মিয়ানমারে পুলিশ হেফাজতে আরেকজনের মৃত্যু, মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গুলির নির্দেশ
 
নিউজ ডেস্ক
আরও এক ব্যক্তিকে হেফাজতে নিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে মিয়ানমার সেনার বিরুদ্ধে। মৃত ব্যক্তি অং সান সু চি-র দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।
ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) মুখপাত্র জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশ থানায় নিয়ে গিয়ে তাকে পিটিয়ে মেরেছে।
গত ৯ মার্চ মঙ্গলবার রাত দেড়টা নাগাদ ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ইয়াঙ্গনে একাধিক মিছিল এবং বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন তিনি। সকালে তার মৃতদেহ সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে পৌঁছেছেন। মরদেহ নেয়ার জন্য হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন তারা।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পরে ১৭০০ সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করেছে মিয়ানমারের সেনা। এর মধ্যে এনএলডি-র প্রচুর সদস্য আছেন। অভিযোগ, থানায় আটক ব্যক্তিদের উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। হাসপাতালে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের মারা হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু তার জন্য বিক্ষোভ বন্ধ হচ্ছে না। দেশ জুড়েই বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন আন্দোলনকারীরা। সেনা রাতে কারফিউ ঘোষণা করেছে। সেই কারফিউ ভেঙেই রাস্তায় নেমে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। ইয়াঙ্গনে কারফিউ ভাঙার জন্য ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বহু বিক্ষোভকারীর বাড়িতে তল্লাশি অভিযানও চালানো হচ্ছে। অভিযোগ, বাড়ির লক ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ছে পুলিশ। তল্লাশির নামে বাড়িতে ভাঙচুরও চালানো হচ্ছে। বেশকিছু সংবাদমাধ্যমের দপ্তরেও পুলিশ তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে বলে জানা গেছে। সংবাদ মাধ্যমের লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
এরই মধ্যে এক সন্যাসীর ছবি ভাইরাল হয়েছে। মিয়ানমারের উত্তরাংশে মিটকিনা শহরে ওই সন্ন্যাসীনী সেনা জওয়ানদের সামনে বসে পড়েন। তিনি বলেন, তার প্রাণ নিয়ে নিক সেনা, কিন্তু শয়ে শয়ে আটক ‘সন্তান’দের যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার ফের জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাকে সংযত হওয়ার কথা বলেছে। সু চি-কে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার দাবিও করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত মিয়ানমারের সেনা নিজেদের অবস্থান থেকে সরেনি।
এদিকে, বিক্ষোভকারীদের দমন করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর আচরণ গণমাধ্যমে আসতে শুরু করেছে। এমন একটি তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন দেশটির এক পুলিশ সদস্য, যিনি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। মিয়ানমার পুলিশের ল্যান্স কর্পোরাল থা পেং জানিয়েছেন, মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গুলি করো- এমন নির্দেশ পেয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। কয়েকবার সেই নির্দেশ অমান্য করার পর তিনি পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন থা পেং। বলেছেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খামপাত শহরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাবমেশিনগান থেকে গুলি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেদিন তিনি নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেন। তার ভাষায়, পরের দিন একজন অফিসার আমাকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, তুমি কি গুলি করতে পারবে? ২৭ বছর বয়সী এই ল্যান্স কর্পোরাল এমন নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর পুলিশ বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন।
১ মার্চ বাড়ি ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে ভারতের উদ্দেশে পা বাড়ান। তিন দিন সফরে করেন, বিশেষ করে রাতে, যাতে কেউ তাকে ধরতে না পারে। এরপর ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন। মঙ্গলবার তিনি রয়টার্সকে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এছাড়া আমার সামনে কোনও বিকল্প ছিল না। এ সময় তিনি নিজের নামের অংশবিশেষ শুধু জানিয়েছেন নিরাপত্তার জন্য। এ সময় তিনি পুলিশে চাকরি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন করেছেন নিজের নামকে প্রতিষ্ঠিত করতে।
থা পেং বলেছেন, তার সঙ্গে ২৭ ফেব্রুয়ারি আরও ৬ জন সহকর্মী ঊর্ধ্বতন এক অফিসারের নির্দেশ অমান্য করেন। তবে বাকিদের নাম জানাননি তিনি। তবে তার সব দাবি যাচাই বাছাই করা যায়নি।
এর আগে ১ মার্চ মিজোরামে আরেক মিয়ানমারের ল্যান্স কর্পোরাল ও তিন কনস্টেবল একই রকম বক্তব্য দিয়েছিলেন। তারাও পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের বিষয়ে মিজোরাম পুলিশ লিখিত তথ্য সন্নিবেশ করেছে। এতে ওই চার ব্যক্তির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং তারা কেন পালিয়ে ভারতে গিয়েছেন তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এতে মিজোরাম পুলিশকে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় ওই চারজন বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অভ্যুত্থান বিরোধীদের ওপর গুলি করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আমাদের। গণঅসহযোগ আন্দোলন যখন জোরালো হয়ে উঠেছে, সেখানে আমরা নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে, যারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করতেন, তাদের ওপর গুলি করতে পারি না।
