পাহাড়ে আবারও অস্থিরতা সৃষ্টির নতুন নীলনকশা: ইউপিডিএফের নতুন মুখোশ ‘পিসিএসএফ’

পাহাড়ে আবারও অস্থিরতা সৃষ্টির নতুন নীলনকশা: ইউপিডিএফের নতুন মুখোশ ‘পিসিএসএফ’

পাহাড়ে আবারও অস্থিরতা সৃষ্টির নতুন নীলনকশা: ইউপিডিএফের নতুন মুখোশ ‘পিসিএসএফ’
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতীয় নির্বাচনের আগে আবারও অস্থিতিশীলতা তৈরির লক্ষ্যে নড়েচড়ে বসেছে ভারতের মদদপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ইউপিডিএফ। সাম্প্রতিক বাঙালি–পাহাড়ি দাঙ্গার পর নিজেদের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া সমালোচনা এড়াতে তারা এবার নতুন পরিচয়ে মাঠে নামছে— ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সংহতি ফ্রন্ট (পিসিএসএফ)’ নামে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে, নতুন এই প্ল্যাটফর্মটি আসলে ইউপিডিএফের পুরোনো তৎপরতারই নতুন আবরণ।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ভাষায়, ইউপিডিএফ যখনই চাপের মুখে পড়ে, তখন তারা নতুন নামে একটি সংগঠন দাঁড় করায়—উদ্দেশ্য শুধু একটাই: দায় এড়ানো, বিভ্রান্তি তৈরি করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর অন্যদিকে সরানো। ঠিক সেই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চুক্তির বর্ষপূর্তির দিনে ২ ডিসেম্বর, এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে ‘পিসিএসএফ’।

নতুন এই কাঠামোর নেতৃত্বে রয়েছেন বিদেশে অবস্থানরত কয়েকজন বিতর্কিত নেতা—সুইজারল্যান্ডে সঞ্চয় চাকমা, কানাডায় প্রজ্ঞা তাপস চাকমা, যুক্তরাষ্ট্রে প্যারিস চাকমা এবং দিল্লিতে ইউপিডিএফের সাবেক নেতা সুহাস মিত্র চাকমা। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, এরা সবাই দীর্ঘদিন ধরে ইউপিডিএফের প্রচারণা, তহবিল ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। খাগড়াছড়ির রামসুবাজারে গত ২৮ সেপ্টেম্বরের বাঙালি–পাহাড়ি সংঘর্ষ উস্কে দেওয়ার পেছনেও ছিল তাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা।

পুলিশের তিন পার্বত্য জেলার শীর্ষ কর্মকর্তারা—খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ, রাঙামাটির পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব এবং বান্দরবানের পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, নতুন ব্যানারের যেকোনো সংগঠনকে ঘিরে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছেন। তাদের ভাষায়, “নাম বদলালেই চরিত্র বদলায় না। মাঠের কর্মীরা একই, তাই নজরদারিও একই মাত্রায় জোরদার।”

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বাজার–ঘাট, পরিবহন, বালু–পাথর ব্যবসা, গ্রামভিত্তিক কমান্ড নিয়োগ; সব জায়গায় নতুন ব্যানারের চাঁদাবাজ দলের সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় সাম্প্রতিক দাঙ্গার সূত্রপাত, সেই এলাকাগুলোতেই পিসিএসএফের পোস্টার, লিফলেট ও মাইকিং হঠাৎ বেড়ে গেছে। গোয়েন্দাদের ভাষায় এটি “পোস্ট–দাঙ্গা কাউন্টার স্ট্র্যাটেজি”—মূল উদ্দেশ্য নিজেদের পরিচয় আড়াল করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা।

পশ্চিমা এনজিও ও বিদেশি অর্থায়নের অভিযোগ

সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের দাবি, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমা কিছু এনজিও, বিদেশে থাকা কিছু চাকমা নেতা এবং ইউপিডিএফ–জেএসএস–ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠী যৌথভাবে নতুন নামের এই সংগঠন দাঁড় করিয়েছে। ভারতসহ বিদেশ থেকে মোটা অংকের অর্থও আসছে নতুন এই সংগঠনের জন্য—যা গোয়েন্দা নজরদারিতে নিশ্চিত হয়েছে।

ঢাকায় গঠিত পিসিএসএফের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের তালিকায় রয়েছে মনিময় চাকমা, সুজাত চাকমা, প্রিতম চাকমা, পরান ধন চাকমা, সুশীল চাকমা, সুনেন্দু চাকমা, নাইসা চাকমা, অর্জন তংচংগ্যা ও পিন্টু চাকমার নাম। নতুন নামের এই প্ল্যাটফর্ম নিজেদের দাবি করছে “গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমতাভিত্তিক আন্দোলন।” কিন্তু অতীত তাদের সম্পর্কে অন্য কথাই বলে।

পার্বত্য চুক্তির অসম্পূর্ণ বাস্তবায়ন, ভূমি অধিকার, সাংস্কৃতিক সংকট—এসব ইস্যু সামনে এনে তারা পাহাড়ের জনগণকে আবারও উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে গোয়েন্দারা।

নতুন নামে পুরোনো খেলা?

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউপিডিএফ ও জেএসএস বহু বছর ধরে পাহাড়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করেছে। রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকার কারণে তারা এখন পাহাড়ে কোণঠাসা। ফলে নতুন নামের ব্যানার তুলে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

সূত্রগুলো বলছে, ইউপিডিএফ যখন কার্যত “নিষিদ্ধ–সদৃশ” অবস্থায়, তখন পিসিএসএফকে সামনে রেখে তারা নিজেদের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করছে। বিশেষ করে রাঙামাটিকে টার্গেট করে তৎপরতা শুরু করেছে তারা।

প্রাপ্ত তথ্য–উপাত্ত এবং মাঠের বাস্তবতা মিলিয়ে দেখা যায়—পিসিএসএফের জন্ম কোনো আদর্শিক রাজনৈতিক বিবর্তন নয়, বরং পুরোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতারই নতুন রূপ। ইশতেহার, স্লোগান, দাবি—সবই অতীতে ইউপিডিএফ ও জেএসএস ব্যবহার করেছে। নতুন সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের অতীত কর্মকাণ্ডও একে সন্দেহমুক্ত হতে দিচ্ছে না।

পাহাড়ের সাধারণ মানুষের দাবি–দাওয়া বা অধিকার নিয়ে ন্যায্য আন্দোলনের প্রয়োজন থাকলেও, তা কোনোভাবেই বিদেশি অর্থায়ন, বহির্দেশীয় মদদ বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পুনর্গঠনের মাধ্যমে হতে পারে না। বরং এই ধরনের নতুন মুখোশ পাহাড়ের স্থিতিশীলতা ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য আরও বড় হুমকি তৈরি করতে পারে।

উল্লেখ্য, পাহাড়ে বসবাসকারী সাধারণ বাঙ্গালি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণ ইতোমধ্যেই বহু দশক ধরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর দখলদারি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসে ক্লান্ত। নতুন ব্যানারের এই সংগঠনও সেই পুরোনো চক্রের পুনরাবৃত্তি হবে—এমন আশঙ্কাই এখন প্রবল।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed