পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে নামে-বেনামে বরাদ্দের নামে সাড়ে ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে নামে-বেনামে বরাদ্দের নামে সাড়ে ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে নামে-বেনামে বরাদ্দের নামে সাড়ে ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

অন্তর্বতীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার দপ্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত এই অর্থে পরিমাণ ৪ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।

আজ বুধবার (২৫ মার্চ) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় শাখা-১ এর উপসচিব মোহাম্মদ নাহিদ ইসলাম স্বাক্ষরিক তিনটি আলাদা পরিপত্রের মাধ্যমে আলাদা আলাদা করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে ১৮৫ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে ৪৪ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার টাকা ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে ৩ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের ওই পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য এসব অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে সমালোচনা তৈরী হয় তিনটি পরিপত্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশের পর।

পাহাড়ে সচেতন নাগরিক সমাজের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করে এ বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকেই দাবী করছেন নামে-বেনামে বরাদ্দ দিয়ে এসব অর্থ আত্নসাৎ করা হচ্ছে। অনেকে আবার দাবী করেছেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতার পিতাও রয়েছেন বরাদ্দ পাওয়া উপকারভোগীর তালিকায়। তালিকায় রয়েছেন পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যও। আঞ্চলিক একটি পত্রিকা অফিসের সংস্কারের নামেও দেখানো হয়েছে ৩ লাখ টাকার বরাদ্দ। খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার একই পরিবারের ৩ সদস্যের নামও দেখা গেছে তালিকায়।

এসব নিয়ে সরগরম পার্বত্য চট্টগ্রামের নেটিজেনদের ফেসবুক ওয়াল। অনেকেই দাবি করেছেন নামে-বেনামে বরাদ্দের নামে সাড়ে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে নামে-বেনামে বরাদ্দের নামে সাড়ে ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদ উল্লাহ তার ফেসবুক পোষ্টে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের কোটি কোটি টাকা নামে বেনামে আত্মসাৎ।
হরিলুটের মন্ত্রণালয় থেকে যে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারব তার ৯০% এর কোন অস্তিত্বই নেই।
হরিলুট মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার জন্য তদন্ত করে সেবাগ্রহীতাদের মাঝে বিতরণ করা হোক।
সরকারি টাকা এভাবে পছন্দের ব্যক্তিদের কি উদ্দেশ্যে দেওয়া হচ্ছে তা জানতে চাই?”

পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে নামে-বেনামে বরাদ্দের নামে সাড়ে ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

এছাড়া রাঙামাটির আলোচিত সাংবাদিক আলমগীর মানিক তার ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রদত্ত বরাদ্দের তালিকাটি এক নজর দেখুন; আমি কিছু বললে মহাণ নেতারা আবার চেতবেন
রাঙ্গামাটিতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ১ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার টাকা, খাগড়াছড়িতে ৩ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বান্দরবানে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।”

পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে নামে-বেনামে বরাদ্দের নামে সাড়ে ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

মোহাম্মদ ইউনুস নামের আরেক ফেসবুক ইউজারকারী লিখেছেন, “খাগড়াছড়িতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ৩ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এইখানেও বৈষম্য পাহাড়ি সম্প্রদায়ের ১৭০ জন বাংগালী থেকে শুধু ২১ জন কপাল পোড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালী জনগোষ্ঠী।”
পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে নামে-বেনামে বরাদ্দের নামে সাড়ে ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
আবুল কাশেম নামের খাগড়াছড়ির একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, “বরাদ্দের ফজিলত”
পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বিজু উপলক্ষে একই ক্লাবকে দুই পদধারীর অনুকূলে ৩ লক্ষ যোগ ২ লক্ষ, সমান ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কেহ পেয়েছে খেলাধূলার জন্য, কেহ পেয়েছে সাংস্কৃতিকের জন্য! বাহ কী চমৎকার। আপ্যায়নের জন্যও বরাদ্দ দেয়ার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি!

এছাড়া এসব পোষ্টে আবার বিপুল সংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারী নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তাদের দাবি হরিলুট করতেই নামে-বেনামে এসব বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।

তবে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

উল্লেখ্য, এ ধরনের আপদকালীন বরাদ্দ প্রক্রিয়া সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেকে মনে করছেন, এই বরাদ্দে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং তা দুর্নীতির উৎস হতে পারে। বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির তালিকায় অস্বচ্ছতার কারণে স্থানীয় জনগণের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে, যা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। এটি স্পষ্ট যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরকারের বরাদ্দ কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজন রয়েছে। যাতে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে পারে যে, বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে এবং প্রকৃত প্রয়োজনীয়দের কাছে পৌঁছাচ্ছে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।