রোহিঙ্গাদের নিরাপদে স্বদেশ প্রত্যাবাসনে চীনের নতুন প্রস্তাব
 
                 
নিউজ ডেস্ক
২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে ব্যাপক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের কক্সবাজারের আশ্রয় নেয়া ও এর আগে বিভিন্ন সময়ে এদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিরাপদে নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে নতুন করে একটি কাঠামোভিত্তিক প্রস্তাবনা পেশ করেছে চীন। ২৪ নভেম্বর রবিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের উপায় সন্ধান’ শীর্ষক এক সেমিনারে চীনের রাষ্ট্রদূত এইচ ই লি জিমিং রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরাতে নতুন এই ‘ওয়ান প্লাস ওয়ান প্লাস টু’ প্রস্তাব পেশ করেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরু হবার পর থেকে বেশ কয়েকবার শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যেসব রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা হয়েছে, মিয়ানমারে ফেরার বিষয়ে তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক বক্তব্য পেয়েছি। এক্ষেত্রে একটি রোহিঙ্গা পরিবার মিয়ানমারে ফিরতে পারবে, এমন একজনকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করা হবে। চীন এই রোহিঙ্গাদের দু’টি মোবাইল ফোন দেবে। এর একটি নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে থাকবে। অন্যটি থাকবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা তার পরিবারের কাছে।’ ‘প্রতিনিধিরা মিয়ানমারে গিয়ে পরিস্থিতি দেখবেন। রাখাইনের পরিস্থিতি ভালো ও নিরাপদ কিনা, তা দেখবেন। একইসঙ্গে পরিবারের সঙ্গে তাৎক্ষণিক তথ্য ভাগাভাগি করবেন। এরই আলোকে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আগানো যাবে কিনা, সে বিষয়ে ভাবতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই স্বেচ্ছাসেবক প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে মিয়ানমার সরকারকেই।’
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দু’টি রাষ্ট্রই সার্বভৌম রাষ্ট্র ও চীনের বন্ধুপ্রতিম দেশ উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তিনটি আহ্বান জানিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘প্রথমত, রোহিঙ্গাসহ কক্সবাজারের স্থানীয়দের ওপর বেশি করে আলো ফেলতে হবে। কারণ, তারাও ভুগছে। দ্বিতীয়ত, অর্থ সহায়তার ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখাসহ যথাযথ তদারকি করতে হবে। যেন অর্থটা ঠিকমতো রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য খরচ করা যায়। তৃতীয়ত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ সংলাপ বজায় থাকে।’
সেমিনারে উপস্থিত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর স্থানীয় প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থার করুণ চিত্র স্মরণ করে বলেন, মিয়ানমারে নিরাপত্তা পেলে রোহিঙ্গাদের শতকরা ৯৭ জনই স্বদেশে ফিরে যেতে চান। তাদের এ নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ, বাংলাদেশ পোস্টের প্রধান সম্পাদক শরীফ শাহাব উদ্দিন, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সাবিনা ইয়াসমিন সিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
