খাগড়াছড়িতে তৃতীয় দফায় আওয়ামীলীগের সংবাদ সম্মেলন, কাউন্সিলর তালিকায় বিএনপিপন্থীদের স্থান দেয়ার অভিযোগ
 
                 
নিউজ ডেস্ক
গত ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা সদরের একটি রেষ্টুরেন্টে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগের একাংশের সংবাদ সম্মেলনের পর ২২ নভেম্বর শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে জেলার সকল উপজেলার সভাপতি-সম্পাদকের ব্যানারে দ্বিতীয় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে সমীর দত্ত চাকমাকে আসন্ন জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী আখ্যায়িত করার পর এবার খাগড়াছড়ি সদর ও পৌর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীর ব্যানারে তৃতীয় দফায় খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেছে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনের মাত্র একদিন আগে ২৩ নভেম্বর শনিবার সকালে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুন্নবীসহ সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগের অন্যান্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, আগামীকাল ২৪ নভেম্বর রোববার অনুষ্ঠিতব্য জেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে নব্য আওয়ামীলীগ ও বিএনপিপন্থীদের নিয়ে কাউন্সিলর তালিকা প্রণয়ন করেছে সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি। এসময় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে দলের জন্য নিবেদিত ও কষ্ট করা নেতাদের বঞ্চিত করে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্যসহ দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত ভাবে রাজনীতির অপকৌশলের স্বার্থে নব্য আওয়ামীলীগ ও বিএনপিপন্থীদের দিয়ে সম্মেলনের কাউন্সিলর তালিকা প্রণয়ন করেছে সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি। সংবাদ সম্মেলন থেকে উক্ত কাউন্সিলর তালিকা প্রণয়নের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রণীত কাউন্সিলর তালিকা বাতিলে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
এর আগে, গত ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা সদরের এফএনএফ রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা অভিযোগ করে বলেন, “জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি ও সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা একপেশে ও অগণতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে বিশৃঙ্খল কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করছে। যার মাধ্যমে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা অসাম্প্রদায়িক দল আওয়ামীলীগে সাম্প্রদায়িক আধিপত্য বিস্তার করছেন।” তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে দলের জন্য নিবেদিত ও কষ্ট করা নেতাদের বঞ্চিত করে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্যসহ দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত ভাবে সম্মেলন ও কাউন্সিল নিয়ে লুকোচুরি এবং গোপন ষড়যন্ত্রের ফলে ক্ষোভ আর শঙ্কাও নিয়ে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, যার জন্য একমাত্র দায়ী সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার একনায়কতান্ত্রিক রাজনীতি।” অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা বলেন, সম্প্রতি খাগড়াছড়ির বিভিন্ন ইউনিয়ন, পৌর ও উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এমপির অনুসারীরাই সভাপতি/সম্পাদক পদ পেয়েছেন, যার ফলে জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে দলে ত্যাগী নেতা থাকা স্বত্বেও সুবিধাবাদীরাই আবারো জেলা আওয়ামীলীগকে কুক্ষিগত করার সুযোগ পাবেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এসময় তিনি বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি কর্তৃক অগণতান্ত্রিক ভাবে গঠিত নয় উপজেলা আওয়ামীলীগ ও পৌর আওয়ামীলীগ নিয়ে জেলা কাউন্সিলের জন্য তৈরী করা তালিকা প্রত্যাখ্যান আগামী ২৪ নভেম্বর সুষ্ঠু ভাবে খাগড়াছড়ি আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের লক্ষে সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান। পরদিন ২২ নভেম্বর শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে জেলার সকল উপজেলার সভাপতি-সম্পাদকের ব্যানারে আয়োজিত আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা স্বার্থান্বেষী একটি মহল ও আঞ্চলিক সংগঠনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে মিথ্যাচার করছেন বলে দাবি করা হয়। এসময় দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যক্রমে জড়িত উল্লেখ করে অবিলম্বে তাকে দলীয় পদ থেকে বহিস্কারের দাবী জানানো হয়। অন্যথায় জেলার সকল নেতা-কর্মী মিলে তার বিষয় যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে বলেও লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৭ বছর পর আগামী ২৪ নভেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি জানিয়েছে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় আওয়ামীলীগের নেতারা। এদিকে দীর্ঘ ৭ বছর পর কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে জেলায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারনা।
