খাগড়াছড়ির নির্বাচনী মাঠে বড় ফ্যাক্টর ইউপিডিএফ
![]()
নিউজ ডেস্ক
পাহাড়ের অন্য দুই জেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে লড়াই সীমাবদ্ধ থাকলেও খাগড়াছড়িতে নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রকাশ্য শামিল হয় পাহাড়িদের সংগঠন ইউপিডিএফ। জয়ী না হলেও তারা জয়ের কাছেই থাকে। এই আসনে বিএনপির অবস্থানও শক্ত। ভোট আছে জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতেরও।
জয়ের ইতিহাস ভারি আওয়ামী লীগের। তবে এবার আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়ন চান। এতে কোন্দল দেখা দেয়ার শঙ্কা করেন তৃণমূলের কর্মীরা। তারা মনে করেন, জোট না থাকলে এই আসনে সামনের নির্বাচনে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হতে পারে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে।
পাহাড়ের রাজনীতিতে রয়েছে এক জটিল সমীকরণ। আর এ সমীকরণের মধ্যেই খাগড়াছড়ি আসনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। সাধারণ হিসেবে নির্বাচনী লড়াই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও খাগড়াছড়িতে তা নয়।
এখানে আঞ্চলিক সংগঠনের প্রভাব প্রবল। পাহাড়ি-বাঙালি বিরোধেরই ইস্যুও কোন কোন ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। ভোটাররা জানান, খাগড়াছড়িতে এবার প্রসিত বিকাশ খিসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রার্থী ঘোষণা না করলেও তারা এরইমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও তাদের কোন নেতা ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি হননি।
খাগড়াছড়ির বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। তিনি পর পর দুই বারের জয়ী। ২০০৮ সালে জিতেছিলেন যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা। মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আছেন তিন পাহাড়ের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমা।
তারা তিনজনসহ এই আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন আরও অন্তত ছয়জন শক্ত প্রার্থী। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য মনে করেন দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। তার মতে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সবাই কাজ করলে প্রার্থী জয়ী হবেন। মনোনয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত মেনে নেবেন সবাই।
তবে, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ওপর এবারও আস্থা রাখতে চাইছে দলটির নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামনের নির্বাচনেও কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে দলের মনোনয়নপত্র দেয়া হবে। এর আগে দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, গত ১৫ বছরের পাহাড়ের উন্নয়ন বঞ্চনা পুষিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাহাড়ের মানুষ এবার আওয়ামী লীগকে ফেরাবে না। আর মনোনয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সবাই নৌকার পক্ষেই কাজ করবে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করেন বড় দল হিসেবে এখানে প্রতিযোগিতা থাকবে। তবে বিভেদ নেই। দল যাকেই মনোনয়ন দেবে তাকে জিতিয়ে আনতে নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, মনোনয়ন দেয়ার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তবে এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ওপরই আমাদের ভরসা। তার কোনো বিকল্প নেই।
২০০১ সালের নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হন বিএনপি প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া। গত নির্বাচনে মামলায় সাজার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় তার ভাইয়ের ছেলেকে প্রার্থী করা হয়। এবারও ওয়াদুদ ভূঁইয়া প্রার্থী। তবে তার দলে একজন পাহাড়িসহ আরও দু’জন প্রার্থী আছেন।
খাগড়াছড়ি আসনে বিএনপি এখন অনেকটাই সুসংগঠিত। কয়েকদিন আগেও প্রকাশ্য ছোটখাটো গ্রুপিং দেখা গেলেও ইদানীং তা নেই। ওয়াদুদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বিএনপি এখন গোছানো দল। এমনকি আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে তারা। ওয়াদুদ বলেন, তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি আছে।
খাগড়াছড়িতে জাতীয় পার্টির অবস্থান তেমন সুসংহত না হলেও নির্বাচনে বরাবরই প্রার্থী দেয় তারা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হয়ে হেরেছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ। সুযোগ পেলেই সোলায়মান শেঠ খাগড়াছড়ি ছুটে আসেন।
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ভোটারের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ইউপিডিএফ নির্বাচনে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। দূরবর্তী ও দুর্গম এলাকায় বিপুল ভোটার থাকলেও সেসব স্থানে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির প্রভাব কম। ফলে ভোটের ব্যবধান গড়ে দেবে দুর্গম পাহাড়ি-অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনটির এক নেতা বলেন, দলের যেহেতু নিবন্ধন নেই, সে ক্ষেত্রে আমরা স্বতন্ত্র নির্বাচন করব। পাহাড়িদের অধিকারের কথা বলার জন্য, সংসদে যাওয়ার জন্য আমরা নির্বাচন করব। তবে এখনো আমরা প্রার্থী চূড়ান্ত করিনি। সমর্থন পেতে পারে অন্যান্য পাহাড়ি সংগঠন ও দল থেকেও।
এ ছাড়াও খাগড়াছড়িতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), জাসদ (ইনু), ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী ফ্রন্ট, জাকের পার্টি এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তাদের তেসন কোন ভোট ব্যাংক নেই খাগড়াছড়িতে।