আঞ্চলিক দলের বাধায় কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার সিদ্ধান্তে অনড় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা

আঞ্চলিক দলের বাধায় কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার সিদ্ধান্তে অনড় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা

আঞ্চলিক দলের বাধায় কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার সিদ্ধান্তে অনড় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

কঠিন চীবর দান, বৌদ্ধ ধর্মের একটি ধর্মীয় আচার ও উৎসব, যা সাধারণত বাংলা চন্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী প্রবারণা পূর্ণিমা (শারদ পূর্ণিমা বা আশ্বিন মাস মাসের পূর্ণিমা) পালনের এক মাসের মধ্যে যেকোনো সুবিধাজনক সময়ে পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে মূলত বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে ত্রি-চীবর নামে বিশেষ পোশাক দান করা হয়। ধর্মাবলম্বীগণ পূণ্যের আশায় প্রতি বছর এভাবে চীবরসহ ভিক্ষুদের অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রীও দান করে থাকেন। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ ও ছেলেমেয়েরা অংশ গ্রহণ করে। এসময় মেলার মত হরেকরকমের দোকান বসে। তিন পার্বত্য জেলার চাকমা ও তংচঙ্গ্যা সম্প্রদায় এতে অংশ গ্রহণ করে। তবে পাহাড়ি বাঙালি মিলে এই কঠিন চীবন দান উদযাপন এক উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।

প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও কঠিন চীবর দান উদযাপন করার কথা কিন্তু সাম্প্রতিক খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টি হয়। এই দাঙ্গা একটি আঞ্চলিক দল উস্কানি দিয়ে সৃষ্টি করে৷ দাঙ্গায় পাহাড়ি বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের ৬ জন নিহত হয়, আহত হন অনেকেই। এরপর থেকে নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে পাহাড়ে এবছর কঠিন চীবর দান উদযাপন বন্ধ রাখতে শুরু থেকে আঞ্চলিক দলগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালায়৷ কঠিন চীবর দান উদযাপন বন্ধ রাখতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আঞ্চলিক দলগুলো বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদর্শন করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে অজুহাত দেখানো হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় এবছর রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কঠিন চীবরদান উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ। রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে রাঙামাটি জেলা শহরের মৈত্রী বৌদ্ধ বিহারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের।

কঠিন চীবর দান উদযাপন বন্ধ করায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পাহাড়িরা। খাগড়াছড়ি রামগড়ের বাসিন্দা অমল চাকমা জানান, আঞ্চলিক দলগুলো বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের উৎসব উদযাপন থেকে বিরত রাখতে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছে। প্রবল চাপে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কঠিন চীবর দান উদযাপন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের ধর্মীয় উৎসব বন্ধ করার ক্ষমতা কারো নেই। বলপ্রয়োগ করে ধর্ম পালনে বাধা প্রদান করে বর্তমান সরকারের উপর দায় চাপাতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে আঞ্চলিক দল।

রাঙামাটি ট্রাইবাল আদামের বাসিন্দা পিয়াস চাকমা বলেন, কঠিন চীবর দান উদযাপনের জন্য গত ৭ অক্টোবর রাঙামাটি জেলা প্রশাসক বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের নিয়ে বৈঠক করেন। এসময় প্রশাসন যথাযথ নিরাপত্তা প্রদান করবে বলে আশ্বস্ত করেন। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অনুরোধের পরেও উদযাপন না করার সিদ্ধান্তে অনড় তারা!

বুধবার পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বৌদ্ধ ভিক্ষু, বৌদ্ধ ধর্ম গুরু এবং স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের নিয়ে আসন্ন প্রবারণা উৎসব ও কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি মূলক সভা আয়োজন করে বান্দরনবান জেলা প্রশাসন।

এসময় কঠিন চীবর দান না করার পক্ষে মত দিয়েছেন বান্দরবানের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা।

সভায় বান্দরবান জেলার প্রবারণা উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি অংচমং মারমা বলেন, ‘সম্প্রতি রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর ওই দুই জেলায় প্রবারণা পূর্ণিমায় প্রবারণা উৎসব হচ্ছে না।

যেখানে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেখানে পাহাড়ে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হতে বাধা কোথায়? দুর্গাপূজা উদযাপনে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সেখানে কঠিন চীবর দান বর্জন আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলোর বাড়াবাড়ি বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।