দেশ ত্যাগে রোহিঙ্গাদের বাধ্য করা হয়নি, মামলা লড়তে আগ্রহী মিয়ানমার
 
                 
নিউজ ডেস্ক
২০১৭ সালের ২৫শে আগষ্ট নিজ দেশের সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়ে সীমান্ত ফেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিদেশী হিসেবে ইঙ্গিত করে মিয়ানমারের সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাও মিন তুন বলেছেন, “২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য সামরিক বাহিনী, পুলিশ বা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কেউ দায়ী নয়। মিয়ানমারের জনগণের বড় অংশই মনে করে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে গিয়েছিল। অথচ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টিই আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত হয়েছে।” গত ২২ নভেম্বর শুক্রবার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে তাড়িয়ে দেওয়া ও নির্যাতনের ঘটনাকে গণহত্যা দাবি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গাম্বিয়ার মামলার প্রেক্ষিতে মন্তব্য করতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
গণহত্যা বিরোধী সনদ লঙ্ঘন এবং রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলার আগামী ১০ থেকে ১৩ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডদের হেগে জাতিসংঘের আদালত আইসিজেতে প্রথম প্রকাশ্য শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) থেকেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলছে। মিয়ানমার তার ওপর আইসিসির বিচারিক এখতিয়ার প্রত্যাখ্যান করলেও আইসিজেতে মামলা মোকাবেলার ঘোষণা দিয়েছে।
আইসিজেতে শুনানির প্রাক্কালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকার ও সামরিক বাহিনী একজোট হচ্ছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট গত ২৩ নভেম্বর শনিবার নেপিডোতে শীর্ষ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে আইসিজেতে মামলা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এর আগে ২২ নভেম্বর শুক্রবার অন্য একটি অনুষ্ঠানে সেনা মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তুন দাবি করেন, মামলার বিষয়ে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করছেন তারা। রোহিঙ্গা সংকটের শুরুটা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কারণে হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, তারা (রোহিঙ্গারা) রাখাইনের বাসিন্দা নয়।
এদিকে মিয়ানমারের গণমাধ্যমগুলোতে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে উল্লেখ করছে, এমনকি অং সান সু চিও রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তবে বাংলাদেশ বরাবরই মিয়ানমারের এসব অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে তথ্য-উপাত্তসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস তুলে ধরেছে। যার ফলে রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের বাসিন্দা সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক জনমত রয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায় এখন রোহিঙ্গাদের ইতিহাস সম্পর্কে অবগত। শত শত বছর ধরে মিয়ানমারে নাগরিক হিসেবে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রহীন করার উদ্যোগ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অনেক দলিলে আছে।
এদিকে আইসিসির কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদা গত ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছেন, আইসিসির বিচারকরা তাঁকে তদন্ত শুরু করার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় বিশ্বাসযোগ্য বলে স্বীকার করেছেন। প্রথমত, বিচারকরা মনে করেন যে অন্তত ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক মাত্রায় বা ধারাবাহিক সহিংসতা, হত্যা, কারাদণ্ড, নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন সহিংসতাসহ অন্যান্য বলপূর্বক কাজের ফলে বড় পরিসরে ‘ডিপোর্টেশন’ (নির্বাসন) হয়ে থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় বা উভয় কারণেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বলপূর্বক নিপীড়ন মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। তৃতীয়ত, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা চালাতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নীতি থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও বর্বরোচিত রোহিঙ্গা গণহত্যাসহ গণ নির্যাতনের অভিযোগ এনে গত ১১ নভেম্বর সোমবার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা দায়ের করেছে গাম্বিয়া। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দায়েরকৃত এটিই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার কোন প্রথম মামলা। আর এতে সর্বপ্রথম নিজেদের সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা।
