মাইকেল চাকমা: পাহাড়ে চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস ও সহিংস রাজনীতির অন্যতম কুশীলব

মাইকেল চাকমা: পাহাড়ে চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস ও সহিংস রাজনীতির অন্যতম কুশীলব

মাইকেল চাকমা: পাহাড়ে চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস ও সহিংস রাজনীতির অন্যতম কুশীলব
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

চট্টগ্রামের পার্বত্যাঞ্চলে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সশস্ত্র রাজনীতি, চাঁদাবাজি ও হত্যার সংস্কৃতি। শান্ত পাহাড়ে ফের অস্থিরতার এই আবহের পেছনে বারবার উঠে আসছে এক ব্যক্তির নাম—মাইকেল চাকমা। তিনি সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর মুখপাত্র এবং পার্বত্য অঞ্চলে নাশকতা, ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসের রাজনীতির অন্যতম কুশীলব হিসেবে পরিচিত।

হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র চোরাচালানের কেন্দ্রবিন্দু মাইকেল চাকমা

নির্বিচারে হত্যা, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র চোরাচালানসহ একাধিক মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও মাইকেল চাকমা দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে রাজনৈতিক ও সশস্ত্র আধিপত্য কায়েমে সক্রিয়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে জানা যায়, তাঁর প্রত্যক্ষ নির্দেশেই পরিচালিত হচ্ছে ইউপিডিএফের সশস্ত্র তৎপরতা—যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আদায় করা হচ্ছে ‘চাঁদা’, নিপীড়িত হচ্ছে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ঠিকাদাররা।

সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে আলোচিত তথাকথিত ধর্ষণ ঘটনার পেছনেও মাইকেল চাকমার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র। সূত্রগুলো বলছে, শান্ত পাহাড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি ও সেনাবাহিনীকে জনবিচ্ছিন্ন করার কৌশল হিসেবেই ইউপিডিএফ নেতৃত্ব এই ধরনের ঘটনা সংঘটিত করে থাকে।

১৯৯৭ সালের পর থেকেই অশান্তির পরিকল্পনা

গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর থেকেই ‘পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন’-এর স্লোগান তুলে ইউপিডিএফ নতুনভাবে সশস্ত্র রাজনীতির সূচনা করে। শুরু থেকেই এই দলটি শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে আসছে এবং পরবর্তীতে মাইকেল চাকমার নেতৃত্বে চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

দুই দশকের বেশি সময় পরও ইউপিডিএফের হাতে শান্তিচুক্তির সময় জমা না দেওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। পাশাপাশি মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মিয়ানমারের সীমান্তপথে ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ আমদানির প্রমাণও পাওয়া গেছে। এই অস্ত্র কেনার পেছনে রয়েছে চাঁদাবাজি ও মাদক চোরাচালানের বিশাল অর্থনৈতিক জোগান। স্থানীয়ভাবে এটি এখন ‘ওপেন সিক্রেট’।

হত্যার রাজনীতির জন্মদাতা

ইউপিডিএফের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্বের সংঘাত থেকেই পার্বত্যাঞ্চলে হত্যার রাজনীতির সূত্রপাত। শক্তিমান চাকমা ও মাইকেল চাকমা—দুজনই ছিলেন ইউপিডিএফের সক্রিয় কর্মী। কিন্তু রাজনৈতিক মতভেদ ও নেতৃত্বের লড়াই তাদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে।

২০১১ সালে অস্ত্রসহ গ্রেফতারের পর মাইকেল চাকমা কারামুক্ত হয়ে ফের সংগঠনে যোগ দেন। পরবর্তীতে শক্তিমান চাকমা নানিয়ারচর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে ক্ষুব্ধ হন মাইকেল। ২০১৮ সালের ৩ মে শক্তিমানকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন তাঁর শেষকৃত্যে যোগ দিতে আসা তপন জ্যোতি (বর্মা)সহ আরও দুইজনকেও সশস্ত্র হামলায় হত্যা করা হয়। উভয় হত্যাকাণ্ডেই মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মাইকেল চাকমার নাম উঠে আসে এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।

‘গুম নাটক’ ও পুনরায় আত্মপ্রকাশ

২০১৯ সালে হঠাৎ নিখোঁজ হন মাইকেল চাকমা। ইউপিডিএফ ও তাঁর পরিবার দাবি করে, সরকার তাঁকে ‘গুম’ করেছে। কিন্তু একাধিক সূত্র জানায়, তিনি প্রকৃতপক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতেই ছিলেন এবং পরবর্তীতে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান।

২০২৪ সালে সরকারের পরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই তিনি আবার প্রকাশ্যে আসেন। এরপর নিজেকে ‘গুমের শিকার’ ও ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভিকটিম’ হিসেবে উপস্থাপন করে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু এর আড়ালে পাহাড়ে ফের সক্রিয় করেন তাঁর পুরোনো নেটওয়ার্ক—যার মাধ্যমে শুরু হয় নতুন করে অস্থিতিশীলতা, বিভাজন ও সশস্ত্র সহিংসতার পরিকল্পনা।

১১টি মামলা, আরও রয়েছে তদন্তাধীন অভিযোগ

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মাইকেল চাকমার বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত ১১টি নিশ্চিত মামলা। তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, প্রকৃত সংখ্যা ২০টিরও বেশি। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে হত্যা, অস্ত্র চোরাচালান, চাঁদাবাজি ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগ।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, শান্তিচুক্তির দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও যদি পাহাড়ে চাঁদাবাজি, অস্ত্র ব্যবসা ও অভ্যন্তরীণ হত্যাকাণ্ড বন্ধ না হয়, তবে তা শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়—পুরো দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।

তাঁদের মতে, “গুম নাটক” সাজিয়ে সহানুভূতি আদায় করে পুনরায় সহিংস রাজনীতিতে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় না আনলে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি কখনোই সম্ভব নয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও উন্নয়ন টিকিয়ে রাখতে হলে মাইকেল চাকমার নেতৃত্বে পরিচালিত এই সন্ত্রাসী রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।