মানবিক সহায়তা গ্রহনে বাধা পাহাড়িদের: কাউখালীতে সেনাবাহিনীর কর্মসূচি ভণ্ডুলে ইউপিডিএফের কারসাজি

মানবিক সহায়তা গ্রহনে বাধা পাহাড়িদের: কাউখালীতে সেনাবাহিনীর কর্মসূচি ভণ্ডুলে ইউপিডিএফের কারসাজি

মানবিক সহায়তা গ্রহনে বাধা পাহাড়িদের: কাউখালীতে সেনাবাহিনীর কর্মসূচি ভণ্ডুলে ইউপিডিএফের কারসাজি
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলায় শীতের তীব্রতা যখন পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের জীবনযাপনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে, ঠিক সেই সময়ে দুর্গম ও প্রান্তিক এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শীতবস্ত্র বিতরণ, শিক্ষা সহায়তা, ক্রীড়া সামগ্রী ও চিকিৎসাসেবার মতো বহুমাত্রিক মানবিক উদ্যোগ নিয়ে সেনাসদস্যরা পৌঁছান পাহাড়ি জনপদে।

তবে এই মানবিক কার্যক্রমই প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফের কাছে ‘অপরাধে’ পরিণত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

মানবিক সহায়তা গ্রহনে বাধা পাহাড়িদের: কাউখালীতে সেনাবাহিনীর কর্মসূচি ভণ্ডুলে ইউপিডিএফের কারসাজি

জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সেনাবাহিনীর ৩০৫ পদাতিক ব্রিগেড ও রাঙামাটি রিজিয়নের সদর জোনের উদ্যোগে কাউখালী উপজেলার পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও তালুকদার পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শীতবস্ত্র, শিক্ষা উপকরণ ও ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণের আয়োজন করা হয়। লক্ষাধিক টাকার সহায়তা নিয়ে এই কর্মসূচিতে সকাল ৯টার দিকে উপস্থিত হন রাঙামাটি সদর জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ একরামুল রাহাত, মেজর মিনহাজুল আবেদীন, কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিকুর রহমান, কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল খালেক, ৩নং ঘাগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।

তবে আয়োজকরা অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে দেখেন সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। মাঠ ফাঁকা, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই, স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষজনও কেউ আসেননি। শীতবস্ত্র ও শিক্ষা সহায়তা নিতে আসার কথা থাকলেও পুরো এলাকা ছিল শুনশান নীরব।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গত ৪৮ ঘণ্টায় পানছড়ি, শুকনাছড়ি, উল্টোপাড়া, রাঙ্গীপাড়া ও তালুকদার পাড়ায় ইউপিডিএফ বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিকল্পিতভাবে স্থানীয়দের পাহাড়িদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে। ইউপিডিএফের কাউখালী ইউনিটের পরিচালক রিপন চাকমা, সহকারী পরিচালক নিলয় চাকমা, সাব-পোস্ট পরিচালক তারেক মারমা, রাজু মারমা ও অমিয় চাকমার নেতৃত্বে এলাকায় সেনাবিরোধী অপপ্রচার চালানো হয়। কারবারি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেও সাধারণ মানুষকে অনুষ্ঠানে অংশ না নিতে চাপ দেওয়া হয়।

মানবিক সহায়তা গ্রহনে বাধা পাহাড়িদের: কাউখালীতে সেনাবাহিনীর কর্মসূচি ভণ্ডুলে ইউপিডিএফের কারসাজি

এছাড়া গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি ও সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দিতে পরিকল্পিতভাবে রাতের আধারে রাঙ্গীপাড়া থেকে পানছড়ি সংযোগকারী কাঁচা সড়কে পানি ছেড়ে কর্দমাক্ত করে রাখা হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এতে সড়কটি অতিমাত্রায় পিচ্ছিল ও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে, ফলে জরুরি যানবাহনসহ সাধারণ মানুষের যাতায়াতে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের মতে, এটি নিছক প্রাকৃতিক কারণে নয়, বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি ও নিরাপত্তা বাহিনীসহ প্রশাসনের চলাচল ব্যাহত করার একটি কৌশল, যা এলাকায় আতঙ্ক ও অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলছে।

অভিযোগ রয়েছে, ইউপিডিএফ নেতারা প্রকাশ্যে পাহাড়ি পরিবারগুলোকে হুমকি দেয়—কেউ সেনাবাহিনীর দেওয়া সহায়তা গ্রহণ করলে তাকে তথাকথিত ‘হাংগর মাছ’ দিয়ে শাস্তি দেওয়া হবে এবং প্রতিটি পরিবারকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে। এই ভয়ংকর হুমকির কারণে অসহায় পাহাড়ি পরিবারগুলো শীতবস্ত্র গ্রহণ থেকে বিরত থাকে এবং শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ও ক্রীড়া সামগ্রী থেকেও বঞ্চিত হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাহাড়ি বাসিন্দা বলেন, “আমাদের ঘরে ঘরে অস্ত্র নিয়ে এসে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা সেনাবাহিনীকে ভালোবাসি, কিন্তু প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারি না। অস্ত্রের ভয়ে আমরা বোবা হয়ে গেছি।”

মানবিক সহায়তা গ্রহনে বাধা পাহাড়িদের: কাউখালীতে সেনাবাহিনীর কর্মসূচি ভণ্ডুলে ইউপিডিএফের কারসাজি

একজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সভ্যতার এই যুগে একটি জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে রাখতে এভাবে সন্ত্রাসী কৌশল প্রয়োগ মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। এটি সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘন।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেনাবাহিনী ও অতিথিরা ফিরে যাওয়ার পর ইউপিডিএফ পানছড়ির কয়েকটি পাহাড় থেকে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে আধিপত্য জাহির করে এবং সাব-পোস্ট পরিচালকরা প্রকাশ্যে এলাকায় ঘোরাফেরা করে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে।

প্রসঙ্গত, পাহাড়ে শান্তি, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার পথে বারবার বাধা সৃষ্টি করে ইউপিডিএফ যে প্রান্তিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদেরই জিম্মি করে রাখছে, কাউখালীর এই ঘটনাই তার আরেকটি নির্মম উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed