এইডস’র ঝুকি বাড়ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, নয় বছরে আক্রাত ১২৬৩

এইডস’র ঝুকি বাড়ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, নয় বছরে আক্রাত ১২৬৩

এইডস’র ঝুকি বাড়ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, নয় বছরে আক্রাত ১২৬৩
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

এইচআইভি (এইডস) ভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। যার বড় কারণ হিসেবে দেখছেন রোহিঙ্গাদের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল ও যৌন মিলন। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে এ রোগ।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বলছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ এর আজকে পর্যন্ত কক্সবাজারে এইচআইভি (এইডস) ভাইরাসে আক্রান্তের দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে শুধু রোহিঙ্গাই আছে ১২৬৩ জন। এছাড়া ১৩৭ জন শিশুও আক্রান্ত হয়েছেন। এই ৯ বছরে মৃত্যু হয়েছে ২২৬ জনের। যাদের মধ্যে ১৪৭ জন রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে গেল দুই বছরে অর্থাৎ ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্তহয়েছে ৯ শতাধিক। যা আগের সাত বছরের চেয়ে কয়েকগুন বেড়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা বেশি। রোহিঙ্গাদের অসচেতনতার কারণে তাদের কাছ থেকে এই রোগ কক্সবাজারের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরার কারণে এই রোগের সংখ্যা কক্সবাজারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়া কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা তরুণীর যাতায়াত। আর এ কারণে রোগটি এখানে ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করছেন। কিন্তু অবারিত অনিরাপদ যৌনাচারকেও দায়ী করেছেন অনেক চিকিৎসক।

এছাড়া, পর্যটন শহর হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অর্থের লোভে যৌনকর্মীদের ব্যাপকহারে কক্সবাজার আগমন ও এইডস বিস্তারের আরেকটি অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। তালিকায় শুধু যুবক-যুবতী নয় আছে শিশুও। কোন না কোনভাবে এই ভাইরাস তাদের শরীরে গেছে। যা ভাবিয়ে তুলেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

এইচআইভি নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে জেলায় রোহিঙ্গা ছাড়াও স্থানীয় ২ হাজারের মতো অস্থায়ী যৌনকর্মী রয়েছে। যাদের বেশিরভাগের এইচআইভি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। ফলে তাদের মধ্যে কতজনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস রয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। তাদের সঙ্গে মেলামেশার কারণে হয়তো অনেকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা যেহেতু কক্সবাজার এলাকা জুড়ে রয়েছে, সেহেতু তাদের সাথে স্থানীয়দের মেলামেশা হচ্ছে। এমনকি যৌন সম্পর্কেও জড়াচ্ছে অনেকে। এছাড়াও কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোন এলাকায় শত শত রোহিঙ্গা নারীদের অবাধ বিচরণ। যদি সচেতনতা অবলম্বন ও যৌনকর্ম থেকে বিরত থাকা যায় তবে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান বলেন, বিশ্ব এখন রোহিঙ্গাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা সবসময় চেষ্টা করছি তাদের সুন্দর স্বাস্থ্য সুরক্ষার। রোহিঙ্গা আসার আগে তেমন এই রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল না। রোহিঙ্গাদের কাছে এইচআইভি রোগের প্রাদুর্ভাব থাকার কারণে ও তাদের অবাধ মেলামেশা ও এক জায়গায় বেশি সংখ্যক জনবল হওয়ার কারণে এইচআইভি ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

এই রোগটি দীর্ঘ ময়াদী হওয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে। যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের আলাদা না করার কারণে এই রোগ আরো ব্যাপকভাবে ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদার বলেন, যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের আলাদা রাখতে হবে। তাদের যদি আলাদা করা না হয় তবে দেশের জন্য এটি বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

তিনি বলেন, এ নিয়ে জাতীয় এইডস এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এইডস/এসটিডি) কাজ করছে। এই প্রোগ্রামে এটিকে আমরা বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি। এই চ্যালেঞ্জে রয়েছে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের চিকিৎসা প্রদান করা এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।