দীর্ঘ ছয় দশক পর আবারো সচল রাঙামাটি-ঠেগামুখ লঞ্চ চলাচল - Southeast Asia Journal

দীর্ঘ ছয় দশক পর আবারো সচল রাঙামাটি-ঠেগামুখ লঞ্চ চলাচল

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙামাটি জেলার একটি কৃত্রিম হ্রদ। কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলি নদীর উপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করা হলে এ হ্রদের সৃষ্টি হয়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৫৬ সালে আমেরিকার অর্থায়নে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। ১৯৬২ সালে এর নির্মাণ শেষ হয়। ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এবং ইউতাহ ইন্টারন্যাশনাল ইনকর্পোরেট ৬৭০.৬ মিটার দীর্ঘ ও ৫৪.৭ মিটার উচ্চতার এ বাঁধটি নির্মাণ করে। এ বাঁধের পাশে ১৬টি জলকপাট সংযুক্ত ৭৪৫ ফুট দীর্ঘ একটি পানি নির্গমন পথ বা স্পিলওয়ে রাখা হয়েছে। এ স্পিলওয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লাখ ২৫ হাজার কিউসেক ফিট পানি নির্গমন করতে পারে। এ প্রকল্পের জন্য তখন প্রায় ২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হলেও পরে তা ৪৮ কোটি ছাড়িয়ে যায়।

আর কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির প্রায় ছয় দশক পর প্রথম বারের মতো ভারত সীমান্তবর্তী ঠেগামুখ (প্রস্তাবিত স্থল বন্দর) পর্যন্ত যাত্রীবাহি লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়েছে। ১২ জানুয়ারি রোববার সকাল থেকে রাঙামাটি থেকে ঠেগামুখ অভিমুখে যাত্রীবাহি লঞ্চ ছেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ সেলিম উদ্দিন।

লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্র মতে, সম্প্রতি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের স্মারক নং-১৮, ১১.০০০০. ১২৩.৯৯,৩৩৩.১৭/২১ মূলে ছোট হরিণা বিজিবি জোন কমান্ডার বরাবরে প্রেরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রাঙামাটি টু ঠেগামুখ রুটে যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচলে অনুমতি প্রদানের জন্য নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়েছে। চলতি মাসের ছয় তারিখে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়। যার ধারাবাহিকতায় সংশ্লিষ্ট্য সকলের অনুমোদন পাওয়ায় রোববার সকাল থেকে প্রথমবারের মতো যাত্রীবাহি লঞ্চ রাঙামাটি থেকে ছেড়ে ঠেগামুখ অভিমুখে যাত্রা শুরু করবে। ১৯৬০ সালে পার্বত্য রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর প্রথমবারের মতো এই রুটটি চালু হওয়ায় রাঙামাটির অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছে ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দ।

বিআইডব্লিউটিএ এর পক্ষ থেকে প্রেরিত পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন বিধিমালা-২০১৯ অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী সকল ধরনের নৌযানের রুটপারমিট ও সময়সূচী প্রদানে বিধিবদ্ধ সংস্থা। সেই অনুযায়ী ঠেগামুখ রুটেও সময়সূচী নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

উক্ত নৌপথটি নিরাপদ ও জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে বিজিবি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করে রাঙামাটি-ঠেগামুখ ভায়া ছোট হরিণা, বরকল নৌপথে চলাচলকারী নৌযান, সাধারণ যাত্রী ও ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকগণের অবাধ ও নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিতকল্পে ঠেগামুখ পর্যন্ত চলাচলের প্রয়োজনীয় সহযােগীতা ও সম্মতি প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়েছে বিআইডব্লিউটিএ থেকে পাঠানো প্রজ্ঞাপনে। এদিকে স্থানীয় লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, ঠেগামুখ স্থল বন্দর চালু করবে সরকার। সেই লক্ষ্যে সেখানে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে এবং সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবির পাশাপাশি রাঙামাটিতে আগত পর্যটকরা ঠেগামুখ যাওয়ার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারনে সেখানে লঞ্চ যাওয়ার ব্যাপারে বিধি নিষেধ ছিলো।

নৌযাত্রী পরিবহন সংস্থা রাঙামাটি জোনের সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম জানিয়েছেন, ‘সরকারের এই সিদ্ধান্তে ফলে খুব শীঘ্রই সাজেকের মতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে ঠেগামুখ এলাকাটি, কারন যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচলের ফলে নিরাপদ ভ্রমনের পথ অনেকটাই সুগম হবে বলে আমার বিশ্বাস।’ তিনি জানান, ‘রোববার থেকে রাঙামাটির রির্জাভ বাজারস্থ লঞ্চঘাট থেকে সকাল সাড়ে ৭টায় ঠেগামুখের উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে একটি লঞ্চ ছেড়ে যাবে।অপরদিক ঠেগামুখ থেকেও সকাল ৬টায় রাঙামাটির উদ্দ্যেশে একটি লঞ্চ ছেড়ে আসবে। এদিকে ইতিমধ্যেই নতুন চালু হওয়া এই রুটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা জোরদার করেছে।’

এছাড়া বাংলাদেশের লেকসিটি হিসেবে খ্যাত রাঙামাটি জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ, হ্রদ ও নৌপথ ভ্রমনে সাধারণ যাত্রীসহ পর্যটকদের অবাধ ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন ও বর্ণিত নৌপথের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে সাধারণ যাত্রীসহ ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকগণের কাছে ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করবে বলে অভিমত স্থানীয়দের।