পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসে ইসরায়েল-ভারতের গোপন পরিকল্পনা
![]()
নিউজ ডেস্ক
পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের ইতিহাস শুধুই বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির কাহিনি নয়,এ এক ষড়যন্ত্র, আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, আত্মত্যাগ ও জাতীয় সংকল্পের মিশ্রণ। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ঘিরে নানা অজানা তথ্য ও আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত।
ঘটনার সূচনা ১৯৭৪ সালে, ভারত যখন “স্মাইলিং বুদ্ধা” নামে প্রথম পরমাণু পরীক্ষা চালায়। প্রতিবেশী দেশের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানকে ভাবিয়ে তোলে। সে সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো স্পষ্ট ঘোষণা দেন, “দরকার হলে পাকিস্তানিরা ঘাস খাবে, তবুও পরমাণু বোমা বানাবে।” এখান থেকেই শুরু হয় ইসলামী পরমাণু অস্ত্র তৈরির লক্ষ্যে ‘ইসলামিক বোমা’ কর্মসূচি।
পরমাণু বিজ্ঞানী ড. আব্দুল কাদির খান ছিলেন এই কর্মসূচির মূল কারিগর। তিনি ১৯৭০ এর দশকে নেদারল্যান্ডসে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার সময় সেখান থেকে গোপনে প্রযুক্তিগত নকশা সংগ্রহ করে দেশে ফেরেন। এরপর তিনি গোপনে শুরু করেন পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্প।
পাকিস্তানের গোপন পারমাণবিক কর্মসূচির কথা ফাঁস হয় ১৯৭৯ সালে একটি ম্যাগাজিনে। এরপর ইসরাইল ব্যাপক উদ্বেগ জানায় এবং ডাচ সরকার আব্দুল কাদির খানের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। ডাচ আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করলেও পরে সেই রায় বাতিল হয়।
১৯৮০ এর দশকে ইসরাইল ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের পরিকল্পনা করে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রথমে সম্মতি দিলেও পরে সেই পরিকল্পনা বাতিল করেন। এছাড়া আব্দুল কাদির খানের ওপর হত্যা চেষ্টাসহ নানা হুমকি দেওয়া হয়, তবে সবকিছু ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে আমেরিকা ও চীন গোপনে পাকিস্তানের এই কর্মসূচিতে সহায়তা করে। দীর্ঘ গোপন পরিশ্রম ও বৈশ্বিক বাধা পেরিয়ে অবশেষে ১৯৯৮ সালে পাকিস্তান সফলভাবে পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। এর মাধ্যমে পাকিস্তান হয়ে ওঠে বিশ্বের সপ্তম ও মুসলিম বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ।
এই ইতিহাস প্রমাণ করে যে, সংকল্প, নেতৃত্ব ও বৈজ্ঞানিক মেধা মিললে আন্তর্জাতিক বাধাও জয় করা সম্ভব। পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন তাই শুধুই একটি প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, বরং এটি জাতীয় আত্মপরিচয় ও স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।