কাপ্তাইয়ে মাছ আহরণ শুরু হলেও আসেনি কাঙ্খিত রাজস্ব, নেপথ্যে ইউপিডিএফ-জেএসএসর চাঁদা দাবি

কাপ্তাইয়ে মাছ আহরণ শুরু হলেও আসেনি কাঙ্খিত রাজস্ব, নেপথ্যে ইউপিডিএফ-জেএসএসর চাঁদা দাবি

কাপ্তাইয়ে মাছ আহরণ শুরু হলেও আসেনি কাঙ্খিত রাজস্ব, নেপথ্যে ইউপিডিএফ-জেএসএসর চাঁদা দাবি
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

টানা চার মাস সাতদিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হয়েছে মাছ আহরণ। শনিবার (৩১ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে নামেন জেলেরা।

৭২৫ বর্গকিলোমিটারের হ্রদের বুকজুড়ে বসার কথা জাল, জেলে ও নৌকার মেলা। ভোর হতেই গুটি কয়েক জেলেদের আহরণকৃত মাছ বোটে করে নিয়ে আসা হয় জেলার সর্ববৃহৎ অবতরণ কেন্দ্র ফিসারি ঘাটে। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের হাঁকডাকে যতটা মুখর হয়ে উঠার কথা পল্টুন, এবার ততটা হয়ে উঠেনি।

সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি- জেএসএস ও প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের অপর আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফ এর চাঁদা দাবি করা এবং না পেলে জেলেদের অপহরণের হুমকির কারণে এবার কাপ্তাই হ্রদে নামেন নি বেশীর ভাগ জেলে। বাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে গুটি কয়েক জেলে সতর্ক অবস্থায় মাঝ আহরণে নামলেও পাওয়া যায়নি আশানুরূপ মাছ, আর কাঙ্খিত রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, জেলেদের মাঝে আশঙ্কা থাকায় প্রথম দিনে মাছ কম এসেছে।

কাপ্তাই হ্রদ বৃহত্তর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শুক্কুর জানিয়েছেন, আঞ্চলিক দলের হুমকির কারণে অনেক জেলেই মাছ ধরতে নামেনি।

জানা গেছে, সকালে কাপ্তাই উপজেলা মৎস্য করপোরেশন ঘাটে কোনো মাছের নৌকা আসেনি। চাঁদা আদায় করতে না পেরে জেএসএস সদস্যরা মাছ ধরতে নিষেধ করেছেন বলে অভিযোগ মৎস্য ব্যবসায়ীদের।

কাপ্তাইয়ে মাছ আহরণ শুরু হলেও আসেনি কাঙ্খিত রাজস্ব, নেপথ্যে ইউপিডিএফ-জেএসএসর চাঁদা দাবি

নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি বছর সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিয়ে হ্রদ থেকে মাছ আহরণ করতে হয়। এ বছর অতিরিক্ত চাঁদা দাবি করায় তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে জেলেদের মাছ ধরতে দিচ্ছে না অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা।

সূত্র বলছে, শনিবার (৩১ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে ব্যবসায়ী ও জেলে রা বড় বড় নৌকা (বোট) আর বরফসহ রাতেই বিভিন্ন জেটিতে অবস্থান নেন। মাছ ধরতে নামার ঠিক ঘন্টা খানেক আগে রাত আনুমানিক ১১টার দিকে রাঙামাটি মাছ ব্যবসায়ী সমিতি ও কাপ্তাই হ্রদ বহুমূখী সমবায় সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে ফোন করে পৃথকভাবে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা দাবি করে জেএসএস এর চাঁদা কালেক্টর রুবেল চাকমা।

অপরদিকে, ইউপিডিএফের চাঁদা কালেক্টর বিভাস চাকমাও দুটি সমিতির কাছে ফোন করে প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা না দিয়ে মাছ আহরণ করতে গেলে জেলেদের অপহরণ এবং বড় ধরনের ক্ষতি করার হুমকিও দেন এসব চাঁদাবাজরা।

বিষয়টি জানাজানি হলে মাছ ব্যবসায়ী ও জেলেদের মধ্যে তৈরী হয় আতঙ্ক। ভয়ে মধ্যরাতে বেশীর ভাগ বোট মালিক ও জেলেই মাছ ধরতে না নেমে সেখান থেকে ফিরে যান। রাঙামাটির বাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ১০-১২টি বোট হ্রদে নেমে অনেকটা আতঙ্কের মধ্যের মাছ শিকার করেন। তবে তারা কাঙ্খিত মাছ পান নি।

অপর একটি সূত্র বলছে, ইউপিডিএফ ও জেএসএস সন্ত্রাসীরা রাঙামাটির কাপ্তাই ঘাট, লংগদু ঘাট ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ি ঘাটের জেলেদের নিকটও পৃথক ভাবে চাঁদা দাবি করেছে।

আতঙ্কিত জেলে, বোট মালিক ও মাছ ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে মাছ ধরার পরিবেশ চেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সহায়তাও কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, প্রতিবছরই রাঙামাটিজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের মৌসুমে এসব আঞ্চলিক দলকে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয় মাঝ ব্যবসায়ী ও জেলেদের। যার কারণে আহরিত মাছের মূল্য বেড়ে যায় কয়েকগুন। আর চাঁদা না দিয়ে বহু জেলে শুধুমাত্র জনবহুল এলাকাগুলোতে মাছ শিকারের কারণে প্রত্যাশিত মাছও পান না।

প্রসঙ্গত, কার্প জাতীয় মাছের বংশবিস্তারের লক্ষ্যে প্রতিবছর তিন মাসের জন্য পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ থাকে। তবে এবছর কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানির অভাবে মাছের বংশবিস্তার সুষ্ঠুভাবে না হওয়ায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ দুইদফা বাড়ানো হয়। এতে চার মাস সাতদিন পর হ্রদে মাছ আহরণে নামে জেলেরা।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *