ভারতে মুসলমানদের গণহত্যার ডাক দেওয়া হিন্দু নেতা নারী নির্যাতনের দায়ে গ্রেফতার - Southeast Asia Journal

ভারতে মুসলমানদের গণহত্যার ডাক দেওয়া হিন্দু নেতা নারী নির্যাতনের দায়ে গ্রেফতার

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

গত মাসে ভারতে মুসলমানদের গণহত্যার ডাক দেওয়া এক হিন্দু নেতাকে সংখ্যালঘু ধর্মের নারীদের সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।

একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, যাতি নরসিংহানন্দকে ‘নারীদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে, এই মুহ‚র্তে হরিদ্বার ঘৃণামূলক বক্তব্যের মামলায় নয়’।

নরসিংহানন্দকে অবশ্য বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের মামলায় নোটিশ জারি করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘তাকে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের মামলায়ও রিমান্ডে নেওয়া হবে, প্রক্রিয়া চলছে। রিমান্ড আবেদনে আমরা হেট স্পিচ মামলার বিবরণও অন্তর্ভুক্ত করব।

উত্তরাখন্ডের হরিদ্বারে গত মাসে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালীন বেশ কয়েকজন হিন্দু নেতা মুসলমানদের সম্পর্কে উত্তেজক মন্তব্য করেছিলেন। দেশের মুসলিম স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠান থেকে কমপক্ষে ১০ জন ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।

মি. নরসিংহানন্দের আগে, জিতেন্দ্র নারায়ণ সিং ত্যাগী প্রথম ব্যক্তি যিনি বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের মামলায় গ্রেফতার হন। ১৩ জানুয়ারি তাকে উত্তরাখন্ড পুলিশ আটক করে। মি. নারায়ণ হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তার নাম ছিল ওয়াসিম রিজভি এবং তিনি ছিলেন শিয়া মতাবলম্বীদের নেতা। মি. নরসিংহানন্দ জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের (এনসিআর) গাজিয়াবাদের দাসনা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত।

১৭ থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ভিডিও ক্লিপ, যেখানে মি. নরসিংহানন্দসহ বেশ কয়েকজন নেতা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছিলেন, ভারতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। অনুষ্ঠানটি ইউটিউবে লাইভ-স্ট্রিম করা হয়েছিল এবং বেশিরভাগ পুরোহিতকে ভারতের মুসলমানদের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী কথা বলতে শোনা যায়।

প্রবোধানন্দ গিরি নামে পরিচিত একজন ধর্মীয় নেতা ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত একটি ক্লিপে বলেছিলেন: ‘আপনাকে হয় মরতে বা হত্যা করতে প্রস্তুত থাকতে হবে, অন্য কোনো বিকল্প নেই’।

তিনি আরো বলেছিলেন: ‘মিয়ানমারের মতো, আমাদের পুলিশ, আমাদের রাজনীতিবিদ, আমাদের সেনাবাহিনী এবং প্রতিটি হিন্দুকে অবশ্যই অস্ত্র তুলে নিতে হবে এবং একটি নিরাপদ অভিযান পরিচালনা করতে হবে (জাতিগত নির্মূলের উল্লেখ)। এছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই’।

সুপ্রিম কোর্ট গত সপ্তাহে উত্তরাখন্ড সরকারকে একটি নোটিশ জারি করে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে করা ঘৃণাত্মক বক্তৃতার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। এর আগে যখন মি. ত্যাগীকে গ্রেফতার করা হয়, মি. নরসিংহানন্দ পুলিশকে হুমকি দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন ‘তোমরা সবাই মারা যাবে’।

ইভেন্টে অন্য একজন বক্তা, সাধ্বী অন্নপূর্ণা যিনি অতি-ডানপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠী হিন্দু মহাসভার সাধারণ সম্পাদকও, তিনি মুসলমানদের হত্যার আহ্বান জানিয়েছেন।

ভিডিওটিতে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘অস্ত্র ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। আপনি যদি তাদের জনসংখ্যা দূর করতে চান তবে তাদের হত্যা করুন। হত্যার জন্য প্রস্তুত থাকুন এবং জেলে যেতে প্রস্তুত থাকুন। এমনকি যদি আমাদের মধ্যে ১০০ জন তাদের (মুসলিম) ২০ লাখকে হত্যা করতে প্রস্তুত হয়, তবে আমরা বিজয়ী হব এবং জেলে যাব’।
‘{নাথুরাম] গডসের মতো (যে ব্যক্তি মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল), আমি অপমানিত হতে প্রস্তুত, কিন্তু আমি আমার ধর্মের জন্য হুমকিস্বরূপ এমন প্রতিটি রাক্ষস থেকে আমার হিন্দুত্বকে রক্ষা করার জন্য অস্ত্র তুলে নেব’, -তিনি বলেছিলেন।

ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্য অশ্বিনী উপাধ্যায় এবং বিজেপি মহিলা মোর্চা নেত্রী উদিতা ত্যাগীও উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাক্টিভিস্ট, আইনজীবী, ছাত্র, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক প্রধান এবং বিচারক এমনকি টেনিস কিংবদন্তি মার্টিনা নাভরাতিলোভা নেতাদের ঘৃণ্য বক্তৃতা এবং দুর্ব্যবহারের নিন্দা করেছিলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজকরা দাবি করেছেন যে, তারা কোনো ভুল করেননি।

You may have missed