গুজরাটে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে হেনস্তা, পশ্চিমবঙ্গে ফিরেও বঞ্চনার শিকার এক বাঙালি পরিবার

গুজরাটে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে হেনস্তা, পশ্চিমবঙ্গে ফিরেও বঞ্চনার শিকার এক বাঙালি পরিবার

গুজরাটে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে হেনস্তা, পশ্চিমবঙ্গে ফিরেও বঞ্চনার শিকার এক বাঙালি পরিবার
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ভারতের গুজরাট রাজ্যে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে একের পর এক বাঙালি শ্রমিকের উপর পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এর জেরে আতঙ্কিত হয়ে রাজ্যে ফিরে এসেছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। তেমনি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে ফিরে এসেছেন গুজরাটে কাজ করা বাঙালি শ্রমিক দম্পতি নিয়ামত আলী শেখ ও তার স্ত্রী সাবিনা বিবি।

কিন্তু নিরাপত্তার আশায় ফিরে এলেও এখানেও মিলছে না স্বস্তি। গুজরাটের একটি স্কুলে পড়ুয়া তাদের একমাত্র মেয়ে সুমাইয়া খাতুন (১৭) পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসে স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে নতুন বিড়ম্বনায় পড়েছে। মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট না থাকায় একাধিক স্কুল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে।

পরিবারটি জানায়, গুজরাটের সংগ্রামপুরা এলাকায় বছর সাতেক ধরে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে বসবাস করছিল তারা। বাবা নিয়ামত আলী সেলাইয়ের কাজ করতেন, মা সাবিনা বাড়িতে বসেই জরির কাজ করতেন। একমাত্র মেয়ে সুমাইয়া স্থানীয় একটি স্কুলে পড়ত। চলতি বছর মাধ্যমিক পাস করে সে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়।

সম্প্রতি গুজরাটে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে হঠাৎ করে পুলিশি ধরপাকড় শুরু হয়। অভিযোগ রয়েছে, ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে মূলত বাঙালি শ্রমিকদের উপর নেমে আসে নিপীড়ন। এ অবস্থায় অনেকেই পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসেন।

নিয়ামত আলী জানান, “ঈদের আগেই গুজরাটে বাংলা ভাষাভাষীদের উপর পুলিশি হয়রানি বেড়ে যায়। ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে কেউ গারদে, কেউ মারধরের শিকার। প্রাণভয়ে আমরা নিজ রাজ্যে ফিরে এসেছি। কিন্তু মেয়ের স্কুলে ভর্তি নিয়ে এবার নতুন দুশ্চিন্তা।”

সুমাইয়া জানায়, “আমি পড়তে চাই। কিন্তু স্কুলে ভর্তি না হতে পারলে আমার একটা বছর নষ্ট হয়ে যাবে।”

মাইগ্রেশন সনদপত্র ছাড়াই কেন স্কুলে ভর্তি করা সম্ভব নয়—এই প্রশ্ন তুলে স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে পরিবারটি। এছাড়া, তারা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন জানিয়েছে।

এ নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসক দলও। তৃণমূলপন্থী শিক্ষক নেতা মইদুল ইসলাম বলেন, “সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মহকুমা প্রশাসন ওই ছাত্রীকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালি শ্রমিকদের ওপর ‘বাংলাদেশি’ অপবাদ দিয়ে অন্যায় করছে। অথচ বাংলায় অন্য রাজ্যের শ্রমিকরা স্বাভাবিকভাবেই কাজ করতে পারছে।”

বিজেপির স্থানীয় নেতা সুফল ঘাটু অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “পরিবারটি আতঙ্কে চলে এসেছে, তাতে কারো বাধা ছিল না। মেয়েটির ভর্তি নিয়ে সরকার ব্যবস্থা নিক।”

এদিকে ডায়মন্ড হারবার মহকুমার প্রশাসক অঞ্জন ঘোষ জানিয়েছেন, “ওই ছাত্রী যেন দ্রুত স্কুলে ভর্তি হতে পারে, তার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে পরিবারটিকে সঙ্গে নিয়ে গুজরাটে গিয়ে মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট সংগ্রহের ব্যবস্থাও করা হবে।”

প্রসঙ্গত, ভারতজুড়ে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ’ ইস্যুকে কেন্দ্র করে আসামের পর গুজরাটেও বাঙালিদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ বাড়ছে। ফেরত আসা শ্রমিকদের অভিযোগে উঠে আসছে পুলিশি হয়রানি, নিপীড়ন ও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের চিত্র। আর তারই প্রতিফলন ঘটছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীর মতো নিরীহদের জীবনেও।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।