ত্রিপুরায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান
![]()
নিউজ ডেস্ক
উত্তর-পূর্ব ভারতের আটটি প্রধান ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (এনইএসও) অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ত্রিপুরা সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির দাবি, অনুপ্রবেশ এখন “গুরুতর ও উদ্বেগজনক পর্যায়ে” পৌঁছেছে এবং এ সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।
গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে এনইএসও জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে অব্যাহত অনুপ্রবেশ এখন “গভীর সঙ্কটে” পরিণত হয়েছে। এর ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাংস্কৃতিক পরিচয়, ভাষা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, “উত্তর-পূর্বে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও জাতিসত্তা আজ বিপন্ন। বিশেষ করে ত্রিপুরায় এ সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সেখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ নিজেদের ভূখণ্ডেই সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন।”
১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে এনইএসও অভিযোগ করেছে, ওই ঐতিহাসিক চুক্তি সই হলেও অধিকাংশ ধারা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। সংগঠনটির ভাষ্য, “আসামের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু এত দশক পরও প্রতিশ্রুতিগুলো কাগজেই রয়ে গেছে।”
স্মারকলিপিতে মেঘালয়ের জনমিতি পরিবর্তনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। সংগঠনটির দাবি, ১৯৭৯, ১৯৮৭ এবং নব্বই দশকের শুরুর দিকের আন্দোলনগুলো ছিল অনুপ্রবেশ-জনিত সঙ্কটকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে গারো পাহাড়ের সমতল অঞ্চলসহ উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
এনইএসও অভিযোগ করেছে, কেন্দ্রীয় সরকার এখন পর্যন্ত কেবল “অস্থায়ী ও প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপ” নিয়েছে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান খোঁজেনি। সংগঠনটির মতে, “এটি শুধু প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক সমস্যা নয়—এটি অস্তিত্বের প্রশ্ন। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও জাতিসত্তা বিপন্ন।”
সংগঠনটি ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের তাৎক্ষণিক সনাক্তকরণ ও বহিষ্কার, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সম্পূর্ণ সিল করা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা, প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে অভিবাসন প্রতিরোধ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ভাষা, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক ও ভূমি-অধিকার রক্ষায় আইনি সুরক্ষা প্রদান।
রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এনইএসও স্মারকলিপিতে আরও বলেছে, “অনুপ্রবেশের প্রশ্নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হোক। অন্যথায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।”
উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনসংখ্যাগত পরিবর্তন দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিতর্কের অন্যতম বড় বিষয়। এবার এনইএসও-এর স্মারকলিপি তা নতুন করে আলোচনায় তুলল।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।