‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগ, উল্টো চাঁদাবাজির দায়ে অভিযুক্ত জেএসএস
 
                 
নিউজ ডেস্ক
রাঙামাটি, ১ জুলাই ২০২৫: পার্বত্য চট্টগ্রামের তথাকথিত ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ নিয়ে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) কর্তৃক প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ রিপোর্টের মাধ্যমে জেএসএস নিজেদের ভূমিকা আড়াল করতে এবং চুক্তিভঙ্গের দায় এড়াতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে জেএসএস দাবি করে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ১০৩টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এবং এ সময়ের মধ্যে ৩০০ একর ভূমি দখল ও ৩০ জন শিশুকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। তবে পাহাড়ের বাস্তবতার সঙ্গে এই অভিযোগের সামঞ্জস্য পাওয়া যায় না বলেই মনে করছেন স্থানীয় অধিকারকর্মী ও প্রশাসনিক সূত্রগুলো।
স্থানীয় পাহাড়ি জনগণের বড় একটি অংশ সরাসরি অভিযোগ করে আসছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সংগঠন হলো জেএসএস নিজেই। কথিত ‘স্বশাসন’ প্রতিষ্ঠার নামে সাধারণ পাহাড়িদের ওপর আর্থিক ও সামাজিক নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে এই সংগঠন। স্কুল শিক্ষকদের বেতন থেকে শুরু করে কৃষকের উৎপাদিত ফসল পর্যন্ত সবখানেই চলছে চাঁদার রেট। প্রতিবাদ করলে অপহরণ, গুম কিংবা খুনই একমাত্র পরিণতি।
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার এক চাকমা কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “প্রতি মৌসুমে জেএসএস ও সহযোগী সন্ত্রাসী গ্রুপের চাঁদা না দিলে আমাদের জুম চাষ করতে দেয়া হয় না। এটাই পাহাড়ে সাধারণ মানুষের ‘মানবাধিকার বাস্তবতা’। অথচ ওরাই এখন মানবাধিকারের মুখোশ পরে আমাদের দুঃখ ঢেকে দিচ্ছে।”
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর যে পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তার অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল জেএসএস ও তার সশস্ত্র সংগঠন শান্তি বাহিনীর অস্ত্র জমা দেওয়া এবং গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসা। কিন্তু বাস্তবতা হলো—আজও জেএসএসের বিভিন্ন উপ-গ্রুপ হাতে অস্ত্র রেখেই পাহাড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজির মামলা চলমান রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, গত ছয় মাসেই জেএসএস ও ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে পার্বত্য অঞ্চলে অন্তত ৩০টির বেশি চাঁদাবাজি, অস্ত্রধারী সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের মামলা দায়ের হয়েছে। সরকারি দলিল অনুযায়ী, সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তির অধিকাংশ ধারা ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে—বিশেষ করে ভূমি কমিশন, জেলা পরিষদ শক্তিশালীকরণ, শিক্ষা ও উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়ানোসহ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া।
জেএসএস এর প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, চুক্তি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ কমিটির বৈঠক হয়নি। অথচ বাস্তবতা হলো, জেএসএস নিজেই বারবার বৈঠক বর্জন করেছে এবং রাজনৈতিকভাবে একপাক্ষিক শর্ত জুড়ে দিয়ে বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজেদের অস্ত্র জমা না দিয়ে, সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ না করে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের দাবি করা একপ্রকার প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।
সামগ্রিকভাবে, প্রশ্ন উঠেছে—যারা অস্ত্রের মাধ্যমে পাহাড়ে শাসন কায়েম করেছে, যারা গণতান্ত্রিক বিকল্প না রেখে সন্ত্রাস ও নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে, তারাই কীভাবে আজ মানবাধিকারের কথা বলে?
প্রসঙ্গত, জেএসএসের পক্ষ থেকে প্রকাশিত রিপোর্টের তথ্যে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা না থাকায় এটি আন্তর্জাতিক মহলেও সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। পাহাড়ের জনগণ আজ প্রশ্ন তুলছে—মানবাধিকার রক্ষার নামে নিজেদের অপরাধ আড়াল করা কি মানবাধিকার আন্দোলনের প্রকৃত রূপ হতে পারে?
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
