প্রসঙ্গ: পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৪টি গুরুত্বপূর্ন জাতীয় পদের গুরুত্ব - Southeast Asia Journal

প্রসঙ্গ: পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৪টি গুরুত্বপূর্ন জাতীয় পদের গুরুত্ব

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

 

খগেশ্বর ত্রিপুরা:

সবুজ পাহাড় ঘেরা পার্বত্য চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের দক্ষিন পূর্ব অঞ্চলের প্রাচীন একটি জেলা। এই জেলার আয়তন ৫,১৩৮ বর্গমাইল যা সমগ্র বাংলাদেশের এক দশমাংশ নিয়ে গঠিত। বর্তমানে এই জেলার ৩টি মহকুমাকে ৩টি জেলায় উন্নীত করা হয়েছে। যেমনি অপরাপর জেলার মহকুমাকেও জেলায় উন্নীত করা হয়েছিল। এইভাবে দেশের সকল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে ৬৪ জেলায় রুপান্তর করে উন্নয়ন ও প্রশাসনিক ভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে। তারই অংশ হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩টি মহকুমাকে রুপান্তরিত করা হয়েছে,

ক. রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা,
খ. খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা,
গ. বান্দরবান পার্বত্য জেলা।

এই তিন পার্বত্য জেলায় বাঙ্গালীদের মধ্যে হিন্দু, মুসলিম, বড়ুয়া এবং পাহাড়ীদের মধ্যে ত্রিপুরা, চাকমা, মারমা, ম্রো, তঞ্চঙ্গা, লুসাই, বম, পাংখোয়া, খিয়াং, চাক, খুমি, গোর্খাসহ অল্পকিছু সাঁওতাল ও গারো জনগোষ্ঠীর লোক বসবাস করে। তাদের মধ্যে চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরা জাতিস্বত্তার লোকদের মধ্যে বান্দরবানে মারমা, রাঙ্গামাটিতে চাকমা এবং খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোক বেশীর ভাগ বসবাস করে। অর্থাৎ তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষ সবচেয়ে বেশী খাগড়াছড়িতে। পাশাপাশি বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতেও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার। তবে তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলাতেও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোক বস বাস করে। এই জনগোষ্ঠীর লোক সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের প্রতি, রাষ্ট্র, সরকার ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও যত্নবান। গত (একাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ত্রিপুরা এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ভোটার সংখ্যা নিম্নরুপ:-

ক. বাঙ্গালী ভোটার: ১৯২০০০
খ. চাকমা ভোটার: ১৩৯০০০
গ. ত্রিপুরা ভোটার: ৬৫০০০
ঘ. মারমা ভোটার: ৪৫০০০

এই ভোটার সংখ্যা তারতম্য হতে পারে, কারণ পৃথিবীর সবকিছু পরিবর্তনশীল। বিবর্তনবাদ তত্ত্বানুসারে সবকিছু আকস্মিকভাবে সৃষ্টি হয়নি। সব কিছু ক্রমবিকাশ হয়ে বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে। এই পরিবর্তন অবিরাম এবং নিরন্তর যা কোনদিন থামবে না। এই পরিবর্তন কিছু প্রাকৃতিগতভাবে ও কিছু মনুষ্যগতভাবে সংগঠিত হয়ে থাকে। প্রাকৃতিগতভাবে যেগুলো বিবর্তন ঘটে সেগুলো তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ নেতিবাচক পরিবর্তনগুলো রোধ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তবে সেই প্রক্রিয়াটি অতি সহজ বিষয় নয়। অপরদিকে প্রাকৃতিকগতভাবে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি, অগ্নুৎপাত, জলোচ্ছাস, সুনামি, বন্যা রোধ করা সম্ভব নয়। প্রাকৃতিগতভাবে এই সকল প্রাকৃতিক দূর্ঘটনাকে কেউ কেউ ঈশ্বরের আক্রোশ হিসাবেও আখ্যা দিয়ে থাকেন। যেমন ১৯৩৬ সালে ভারতের বিহারে ভূমিকম্পের কারণে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ মারা গেলে অহিংস বানীর প্রবর্তক মহাত্না গান্ধী এই দূর্ঘটনাকে ঈশ্বরের আক্রোশ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর সেটিকে অবশ্যই প্রাকৃতিক দূর্যোগ ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে বৈজ্ঞানিক মতবাদ দিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ বিচ্ছিন, বিক্ষিপ্তভাবে কাজ না করে সুশৃঙ্খল ভাবে ঐক্যৈবদ্ধ হয়ে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করার মাধ্যমে মেধা, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতাকে প্রয়োজনে আরো পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে শিখন, প্রশিক্ষন, গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করে উন্নয়ন ও উন্নতির দিকে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে যাওয়ার পরম সূত্র হচ্ছে রাষ্ট্র গঠনের মধ্যে দিয়ে সরকার নামক রাষ্ট্র যন্ত্রের মাধ্যমে। জীবের পরমাত্নার ন্যায় উন্নয়নের ক্ষেত্রে “রাষ্ট্র” হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রের পরমাত্না।

আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ব্যক্তিকে নিয়ে পরিবার, সমাজ, দেশ জাতির সৃষ্টি হয়। ব্যক্তি শিক্ষিত হলে, এগিয়ে গেলে, পরিবার শিক্ষিত হয়। পরিবার শিক্ষিত হলে সমাজ শিক্ষিত হবে। সমাজ শিক্ষিত হলে দেশ জাতি শিক্ষিত হবে, এগিয়ে যাবে, উন্নতি হবে। ব্যক্তিকে শিক্ষিত করার জন্য রাষ্ট্র কিন্তু তার শাসন কাঠামো বা রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে প্রযোজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহন করে থাকে। যদি উদাহরণ দিয়ে বলি তাহলে বলতে হয় জগৎ যেমন জীবনকে নিয়ে আবর্তিত থাকে ঠিক তেমনি রাষ্ট্রও মানুষের জীবনের কল্যাণ ও অগ্রগতি নিয়ে আবর্তিত। মানুষের জীবনের কল্যাণ ও অগ্রগতি সাধন করাই রাষ্ট্রের প্রকৃত কার্যাবলী অর্ন্তনিহিত। এই জন্য দার্শনিক প্লেটো বলেছেন, রাষ্ট্রের কাছে সাধারণ ব্যক্তি ব্যক্তিত্ত্বহীন,কারণ ব্যক্তির মঙ্গল, অমঙ্গল, ন্যায়,অন্যায় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হতে হয় এবং রাষ্ট্রকে প্রধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হয়। রাষ্ট্র সার্বভৌমত্ব রক্ষা কল্পে সংবিধান রচনা করে মূলনীতি তৈরির মাধ্যমে নাগরিকদের সঠিক কল্যাণ ও মঙ্গলের মধ্যে মানদণ্ড তৈরী করে শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেন। এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সকল নাগরিকের সকল জাতি গোষ্ঠীর সার্থের কথা তথা জনস্বার্থের কথা সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হয়। একজন ডাক্তার যেভাবে রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন ঠিক তেমনি শাসককে অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ অংশের মানুষকে তার শাসন কাঠামোর মধ্যে দিয়ে প্রয়োজনে সংবিধানের আলোকে সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে শাসক তথা রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তি সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হয়। এই জন্যে প্লেটো বলেছেন, দক্ষ শাসক রাষ্ট্রের চিকিৎসক। অর্থাৎ প্লেটো বোঝাতে চেয়েছেন যে রাষ্ট্র যখন আস্থরত্যয় মগ্ন দেশের নানা ধরনের সমস্যা বিরাজমান যেখানে জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয় জনগণের কল্যাণ কাজে বাধাগ্রস্ত সেই ত্রান্তিকালে একজন দক্ষ শাসক দেশে সুশাসন কায়েম করতে সক্ষম হন। আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কারিগর জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের দক্ষ চিকিৎসক। প্লেটোর এই বক্তব্যকে স্বীকার করে দার্শনিক এরিস্টোটলও বলেছেন যে, রাষ্ট্রের বাইরে কারোর অস্তিত্ব নেই কারণ রাষ্ট্রের বাইরে যে বসবাস করতে পারে সে হয়তো দেবতা না হয় পশু।

প্রাচীন গ্রীসে প্রথম প্লেটোর এই তত্ত্বকে অস্বীকার করেছিলেন যার জন্যে গ্রীসে তখন সংকট দেখা দিয়েছিলো, বিপন্ন সৃষ্টি হয়েছিলো। অপরদিকে কৌটিল্য চাণাক্যের অর্থশাস্ত্র গ্রহ্নে ভূমির কর্তৃত্ব এবং এ যুগের রাষ্ট্রের মধ্যে অনেকটা সম্পর্কের বিদ্যমান দেখতে পায়। কারণ কৌটাল্যের এই গ্রহ্নের নাম অর্থশ্বাস্ত্র হলেও মূলত গ্রহ্নটি প্রাচীনকালে রাজতন্ত্রমূলক শাসন ব্যবস্থার বর্ণিত একটি রাজনীতি বিষয়ক গ্রহ্ন। এই গ্রহ্নে কৌটিল্য জন্মলগ্নে মানবজাতির প্রধান কাম্য অর্থ বা সম্পদের আধার হিসেবে ভূমির অর্জন এবং পালনকে বোঝাতে চেয়েছেন। এখানে ভূমি ও রাষ্ট্রের আধার কিন্তু একটি বিষয়। ভূমি হলো সাধারণ অর্থে এবং রাষ্ট্র হলো রাজনীতির অর্থে। তবে এই দুটি শব্দের অর্থ একই এবং অভিন্ন।

গণপ্রজাতন্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সার্বিক কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্যে ১৯৯৭ সনে ২ রা ডিসেম্বর তারিখে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করেন। এই চুক্তি সম্পাদনের মধ্যে দিয়ে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ মানুষের সার্বিক কল্যাণের জন্যে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের তথা রাঙামাটি পার্বত্য জেলা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্যে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে দক্ষ চিকিৎসক হিসাবে কাজ করতে থাকেন। রাষ্ট্র যেহেতু এ যুগের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান, সেবাদান,মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, সর্বোপরি সার্বিক কল্যাণ নিয়ে কাজ করেন, সেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ অনগ্রসর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশের মূল সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চুক্তি সম্পাদন করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে তিনি বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে এখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্রনালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি পৃথক পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন এবং ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরনার্থী প্রত্যাবাসন ও পূর্ণবাসন এবং আভ্যন্তরিন উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পূনর্বাসন সংন্ত্রান্ত টাস্কফোর্স গঠন করেন। এই চুক্তি সম্পাদনের আগে এখানে ( পার্বত্য চট্টগ্রামে ) পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, তিন সার্কেল চিফ বলবৎ ছিল। তাছাড়া তিন পার্বত্য জেলায় গণপ্রজাতন্রী বাংলাদেশ সরকারের ৩০০ টি জাতীয় সংসদের তিনটি আসন বিদ্যমান ছিল। সম্প্রতি সংরক্ষিত (মহিলা) আসনের পূর্ণ বিন্যাসের মাধ্যমে কক্সবাজারকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র তিন পার্বত্য জেলায় একটি সংরক্ষিত আসনে সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়। ফলে তিন পার্বত্য জেলায় ১৪ টি গুরুত্বপূর্ণ পদের সৃষ্টি হয়। এই ১৪ টি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

১. পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্রনালয়ের মন্ত্রী।
২. পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান।
৩. ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরনার্থী প্রত্যাবাসন ও পূনর্বাসন এবং আভ্যন্তরিন উদ্বাস্তু নির্দিষ্ট করন ও পূনর্বাসন সংক্রান্ত টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান।
৪. পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান।
৫. রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
৬. বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
৭. খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
৮. ২৯৮ নং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য।
৯. ২৯৯ নং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য।
১০. ৩০০ নং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য।
১১. তিন পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত (মহিলা) আসনের সংসদ সদস্য।
১২. খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ( লক্ষীছড়ি এবং দীঘিনালা উপজেলা ব্যতীত) মং সার্কেল চীফ।
১৩. রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার ( কাপ্তাই ও রাজস্থলি উপজেলা ব্যতীত এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার লক্ষীছড়ি এবং দীঘিনালা উপজেলা সংযুক্ত সহকারে) চাকমা সার্কেল চীফ।
১৪. বান্দরবান পার্বত্য জেলার (রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই ও রাজস্থলি উপজেলা সংযুক্তসহ) বোমাং সার্কেল চীফ।

এই ১৪টি জাতীয় গুরুত্বপূর্ন পদের মধ্যে ল্যান্ড কমিশনের চেয়ারম্যান পদটি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়োগ করার বিধান করা হয়েছে। ফলে বিশেষ যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি ব্যতিরিকে এই পদে অন্য ব্যক্তিকে নিযোগের বা মনোনয়নের সুযোগ নেই। কিন্তু বাকি ১৪টি পদ পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী বাসিন্দাকে নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। যদিও সংসদীয় আসনের ৩টি সংসদ সদস্য পদে রাজনীতি দল কর্তৃক মনোনয়নের বিধান রয়েছে। তাই এই ১৪টি পদ তিন পার্বত্য জেলা তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের অনগ্রসর ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতৃত্ব, উন্নয়নসহ সার্বিক কল্যাণের জন্য অপরিহার্য। নক্ষত্রের আলোতে গ্রহ আলোকিত থাকে বলেই পৃথিবী আলোকিত থাকে, তেমনি সরকারের আলোতেই পার্বত্য চট্টগ্রামের উল্লেখিত ১৪টি পদ আলোকিত থাকে। অপরদিকে পৃথিবী আলোকিত আছে বলেই এই পৃথিবীতে মানুষ এবং অন্যান্য জীবজন্তু-উদ্ভিদ বেঁচে আছে। তেমনি সরকারের আলোতে এই ১৪টি পদ নিরপেক্ষরতার সহিত ভারসাম্য রক্ষা করে স্বচ্ছতার মাধ্যমে করতে পারলেই পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়ন তরান্বিত হবে। তাই তিন পার্বত্য জেলায় এখানকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যাতে কল্যাণ ও অগ্রগতি হয় সেই লক্ষ্য নিয়ে এই ১৪টি গুরুত্বপূর্ন পদ ও পদবী যেগুলো বিভাজন করা যায় সেগুলোর সুষম বন্টন করার মহান দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য রাষ্ট্রের পরিচালক সরকারের। তার পাশাপাশি যিনি বা যাকে এই গুরুত্বপূর্ন পদে অধিষ্ঠিত করা হবে তাকে অবশ্যই সকল জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈষম্যহীন ভাবে ভারসাম্য রক্ষা করে কাজ করতে হবে। কেননা রাষ্ট্রের বাহিরে গিয়ে কারোর যেমনি অস্তিত্ব নেই তেমনি রাষ্ট্রের সহযোগীতা ব্যতীত কারোর নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ নেই। যে নেতৃত্ব সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধনসহ সার্বিক ক্ষেত্রে কল্যাণ সাধন করা। তাছাড়া যেকোন দেশে ও রাষ্ট্রে এখনও সংকীর্ণতা হতে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি তদুপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ হেতুতে এবং অনেক ভাষাভাষি ও ধর্মের অনুসারি হওয়ার কারণে এখানে বৈষম্যর প্রাচীর এখনো যথেষ্ট শক্ত। তবে এটাও সত্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ অনগ্রসর পশ্চাৎপদ বৈষম্য প্রাচীর ভিন্ন ভিন্ন ভাষা, ধর্ম, জাতি গোষ্ঠীর কারণেই অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদতার অন্যতম এই কারণ দূরীভূত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এখানকার দক্ষ চিকিৎসক হিসেবে অবর্তীন হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদন করেছেন এবং চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদনের কারণেই উল্লেখিত ১৪টি গুরুত্বপূর্ন পদের সৃষ্টি। অপরদিকে এই গুরুত্বপূর্ন পদের দ্বায়িত্বপূর্ন ব্যক্তিদেরকে অবশ্যই সংকীর্ণতা পরিহার করে আত্নমুখীতার নীতির বদলে গনমুখী নীতি নিয়ে কাজ করার মানসিকতার মাত্রা বেশী হতে হবে। যেমন মানুষের ধর্ম মনুষত্ব, আগুনের ধর্ম অগ্নিত্ব, পশুর ধর্ম পশুত্ব, তেমনি জনপ্রতিনিধি ও জনকল্যাণ মূলক আলোচিত ১৪টি গুরুত্বপূর্ন পদের ধর্ম হচ্ছে ‘এখানকার অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গল সাধন করা’। “পুষ্প আপনার জন্য ফোটেনা, পরের জন্য নিজের হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফতিত করে”। অনুরুপভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ সালের মধ্যে এদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত , উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের মনোভাব নিয়ে এই ১৪টি প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদেরকে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব দিতে হবে। সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়টি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, কারণ তার ২০৪১ সালের ভিশনকে বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রামকেও উন্নত সমৃদ্ধ করতে হবে। এটি বাদ দিয়ে বাংলাদেশ শতভাগ উন্নতি সমৃদ্ধ হবে না। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম এদেশের অবিচ্ছ্যেদ্য অংশ। অধিকন্তু কোন মানবদেহকে সুষ্ঠু রাখতে হলে ক্ষত স্থানটি যেমনি আগে চিকিৎসা দিয়ে নিরাময় করতে হয় তেমনি দেশের অনগ্রসর অংশকে আগে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার মাধ্যমেই কোন রাষ্ট্রকে এগিয়ে যেতে হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করলেন , নির্দেশ দিলেন কিন্তু বাস্তবায়নের সাথে যারা সম্পৃক্ত জনগুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠানের যারা কর্ণধার তারা যদি গণমুখীতার পরিবর্তে সদা সর্বদা আত্নমুখী হয়ে থাকে, ভারসাম্যের পরিবর্তে বৈষম্যমূলক আচরণ করে থাকে তবে যেকোন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। এখানে উল্লেখ্য যে, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে উল্লেখিত ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দশ ভাষাভাষি এগারোটি ক্ষুদ্র ক্ষুত্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে শুধুমাত্র চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। নিম্নে তার খতিয়ান দেওয়া হলো-

১. পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে মন্ত্রী জনাব বীর বাহাদুর উ শৈ সিং।
২. বান্দরবান পার্বত্য জেলার সংসদ সদস্য জনাব বীর বাহাদুর উ শৈ সিং।
৩. বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব কৈশহ্ল্যা।
৪. বান্দরবান বোমাং সার্কেল চীফ জনাব উ চ প্রু চৌধুরী।
৫. রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব বৃষ কেতু চাকমা।
৬. পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা।
৭. রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য জনাব দিপংকর তালুকদার।
৮. রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা চাকমা সার্কেল চীফ জনাব দেবাশীষ রায়।
৯. খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব কংজরী চেীধুরী।
১০. খাগড়াছড়ি মং সার্কেল চীফ জনাব সাচিংপ্রু চৌধুরী।
১১. খাগড়াছড়ি আসনে সংসদ সদস্য জনাব কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
১২. ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পূনর্বাসন এবং আভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পূনর্বাসন সংক্রান্ত টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান জনাব কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
১৩. পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।
১৪. তিন পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত (মহিলা) আসনের সংসদ সদস্য মিজ বাসন্তী চাকমা।

খগেশ্বর ত্রিপুরা: লেখক ও সদস্য, পার্বত্য জেলা পরিষদ খাগড়াছড়ি।