফেরানোর চেষ্টা ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর ১৯তম বৈঠকেও সফল হলো না। ডেপসাং ও ডেমচকে এতকাল ধরে ভারতীয় বাহিনী যেসব এলাকায় টহলদারির কাজ চালিয়ে এসেছে, তা বহাল করার দাবি চীন মেনে নেয়নি। ফলে আলোচনায় কোনো অগ্রগতিও হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যায় ওই বৈঠক শেষ হয়। পরে গত ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে দিল্লি ও বেইজিং থেকে একযোগে প্রচারিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এলএসির বকেয়া সমস্যা মেটাতে দুই দেশই সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে খোলামনে গভীরভাবে আলোচনা করেছে। দুই দেশই সামরিক ও কূটনৈতিক পরিসরে আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার দ্রুত সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। লক্ষ্য পূরণ হওয়া পর্যন্ত দুই দেশই সীমান্তে শান্তি ও সংহতি রক্ষা করে চলবে।’
তিন বছর আগে ২০২০ সালের জুনে পূর্ব লাদাখের গলওয়ানে ভারত ও চীনের ফৌজের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটেছিল। তাতে দুই দেশেরই বহু সেনা হতাহত হন। সেই থেকে চীনা ফৌজকে সংঘর্ষ-পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরে যাওয়ার জন্য ভারত চাপ সৃষ্টি করে আসছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত চীন সেই দাবি মানেনি।
দৌলত বেগ ওলডি, কারাকোরাম গিরিপথ ও চারডিং নিংলুং নালাজুড়ে ডেপসাং ও ডেমচক এলাকায় দুই দেশই ২০২০ সালের সংঘর্ষের পর সেনা উপস্থিতি বাড়িয়েছে। দুই দেশই ৫০ হাজার করে ফৌজ মোতায়েন করেছে। ভারী সমরাস্ত্রও মজুত করা হয়েছে। উত্তেজনা না থাকলেও এত বিপুল সেনা উপস্থিতি উভয় পক্ষে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। দুই দেশই স্বীকার করে স্বাভাবিক সম্পর্কের খাতিরে যা অনাকাঙ্ক্ষিত।
ডেপসাং ও ডেমচক অঞ্চলে চীন যেসব এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে, ভারতের দাবি, সংঘর্ষ–পূর্ববর্তী সময়ে সেই সব এলাকায় ভারতীয় সেনারা নিয়মিত টহল দিত। চীন সেই অধিকার ফিরিয়ে দিতে এখনো রাজি নয়। ওই বিস্তীর্ণ অঞ্চল সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, চীনা দখল অব্যাহত থাকলে সামরিক দিক দিয়ে তাদের লাভ। ভারতের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দৌলত বেগ ওলডি অঞ্চলে নজরদারি করা চীনের পক্ষে সুবিধাজনক হবে।
ভারতের অভিযোগ, দখল করা এলাকায় চীন সামরিক অবকাঠামো নির্মাণ করে চলেছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা সূত্রে জানা গিয়েছে, চীন চায় বর্তমান স্থিতাবস্থা ভারত মেনে নিক। ভারতের দাবি, চীন তিন বছর আগের অবস্থানে ফিরে যাক। সেই সময় দুই দেশ যেসব এলাকায় টহলদারি করত, সেই অধিকার ফিরে আসুক। একমাত্র তা হলেই উত্তেজনা প্রশমিত হবে। চীন এখন চাইছে, শান্তি চিরস্থায়ী করতে প্রধানত ভারতের জমিতে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ সৃষ্টি করতে। ভারত তাতে সম্মত নয়। কারণ, সে ক্ষেত্রে সামরিক দিক থেকে ডেপসাং–ডেমচক এলাকায় চীনের আধিপত্য মেনে নিতে হয়।
চীনকে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বারবার বলেছে, ২০২০ সালে এপ্রিল-মে মাসে লাল ফৌজ একতরফাভাবে এলএসি লঙ্ঘন করেছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করার প্রধান শর্ত—২০২০ সালের পূর্ববর্তী অবস্থানে চীনকে ফিরে যেতে হবে। ভারতের অভিযোগ, ডেপসাংয়ে এলএসির ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনী টহলদারি করতে পারছে না চীনা ফৌজের প্রতিরোধের কারণে।
গলওয়ান সংঘর্ষের পর প্যাংগং লেক, গোগরা-হট স্প্রিং, চুমুর ও গলওয়ান উপত্যকায় সেনা সরানোর পর ৩ থেকে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ‘বাফার জোন’ বা ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ তৈরি করা হয়েছে। ঠিক হয়েছে কোনো দেশই ওই এলাকায় টহলদারি করবে না। উত্তরে কারাকারোম গিরিপথ থেকে শুরু করে পূর্ব লাদাখের চুমুর অঞ্চল পর্যন্ত মোট ৬৫টি এলাকার মধ্যে ২৬টিতে ভারতীয় জওয়ানেরা এখন টহলদারি করতে পারেন না।
ভারতের কূটনৈতিক নেতৃত্ব এ পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক মানতে রাজি নয়। সে কথাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বারবার চীনা নেতৃত্বকে বলে আসছেন। যদিও চীন নিরুত্তর। চুসুল-মলডো সীমান্তে দুই দেশের সেনা পর্যায়ের ১৯তম বৈঠক তার আরও একটা প্রমাণ।