ভারতের মণিপুরে হিংসার সুযোগে মাদক-অস্ত্র পাচারের হিড়িক - Southeast Asia Journal

ভারতের মণিপুরে হিংসার সুযোগে মাদক-অস্ত্র পাচারের হিড়িক

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

মণিপুরের গোলমালের প্রভাব পড়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই। কেন্দ্র, রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের নজর এখন সেই গোলমালের দিকেই। আর সেই সুযোগে মাদক ও অস্ত্র পাচারের কারবার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে উত্তর-পূর্বের ছয় রাজ্যেই। ইন্দো-মায়ানমার সীমান্ত মাদক পাচারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত গত দেড় মাসে উত্তর-পূর্বের ছয় রাজ্য থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৪৯৬ কোটি টাকার মাদক। শুধুমাত্র মণিপুর থেকেই উদ্ধার হয়েছে ১২৬০টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, প্রায় ১৫ হাজার বোমা ও ১৯টি হ্যান্ড গ্রেনেড এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক। এই বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে বিভিন্ন রাজ্য পুলিশ ও অসম রাইফেলস। এর বাইরেও বিএসএফের হাতে প্রচুর মাদক ও অস্ত্র ধরা পড়েছে।

অসমের মধ্য দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই উত্তরবঙ্গ হয়ে গোটা দেশে তো বটেই, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানেও যাচ্ছে এই মাদক। সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব ভারতে অতিসক্রিয় হয়েছে এগারোটি আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের চার হাজারেরও বেশি ড্রাগ পেডলার। প্রতিদিন তিনশোটিরও বেশি ছোট-বড় ট্রাক ব্যবহার করা হচ্ছে পাচারের কারবারে। ইয়াবা, ওয়ার্ল্ড ইজ ইওরস-এর পাশাপাশি রমরমা হয়েছে হেরোইন, ব্রাউন সুগার, গাঁজা, সুপারি, বিদেশি সিগারেটের কারবারের। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, নতুন করে সোনা পাচার শুরু হয়েছে, যা নিয়ে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির চাপ বাড়ছে।

মাদকের কারবার রমরমা হওয়ায় দেশবিরোধী শক্তিগুলির হাতে অফুরন্ত অর্থ পৌঁছে যাচ্ছে। সেটা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করছেন সেনাবাহিনীর শীর্ষকর্তারা। অসম রাইফেলসের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘বহু এলাকাতেই স্থানীয় স্তরের রাজনৈতিক বাধায় অভিযান চালানো যাচ্ছে না। মায়ানমার সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি নীতিতে কিছু পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।’ অসম পুলিশের ডিজি জিপি সিং-এর কথা, ‘মাদক ও অস্ত্র পাচার রুখতে আমরা সর্বোচ্চ স্তরে কাজ করছি। একাধিক পরিকল্পনা অনুসারে কাজ হচ্ছে। সেকারণেই বিপুল পরিমাণ মাদক ধরা পড়ছে। তবে এটা ঠিক, ইন্দো-মায়ানমার সীমান্তে নজরদারি আরও শক্তপোক্ত হওয়া দরকার। যা পরিস্থিতি তাতে মাদক পাচার রোধে কড়া পদক্ষেপ না করলে দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’

অসম রাইফেলস সূত্রের খবর, বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতে মায়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তে পঞ্চাশটিরও বেশি রুটে মাদক পাচার চলছে। একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠী সরাসরি পাচারের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। এই মুহূর্তে মাদক ও অস্ত্র পাচারের সবথেকে বড় ঘাঁটি রয়েছে মিজোরামের চম্ফাইতে। সেখান থেকে সরাসরি মায়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অরুণাচলপ্রদেশ, ত্রিপুরাতেও বেশ কিছু ঘাঁটি করেছে পাচারকারীরা।

একাধিক জঙ্গি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ওয়েস্টার্ন সাউথ ইস্ট এশিয়া পাঁচটিরও বেশি পাচার রুট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বলেই খবর। তাদের হয়ে কাজ করছে দুই হাজারেরও বেশি ড্রাগ পেডলার। যাদের মধ্যে উত্তরবঙ্গ ও নিম্ন অসমের পাঁচশোর বেশি পেডলার আছে। মায়ানমারের টিড্ডিম ও মান্দালয় হয়ে চম্ফাই এবং সাগাইং ডিভিশনের সঙ্গে মণিপুরের ২৫টি পৃথক পাচার রুটের সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। বাংলাদেশের কক্সবাজার, পটুয়াখালি ও কুড়িগ্রামে ৭০টিরও বেশি ইয়াবা সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়েছে। মায়ানমার থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন পাচার রুট হয়ে ইয়াবা এবং ওয়ার্ল্ড ইজ ইওরস পৌঁছাচ্ছে বাংলাদেশে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মায়ানমার থেকে সীমান্তবর্তী ভারতীয় এলাকার মধ্য দিয়ে মাদক যাচ্ছে বাংলাদেশে। তারপর বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন পাচার রুট ধরে সেগুলি ফের উত্তরবঙ্গ সহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকছে।