রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে স্থায়ী আবাসন: স্থানীয় পর্যায়ে অস্থিরতা ও পরিবেশঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা

রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে স্থায়ী আবাসন: স্থানীয় পর্যায়ে অস্থিরতা ও পরিবেশঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা

রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে স্থায়ী আবাসন: স্থানীয় পর্যায়ে অস্থিরতা ও পরিবেশঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে স্থায়ী আবাসন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ জানাজানি হতেই কক্সবাজারের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জনগণ জানান, দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, কর্মসংস্থানে প্রতিযোগিতা এবং পরিবেশগত ক্ষতির কারণে তারা নানামুখী সমস্যার মুখে রয়েছেন। এর মধ্যে নতুন করে স্থায়ী আবাসনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে এই সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন সবাই।

স্থানীয়দের অভিযোগ—রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করলেও এর সুবিধা স্থানীয় কমিউনিটি প্রত্যাশিতভাবে পাচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি, চাপ পড়ছে স্থানীয় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। তাদের দাবি, রোহিঙ্গাদের জন্য যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো তৈরির আগে অবশ্যই স্থানীয় জনগণের মতামত ও স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে কৃষক, শ্রমজীবী, ছাত্র—সবাই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। অনেকেই বলেন, পাহাড় ও বনভূমি দখল হয়ে যাওয়ার ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কৃষিজমিও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে স্থায়ী আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিবেশগত চাপ আরও বাড়বে।

উখিয়া নিউজ ডটকমের সম্পাদক ওবায়দুল হক আবু চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগটি সরকারের এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তিনি আরও মনে করেন, এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় জনজীবন, নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

উখিয়া অনলাইন প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক ও আইনজীবী জসিম আজাদ বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী বা আধা-স্থায়ী কাঠামো নির্মাণের যে চেষ্টা চলছে, তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের সরাসরি হুমকি। আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি- স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে স্থানীয় মানুষকে সংখ্যালঘু করার কোনো অপচেষ্টা বরদাশত করা হবে না।

বাংলাদেশ মানবিকতা দেখিয়েছিল—কিন্তু সেই সুযোগ নিয়ে যদি কেউ স্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তাহলে তা শক্ত হাতে বন্ধ করা হবে। রোহিঙ্গাদের একমাত্র জায়গা মিয়ানমার, এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসন ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মুহাম্মদ হোসাইন বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপদ ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার তাদের আছে। তবে এখানে স্থায়ী আবাসন নির্মাণে দুইটা দিক হতে পারে ইতিবাচক-নেতিবাচক। কিন্ত অন্তরালে যেন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এমন দুরভিসন্ধিমূলক কোন ষড়যন্ত্র না থাকে। বিশেষ করে এটি যদি হয় অনেকাংশে তাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা চাই রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা হোক।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী মনে করেন—রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলার কোনো প্রয়োজন নেই; বরং তাদের স্ব-সম্মান বজায় রেখে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোই সরকারের দায়িত্ব এবং এটাই হওয়া উচিত রাষ্ট্রের প্রধান অগ্রাধিকার।

এদিকে রোহিঙ্গা নেতারাও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা কোনো স্থায়ী অবকাঠামো চান না; তারাও প্রত্যাবাসনকেই একমাত্র সমাধান মনে করেন। তাই স্থায়ী কাঠামো নির্মাণের যে প্রক্রিয়া চলছে, তা স্থানীয় জনগণ যেমন প্রত্যাখ্যান করছে, রোহিঙ্গারাও তেমনি এর ঘোর বিরোধিতা করছে—যা প্রমাণ করে এ উদ্যোগ পুরোপুরি অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য।

স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করেছেন, সরকার ও প্রশাসন তাদের উদ্বেগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে এবং এলাকায় স্থায়ী শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *