পাহাড়িদের ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফের সিদ্ধান্ত বাতিলের সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

নিউজ ডেস্ক
যেসব ক্ষেত্রে পাহড়ে বসবাসরত ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার’ অধিবাসীদের জন্য ব্যবসা, নির্মাণ ও ক্রয়-বিক্রয়ের উপর কর-মুসক মওকুফ করা আছে, তা প্রত্যাহার করে সমতলের মতো কর-মুসক আরোপ করলে সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। কমিশন মনে করে, এই মওকুফের কারণে দরিদ্র পাহাড়ি-বাঙালি কারও কোনও উপকার হচ্ছে না। একটি মধ্যস্বত্বভোগীর আত্মসাৎ প্রক্রিয়াকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সংস্কার কমিশনের প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্টের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সুপারিশে এসব কথা বলা হয়।
সুপারিশে কমিশন জানায়, কর, মুসক মওকুফ হলেও বে-আইনি চাঁদাবাজি পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি নির্মম বাস্তবতা। এ চাঁদাবাজির সঙ্গে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও নানা গোষ্ঠী এক ধরনের বন্দোবস্ত তৈরি করেছে। এ বন্দোবস্ত সাধারণভাবে দৃশ্যমান হলেও এখানে যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তারা চোখ বন্ধ করে রাখে। এ দুঃসহ অবস্থা ও ব্যবস্থা অবসানের জন্য ব্যাপক নাগরিক সংলাপ করে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রেয়োজন।
পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থান, জননিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং সীমান্তের বাইরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হলে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা টেকসই হবার নয়। তাই ক্ষুদ্র-বৃহৎ সব জাতি গোষ্ঠীর শাসন ও উন্নয়নে অংশীদারত্ব নিশ্চিত করাই হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল লক্ষ্য ও কাজ।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি ‘বিশেষ অঞ্চল’ হিসেবে ১৯০০ সালের পর থেকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভৌগোলিক ভিন্নতা বিশেষত পাহাড়-নদী এবং এখানে বাঙালিসহ মোট ১৩টি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। যাদের ভিন্ন ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি, প্রথা-রীতি-পদ্ধতি ও সামাজিক আচার-আচরণ রয়েছে। এই অঞ্চলে প্রথাগত ‘হেডম্যান’ কারবারি সার্কেল প্রধান, বাজার ফান্ড, সংবিধিবদ্ধ ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ (বিশেষ আইনে গঠিত) এবং একমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য তিন জেলা নিয়ে একটি ‘আঞ্চলিক পরিষদ’ রয়েছে। এ সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু ‘বাজার ফান্ড’ প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত করে বাকি ছয়টি প্রতিষ্ঠান অক্ষুণ্ণ রাখা যেতে পারে।
‘বাজার ফান্ড’ প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করে বাজার রাজস্ব আহরণের জন্য উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) ও উপজেলা পরিষদ সভাপতির সভাপতিত্বে একটি কমিটির মাধ্যমে মুক্তভাবে প্রতিযোগিতামূলক নিলামের মাধ্যমে এসব রাজস্ব একটি কেন্দ্রীয় তহবিলে স্থানান্তর করে তা ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা সার্কেল-চিফ ও জাতীয় সরকার এর মধ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী আনুপাতিক হারে বণ্টন করা যেতে পারে বলেও মনে করে কমিশন।
এছাড়া কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, পার্বত্য অঞ্চলের ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং-পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিকট হস্তান্তরিত হতে পারে। স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রতিবছর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জাতীয় বাজেটের পার্বত্য অংশ ওই মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করে দিতে পারে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোর সঙ্গে হেডম্যান কারবারীদের একটি প্রশাসনিক সম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে। ইউনিয়ন পরিষদের বার্ষিক পরিকল্পনা ও বাজেট অধিবেশনে হেডম্যানদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি স্থায়ী কমিটিতে একজন করে হেডম্যানকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। উপজেলা পরিষদে ও পৌরসভায় হেডম্যান-কারবারিদের নিজ নিজ পরিষদ অধিভুক্ত এলাকা থেকে একজন নারী ও একজন পুরুষকে সহযোগী সদস্য হিসেবে যুক্ত হতে পারে। জেলা পরিষদে স্ব-স্ব জেলার সার্কেল চিফরাও নিয়মিত সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।