পাকুয়াখালী ট্রাজেডি: লংগদু ও খাগড়াছড়িতে বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ - Southeast Asia Journal

পাকুয়াখালী ট্রাজেডি: লংগদু ও খাগড়াছড়িতে বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার পাকুয়াখালী গণহত্যার বিচারের দাবিতে পৃথক শোক র‌্যালী, সমাবেশ, দোয়া মোনাজাত ও আলোচনা সভা করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। আজ শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটির লংগদু ও খাগড়াছড়িতে পৃথক ভাবে এ কর্মসূচী পালন করে সংগঠনটির খাগড়াছড়ি জেলা ও লংগদু উপজেলা শাখা।

দিবসটি উপলক্ষ্যে সকালে লংগদু উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে শোক র‌্যালী বের করা হয়। শোক র‌্যালীটি প্রধান সড়ক ঘুরে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন কাঠুরিয়াদের গণকবরের সামনে এসে কবর জিয়ারত ও দোয়া মুনাজাতে মিলিত হয়। দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন গাঁথাছড়া বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের সুপার হাফেজ মাওলানা ফোরকান আহমেদ। পরে উপজেলা পরিষদ মাঠের একপাশে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।

পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস পালন কমিটির আহবায়ক খলিলুর রহমান এর সভাপতিত্বে এবং নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোরশেদা বেগম, ট্রাজেডি দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আলমগীর হোসেন, নাগরিক পরিষদ লংগদু উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবিএস মামুন, লংগদু উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দীন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পারিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি হাবিব আজম। এসময় পাকুয়াখালীতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া পিতা হারা রাকিব হাসানসহ নিহতদের স্বজনরাও বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বলেন, পাকুয়াখালী গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল হত্যাকান্ডের বিচারের দাবী জানিয়ে পাকুয়াখালী গণহত্যায় নিহতদের পরিবারদেরকে পূর্ণবাসন করা, নিহতদের পরিবার থেকে যোগ্যতানুযায়ী চাকরির দেওয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল প্রকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, পার্বত্য বাঙালীদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে সমান সংখ্যক সদস্য নিয়োগ করে ভূমি কমিশন পূর্ণগঠন করার দাবী জানান।

পরে, পাকুয়াখালীতে নিহত ৩৫ কাঠুরিয়ার পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেয় নাগরিক পরিষদ নেতৃবৃন্দ।

এদিকে, একই দাবিতে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের শাপলা চত্বরে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মাসুদের সভাপতিত্বে ও খাগড়াছড়ি জেলার সভাপতি সুমন আহমেদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান ডালিম।

এসময় বিশেষ অতিথি উপস্থিত হিসেবে ছিলেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভানেত্রী সালমা আহমেদ মৌ, পিসিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য এসএম হেলাল, মাটিরাঙ্গা উপজেলা আহবায়ক মো. রবিউল হোসেন, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নয়ন, ছাত্র পরিষদের জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহেল রানা প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন শান্তিবাহিনী নামক সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার ৩৫ নিরীহ বাঙালি কাঠুরিয়াকে বাঘাইছড়ি ও লংগদুর মধ্যবর্তী এলাকা গহীণ অরণ্য পাকুয়াখালী নামক স্থানে মিটিংয়ের নামে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যাকান্ড চালিয়ে জঘন্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। সে সময় ইউনুছ মিয়া নামে এক বাঙালী পালিয়ে আসতে পারায় এত বড় হত্যাকান্ডের খবর জানা সম্ভব হয়েছিল এবং সেই কাঠুরিয়াদের লাশ উদ্ধার করা সক্ষম হয়েছিল। সেই থেকে পার্বত্য বাঙালীরা এই দিনটিকে পাকুয়াখালী হত্যাকান্ড দিবস হিসেবে পালন করে এবং এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে আসছে।