২০ বছর পর হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের জেইসি বৈঠক

২০ বছর পর হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের জেইসি বৈঠক

২০ বছর পর হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের জেইসি বৈঠক
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

দীর্ঘ ২০ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান ‘যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন’ (জেইসি)-এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে পাকিস্তান পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব এবং বাংলাদেশ পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এর আগে সর্বশেষ জেইসি বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ইআরডি সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের জেইসির বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য পরিমাণ ২০ কোটি ডলার থেকে ২০০৭ সাল নাগাদ ১০০ কোটি ডলারে নেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় পাকিস্তানের বাজারে শতাধিক পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চেয়েছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে পাকিস্তান চেয়েছিল মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)। কিন্তু পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। কারণ সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে কোনো জেইসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশেষ করে গত আওয়ামী লীগ শাসনামলের ১৬ বছরে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকটা দূরত্ব বজায় রাখা হয়। এরপর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর আগ্রহ দেখায় পাকিস্তান। এ নিয়ে চলতি বছরের প্রথমার্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টাসহ কয়েকজন উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের সেই সময়কার হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। সব সাক্ষাতেই তিনি বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। এর চলতি বছরই পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফপিসিসিআইয়ের নেতাদের নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখ। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য জোরদার করতে তখন বিজনেস কাউন্সিল গঠনের বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে এফবিসিসিআই ও এফপিসিসিআই। এরপর গত ২১ আগস্ট পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সাথে সাক্ষাৎ করে দুই দেশের মধ্যে নিষ্ক্রিয় থাকা জেইসি পুনরায় সচল করার আহ্বান জানান। এরই প্রেক্ষাপটে এই কমিশনের বৈঠকটি আয়োজন করা হয়েছে।

জানা গেছে, সভার আলোচ্যসূচিতে রাখার জন্য এরই মধ্যে পররাষ্ট্র, শিল্প, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর প্রধানের কাছে প্রস্তাব চেয়ে চিঠি দিয়েছিল ইআরডি। এই চিঠির আলোকে জেইসির জন্য আলোচ্যসূচি ঠিক করার কাজ প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বৈঠকে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি করে শুল্ক ও কোটামুক্তভাবে চা, পাটজাত পণ্য, মেডিসিন, কাপড়, ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যাদি, আমদানি করার জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ করা হবে।

ইআরডির তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ১৮টি দেশের সাথে বাংলাদেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জিইসি) আছে। দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, ইরান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), রোমানিয়া, তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানির পরিমাণ ছিল ৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রফতানির পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ডলার।

উল্লেখ্য, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পাকিস্তানের সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহজ করতে গত ছয় মাসে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেমন গত ডিসেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি পাকিস্তান থেকে পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এ ছাড়া বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করেছে পাকিস্তান। বর্তমানে পাকিস্তান বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য অন-অ্যারাইভেল ভিসা দিচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল ব্যবস্থা চালুর বিষয়েও আলোচনা চলছে। চলতি বছরেই ঢাকা-করাচি রুটে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হতে পারে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।