লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের কাছে চারটি গ্রেনেড ফেলেছে ইসরায়েলি ড্রোন
![]()
নিউজ ডেস্ক
লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনী (ইউনিফিল) বুধবার জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে ইসরায়েলি ড্রোন শান্তিরক্ষীদের কাছাকাছি চারটি গ্রেনেড ফেলেছে।
ইউনিফিল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গত বছরের নভেম্বরে শত্রুতার অবসান চুক্তির পর থেকে ইউনিফিল সদস্য ও সম্পদের ওপর সবচেয়ে গুরুতর আক্রমণগুলোর একটি এটি। একটি গ্রেনেড পড়েছে শান্তিরক্ষীদের মাত্র ২০ মিটারের মধ্যে এবং তিনটি প্রায় ১০০ মিটারের মধ্যে, যেখানে শান্তিরক্ষী ও তাদের যানবাহন অবস্থান করছিল।’
ইউনিফিল আরো জানিয়েছে, শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘ ঘাঁটিতে যাওয়ার পথ থেকে বাধা সরানোর কাজ করার সময় এ হামলা হয়।
২০২৪ সালের নভেম্বরে হিজবুল্লাহর সঙ্গে করা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে ইসরায়েল প্রতিদিন লেবাননে হামলা চালাচ্ছে। হিজবুল্লাহর অবস্থান ও সদস্যদের লক্ষ্য করার দাবি করছে তারা, তবে এতে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষও নিহত হয়েছে, সম্প্রদায়গুলো উচ্ছেদ হয়েছে এবং অবকাঠামো ও আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী ও তাদের সম্পদকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে—এমন কোনো পদক্ষেপ এবং তাদের নির্ধারিত কাজের সঙ্গে হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে বৈরুত থেকে আলজাজিরার জেইনা খোদর জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েলি সেনারা জানত যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ করবে, আর সেই কারণেই এটিকে তারা ইচ্ছাকৃত টার্গেটিং বলছে। এটিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে—সীমান্তের কাছে কাউকে যেতে দেওয়া হবে না। যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েল সীমান্ত বরাবর লেবাননের ভেতরে অবস্থান তৈরি করেছে, যা কার্যত একটি বাফার জোনে পরিণত হয়েছে।
খোদর আরো জানান, ‘১০ হাজারেরও বেশি মানুষ এখনো তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রামে ফিরতে পারেনি, এমনকি পুনর্গঠন বা ধ্বংসাবশেষ সরাতেও নয়। ইসরায়েলি ড্রোন সাধারণত সেই বুলডোজারগুলোকেই টার্গেট করে।’
তিনি আরো বলেন, লেবানন চায় জাতিসংঘ সেখানে থাকুক। কারণ লেবাননের সেনাবাহিনীর পর্যাপ্ত সেনা নেই মোতায়েন করার মতো। লেবানন রাষ্ট্র হিজবুল্লাহকে পুরোপুরি নিরস্ত্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনিফিল লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে ইসরায়েলের সঙ্গে টহল দেয়। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে লেবাননে শান্তি রক্ষা মিশনের মেয়াদ ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। তারপর এক বছরের মধ্যে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদভাবে মিশন গুটিয়ে নেওয়া শুরু হবে।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইউনিফিল কার্যক্রম সংকোচনের জন্য চাপ দিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর থেকে এই বাহিনী হিজবুল্লাহকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে এবং সংগঠনটিকে নিরস্ত্র করার জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যদিও সেটি ইউনিফিলের নির্ধারিত ম্যান্ডেট নয়।
এদিকে গত অক্টোবর দক্ষিণ লেবাননে আক্রমণের পর ইসরায়েল এখনো অন্তত পাঁচটি জায়গায় দখল করে রেখেছে। নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলি সেনাদের দক্ষিণ লেবানন থেকে সরে যেতে হবে, তবে তা এখনো হয়নি।
হিজবুল্লাহ মহাসচিব নাঈম কাসেম সংগঠনটিকে নিরস্ত্র করার ক্রমবর্ধমান চাপ প্রত্যাখ্যান করে সতর্ক করেছেন, লেবাননের সার্বভৌমত্ব কেবল ইসরায়েলি ‘আগ্রাসন’ বন্ধের মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে।
তিনি গত মাসে বলেছিলেন, জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার আগে লেবানন সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, ইসরায়েল যেন ২০২৪ সালের নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলে। তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিরোধ শক্তি ইসরায়েলের লক্ষ্য অর্জনের পথে শক্তিশালী বাধা হয়ে থাকবে এবং ইসরায়েল লেবাননে থাকতে পারবে না বা লেবাননের মাধ্যমে তার সম্প্রসারণবাদী প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে না।’
কাসেম লেবানন সরকার ও বিদেশি পক্ষগুলোর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডারকে জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলে একীভূত করার কথা বলা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলকে প্রথমে লেবাননের ভূখণ্ড থেকে সরে যেতে হবে, বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে এবং হামলা বন্ধ করতে হবে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।