মিজোরামে চোরাচালানের বিরুদ্ধে বড় অভিযান: পাচারের উদ্দেশ্যে গুদামজাত বিপুল অস্ত্র উদ্ধার

নিউজ ডেস্ক
মিজোরামের সীমান্তবর্তী লুংলেই জেলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং মিজোরাম পুলিশ এক চাঞ্চল্যকর অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি সীমান্ত-সংলগ্ন অঞ্চলে অস্ত্র চোরাচালানের রমরমা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযানের মধ্যে একটি।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালিত হয় এবং এক ভয়াবহ অস্ত্রভাণ্ডারের সন্ধান মেলে। পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, উদ্ধারকৃত অস্ত্রশস্ত্র মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছে পাচারের জন্য গুদামজাত করা হয়েছিল।
অভিযানে তিনজন চোরাকারবারি, যাদের মধ্যে এক নারীও আছেন, আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তবে বর্তমানে তাদের নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে ছিলো, ৬,২০০ রাউন্ড ৭.৬২ মি.মি একে সিরিজ রাইফেলের গুলি, ১,৮০০ মিটার কর্ডেক্স বিস্ফোরক তার, ৬০০টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডেটোনেটর, ২০ মিটার সেফটি ফিউজ ও বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম, যা চোরাচালানের কাজে ব্যবহৃত হতো।
অভিযানটি লুংলেই জেলার একটি সীমান্তবর্তী বাড়িতে পরিচালিত হয়, যেখানে এই বিপুল অস্ত্রশস্ত্র গুদামজাত করা হয়েছিল। গোয়েন্দা সংস্থার তীক্ষ্ণ নজরদারি এবং অভিযানটি চালানোর ফলে এই অস্ত্র চোরাচালান চক্রের পর্দাফাঁস হয়।
মিজোরাম পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আটক তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং পুরো নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। পুলিশ ধারণা করছে, এই অস্ত্রশস্ত্র পূর্ব ভারত, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কাছে পাচার করার পরিকল্পনা ছিল।
এটিই প্রথম নয়, মাত্র ৪০ দিন আগে লুংলেই জেলা থেকে আরেকটি বড় অস্ত্রভাণ্ডার উদ্ধার করা হয়েছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি, মিজোরাম পুলিশের সদস্যরা লুংলেই বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি গাড়ি আটক করেন, যেখানে পাওয়া গিয়েছিল, দুটি একে-৪৭ রাইফেল, পাঁচটি মার্কিন তৈরি এম-৪ কার্বাইন রাইফেল, ২০টি ম্যাগাজিন, ৫০৪ রাউন্ড ৭.৬২ মি.মি গুলি ও ৪,৬৭৫ রাউন্ড ৫.৫৬ মি.মি গুলি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিজোরাম সীমান্তবর্তী অঞ্চলের দুর্গম অঞ্চলগুলো চোরাচালানকারীদের জন্য প্রধান রুটে পরিণত হয়েছে। চোরাচালান ও অস্ত্র পাচার প্রতিবন্ধকতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউপিডিএফ, জেএসএস এবং কেএনএফ ভারত ও মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত এলাকায় আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এ অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা আরও গভীর সংকট তৈরি করতে পারে। সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় অভিযান এবং কঠোর নজরদারি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করতে পারে।
জানা গেছে, মিজোরামের প্রশাসন এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান রোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করছে। বিশেষত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে অরক্ষিত সীমান্ত চোরাচালানকারীদের জন্য একটি আদর্শ রুট হয়ে উঠেছে। ভারতীয় বাহিনীর এই অভিযান প্রমাণ করে যে তারা সন্ত্রাস ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে যেকোনো মূল্যে লড়াই চালিয়ে যাবে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।