পার্বত্য চট্টগ্রামে নাশকতায় অচল রবির অর্ধশত টাওয়ার, নেটওয়ার্ক বিপর্যয়

পার্বত্য চট্টগ্রামে নাশকতায় অচল রবির অর্ধশত টাওয়ার, নেটওয়ার্ক বিপর্যয়

পার্বত্য চট্টগ্রামে নাশকতায় অচল রবির অর্ধশত টাওয়ার, নেটওয়ার্ক বিপর্যয়
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অনেক জায়গায় রবির মোবাইল নেটওয়ার্কে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত তিন মাসে বিভিন্ন স্থানে দুর্বৃত্তরা রবির মোবাইল টাওয়ারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ফাইবার কেটে ফেলেছে। আঞ্চলিক সশস্ত্র উপজাতি সন্ত্রাসী চক্র কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মীকে অপহরণ করেছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় অর্ধশত টাওয়ার।

এমন পরিস্থিতিতে টাওয়ারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না টাওয়ার কোম্পানি ইডটকো বাংলাদেশ লিমিটেডও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে কাজ করছে। তবে এখনো পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রবি কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয়। সেখানে পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্যও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে পার্বত্য তিন জেলা।

খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, লক্ষ্মীছড়ি, পানিছড়ি, দীঘিনালা, মানিকছড়ি, নানিয়ারচর, রাওজান, ফটিকছড়ি, বাঘাইছড়িসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় কিছু আঞ্চলিক সশস্ত্র উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ৫১টি মোবাইল টাওয়ারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ও ফাইবার কেটে ফেলেছে। প্রায় তিন মাস ধরে চলতে থাকা এ ধরনের কার্যকলাপের পেছনে চাঁদাবাজির উদ্দেশ্য রয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে, আঞ্চলিক সশস্ত্র উপজাতি সন্ত্রাসী চক্রের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে শুধু খাগড়াছড়িতেই ৩২টি টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে সাতটি সচল করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এখনো বন্ধ রয়েছে ২৫টি টাওয়ার। এর মধ্যে কয়েকটি মাঝেমধ্যে সচল হলেও ফের তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া পার্বত্য তিন জেলার অন্তত ২৬টি টাওয়ার সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ফাইবার কেটে ফেলেছে সন্ত্রাসীরা। দেখা গেছে কোথাও কোথাও ফাইবারগুলো ঠিক করা হলেও ওই দিনই তা আবার কেটে দেওয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এ পর্যন্ত টাওয়ারগুলোর তিনজন নিরাপত্তাকর্মী অপহৃত হয়েছেন। অপরিচিত নম্বর থেকে রবির কর্মীদের নানাভাবে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল টাওয়ার এভাবে বন্ধ থাকার ফলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক না থাকায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ সরবরাহ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে। সেখানকার অনেক দুর্গম এলাকায় মোবাইল যোগাযোগই একমাত্র ভরসা। কিন্তু টাওয়ার বন্ধ থাকায় রোগীরা হাসপাতাল বা চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারছেন না।

খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ির বাসিন্দা রবিউল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিকভাবে কাজ করছে না। আমরা এ পরিস্থিতিতে খুবই বিপদে পড়েছি। অনেক সময় তো জরুরি যোগাযোগও করতে পারি না। বিশেষ করে রোগী হলে অথবা কোনো দুর্ঘটনা হলে দ্রুত সাহায্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ফার্মেসিতেও ওষুধপত্র সব পাওয়া যাচ্ছে না। দ্রুত টাওয়ারগুলো চালু না হলে সংকট আরও বাড়বে।’

রাঙামাটি সদরের বাসিন্দা জুনাং তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘এখনকার পরিস্থিতি খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাওয়ারের সমস্যা চলতে থাকায় যোগাযোগে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমরা চাই, সরকারের সহায়তায় দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হোক, না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত মোবাইল টাওয়ারগুলো চালু করা ও সেখানকার নিরাপত্তা জোরদার করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রবি। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টাওয়ার সমস্যার দ্রুত সমস্যা সমাধান না হলে রাজস্ব ও গ্রাহক হারিয়ে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রবি। পাশাপাশি আরও বেশি সংকটে পড়বে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা ও সেখানকার অর্থনীতি।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।