গেরুয়া থেকে সাদা পোষাক: তন্ত্র-মন্ত্রের ফুঁ দিয়েই কোটিপতি উঃসিরি বৈদ্য!

গেরুয়া থেকে সাদা পোষাক: তন্ত্র-মন্ত্রের ফুঁ দিয়েই কোটিপতি উঃসিরি বৈদ্য!

গেরুয়া থেকে সাদা পোষাক: তন্ত্র-মন্ত্রের ফুঁ দিয়েই কোটিপতি উঃসিরি বৈদ্য!
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

তন্ত্র-মন্ত্রের ফুঁ দিয়ে কোটিপতি বনে গেছেন মিয়ানমার থেকে কাপ্তাইয়ে আসা উঃসিরি বৈদ্য। বানটোনা করে মানুষের সংসারে কলহ দূর, যেকোনো কঠিন রোগের মুক্তি, প্রেমিক প্রেমিকাকে আপোষ করা, গোপন রোগের চিকিৎসা দেয়াসহ সকল সমস্যার সমাধানের নামে প্রতারণা করে সরলমনা নারী-পুরুষদের কাছ থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

যুবক উঃসিরি বৈদ্য কাপ্তাই উপজেলার ১ নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড মিতিংগ্যাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে কোন ডিগ্রি না থাকলেও বানটোনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের প্রলোভন দেখিয়ে সহজ সরল মানুষদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়াসহ সর্বোচ্চ লুটে নিচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, ঝাঁড়-ফুঁক দিয়ে জনগণের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকা দিয়ে কাপ্তাই রেশম বাগান সংলগ্ন রাঙ্গুনিয়া ইকোপার্ক এর পাস ঘেঁষে বন বিভাগের কোদালা বিটের এক অংশে গড়েছেন দালান কোঠা ঘরবাড়ি।

সরেজমিনে বৈদ্য খানায় ঢুকতেই চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন গেট (ফটক)। ভিতরে প্রবেশ করতেই দৃষ্টি যায় পাকা দালানে। রহস্যময় এই বাড়িতে সব সময় সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে থাকে। পর্যবেক্ষণ করে অবস্থা বুঝে তন্ত্র মন্ত্রের বৈদ্য খানার দরজা খোলা হয়। আবার ভেতর থেকে অনুমতি না মেললে কেউ বৈদ্যের কক্ষে ঢুকতে পারে না।

কৌশলে ওই ঘরের ভিতরে ঢুকতে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় কয়েকজন লোক বসে আছেন। ভিতরে সিসি ক্যামেরাযুক্ত কাঠের বড় দরজা বন্ধ। পাকা ওয়াল ঘেরা রহস্যময় এই বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে উঃসিরি বৈদ্য চালাচ্ছেন এই অপচিকিৎসা। বিস্তারিত জানতে জিজ্ঞেস করতেই উবামং মামরা নামে এক লোক বলে উঠেন উঃসিরি বৈদ্য বিশ্রাম নিচ্ছেন। একটু পরে আসেন। আসনে থেকে উঠে গেছেন। লোকজনকেও চলে যেতে বলেন।

স্থানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগী রুগীরা জানান, বৈদ্যকে আগে দেখেছি গেরুয়া রংয়ের পোশাক পড়ে ভিক্ষু পরিচয় দিতেন। এখন দেখি সাদা পোশাক গায়ে দেন। তখনই তার আধ্যাত্মিকতায় সন্দেহ হয়।

উঃসিরি বৈদ্যের উত্তরসুরি বা দালাল সিন্ডিকেট মানুষের কাছে প্রচার করতেন, বৈদ্য যখন আসনে বসে তখন তিনি আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বলে স্বামী- স্ত্রীর অমিল, মানসিক রোগ, নিঃসন্তান দম্পতির সন্তান পেতে সহায়তা, ক্যান্সার, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ ভুয়া জিন সাধন করে মূলত তিনি এসব করে যাচ্ছেন। তবে তার কাছে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছেন এরকম নজির না থাকলেও মূলত বিশ্বাসের জোরে কিংবা কিছু দালালের মারফতে প্রচারণায় তার এই ভুয়া চিকিৎসার প্রসার হচ্ছে এবং তারা এটি অব্যাহতভাবে করে চলেছেন। দালালদের মাধ্যমে রোগী ম্যানেজ করেই মূলত তিনি এসব অপ চিকিৎসা করে যাচ্ছেন।

এই বিষয়ে রেশম বাগান এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা অংশে খই মামরা, রাঙ্গুনিয়া ধামাইর হাট থেকে আসা মো. ইলিয়াছ, রাজিয়া সুলতানা, কাপ্তাই বড়ইছড়ি ছাত্রনেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন অপু, শেখ আহমদ সেকু ও নুরুল আলম বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর লোকজন উঃসিরি বৈদ্যের কাছে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে এসে প্রতারিত হচ্ছেন নারী-পুরুষ। চিকিৎসার বিষয়ে বৈদ্যের কোনও ডিগ্রি না থাকলেও তিনি প্রতিদিন সরল মনের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

মিয়ানমারের নাগরিক উঃসিরি বৈদ্য ২০১৬ সালে নারী ও শিশু পাচারকালে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন জেল হাজতে ছিলেন। এছাড়াও নানা কু কর্মের কারণে মিতিংগ্যাছড়ি ত্রিরত্ন বুদ্ধ বিহার, বারঘোনিয় জ্ঞানোদয় বৌদ্ধ বিহার ও রেশম বাগান থেরওয়াদা বৌদ্ধবিহার থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়।

তারা আরও বলেন, উঃসিরি বৈদ্যের কবিরাজ খানা মাঝেমধ্যে ধর্ম প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এ ব্যাপারে প্রতিকারের প্রত্যাশায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায়, নুরুল আলম নামে এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে উঃসিরি বৈদ্য বলেন, আমার দেয়া চিকিৎসায় যাদের কোন উপকার হয়নি তাদের টাকা ফেরত দিতে আমি ইচ্ছুক। পাশাপাশি আমি আগে রঙিন কাপড় পড়তাম। কিন্তু বর্তমানে আমার পারিবারিক নানা সমস্যার কারণে আমি সাদা কাপড় পরিধান করছি। তারপরেও আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছে কতিপয় ব্যক্তিরা।

বৈদ্যের ব্যাপারে ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম জানান, উঃসিরি বৈদ্যের বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় কাপ্তাইয়ের নুরুল আলম নামে এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখার জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তদন্তে প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান, সময় সংবাদকে নিশ্চিত করে বলেন, উঃসিরি বৈদ্য নামে এক ব্যক্তির অপচিকিৎসার কবলে পড়ে লোকজন প্রতারিত হওয়া ও ভূমি দখলের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।