রোহিঙ্গা সুরক্ষা চায় আন্তর্জাতিক আদালত, সীমান্তে কঠোর অবস্থানে বিজিপি

নিউজ ডেস্ক
২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে নিজ দেশের সেনাবাহিনীর ব্যাপক অত্যাচারের মুখে সীমান্ত ফেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের স্বসম্মানে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো ও রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার দাবি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ জানুয়ারি রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালত কর্তৃক নির্দেশনা প্রদানের পর এবার বাংলাদেশ লাগোয়া নিজেদের সীমান্তে ব্যাপক কঠোর অবস্থান নিয়েছে সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা। নিরাপত্তা ব্যবস্থার অজুহাতে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার পাশে বিপুল পরিমান সেনা উপস্থিতি, বাঙ্কার নির্মান ও ভারী অস্ত্রের উপস্থিতি ও কয়েকশ নিরাপত্তা চৌকি এরই মধ্যে নানা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাস করা স্থানীয় বাংলাদেশীদের জন্য। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িস্থ তুমব্রু সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় দেখা গেছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।
তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দাবি করেছে, মিয়ানমার সীমান্তে তাদের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশীদের আতঙ্কের কিছু নেই, সার্বক্ষণিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে বিজিবি। পাশাপাশি সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতও রয়েছে তারা।
সূত্র মতে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু-ভাজাবনিয়া, মগপাড়া, বাইশফাঁড়ি সীমান্তের ওপারে বিশাল এলাকা জুড়ে অসংখ্য বাঙ্কার এবং নিরাপত্তার নামে চৌকি স্থাপন করেছে মিয়ানমার। সীমান্তের মাত্র দেড় শত গজের মধ্যে উন্নত প্রযুক্তির ভারী অস্ত্র বাংলাদেশের দিকে তাক করে বসানো হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতে মাঝে মাঝে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এছাড়া ভারী যুদ্ধযান নিয়ে প্রতিনিয়ত সীমান্তে যাতায়াত করছে মিয়ানমার বিজিপি ও সেনা সদস্যরা।
মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করা রোহিঙ্গারা জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল থেকে ৭টি ট্রাকে করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা তুমব্রু সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছে। সীমান্তের বেড়া বরাবর বাঙ্কার গুলোতেও অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমার সেনারা। সেনাদের সঙ্গে তাদের সীমান্ত রক্ষী পুলিশ (বিজিপি) সদস্যরাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
হঠাৎ করে সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনীর এমন জেগে উঠা নিয়ে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্ণেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ জানান, তুমব্রু সীমান্তে ৩৪ নং পিলার থেকে ৩৯নং পিলার পর্যন্ত বিশাল সীমান্ত এলাকা জুড়ে মিয়ানমারের বিজিপির সদস্যরা বাঙ্কার খনন এবং চৌকি স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, গত ২৩ জানুয়ারী নেদারল্যাডন্সের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (আইসিজে)র রায়ের পর থেকে মিয়ানমার বর্ডার গাড অব পুলিশ (বিজিপি) বাঙ্কার এবং চৌকি স্থাপন করেছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবিও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এর আগে, গত ২৩ জানুয়ারী আইসিজে তাদের রায়ে বলেছে, রাখাইনে এখন যে রোহিঙ্গারা আছেন, তাদেরকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য মিয়ানমারকে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেইসঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কিংবা অন্য যেকোন নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যেন কোন গণহত্যায় না জড়ায়, উষ্কানি না দেয়, কিংবা নির্যাতনের চেষ্টা না করে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য মিয়ানমারের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আগামি চার মাসের মধ্যে একটি রিপোর্ট আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। এরপর এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রতি ছয় মাস পর পর আদালতকে জানাতে হবে মিয়ানমারের পদক্ষেপগুলো।
প্রসঙ্গত, নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার অজুহাতে ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে সীমান্ত অতিক্রম করে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। আর কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের অবস্থান করা শিবিরটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।