ঋতুপর্ণা চাকমার এলাকার উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বাধা: পাহাড়ের উন্নয়নে প্রশাসনের প্রতিবন্ধকতা
![]()
নিউজ ডেস্ক
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম মঘাইছড়ি গ্রামের কৃতি সন্তান ঋতুপর্ণা চাকমা, বাংলাদেশের জাতীয় নারী ফুটবল দলের এক উজ্জ্বল নাম, যার খেলা সারা দেশে অনুপ্রেরণার সৃষ্টি করেছে। ২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর, জেলা প্রশাসন ঋতুপর্ণাকে একটি বাড়ি এবং তার গ্রামের মানুষের জন্য একটি যাতায়াত সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে, দীর্ঘ সময় পরেও প্রশাসন সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে সক্ষম হয়নি, এবং সম্প্রতি কিছু অদৃশ্য মহল তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০১২ সালে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল যখন প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়, রাঙামাটি জেলার পাঁচজন ফুটবলার জাতীয় দলে ছিলেন, তাদের মধ্যে দুইজন—ঋতুপর্ণা চাকমা এবং রূপনা চাকমা—ছিলেন। রূপনা চাকমার জন্য প্রশাসন দ্রুত একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেয়, কিন্তু ঋতুপর্ণা তার গ্রামের মানুষের সুবিধার্থে একটি সড়ক নির্মাণের অনুরোধ করেছিলেন। প্রশাসন সেই সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু বছর গড়ানোর পরও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
২০২৪ সালে যখন বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয় এবং ঋতুপর্ণা সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন, রাঙামাটি জেলা প্রশাসন আবারো তাকে সংবর্ধিত করে এবং সড়ক নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়। ইউএনও কাজী আতিকুর রহমান তার বাড়িতে সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করেন। কিন্তু যখন বাড়ি নির্মাণ এবং সড়ক তৈরির কাজ শুরু হওয়ার কথা, তখন একটি অদৃশ্য মহল বাধা সৃষ্টি করতে থাকে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানাচ্ছে, মঘাইছড়ি এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সন্তু গ্রুপ এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) প্রসিত গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই আঞ্চলিক দলগুলোর কিছু অংশ ঋতুপর্ণার বাড়ি এবং সড়ক নির্মাণে বাধা দিচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ সন্ত্রাসী দলগুলো উন্নয়নকাজে বাধা দেয়, কারণ তারা জানে উন্নয়ন হলে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহজে পৌঁছাতে পারবে, ফলে তাদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে বাধা আসবে।

ঋতুপর্ণা চাকমা এই বিষয়ে সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট করে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, তাঁর গ্রাম এবং এলাকার মানুষদের জন্য উন্নয়ন চাওয়া ছিল, কিন্তু কিছু আঞ্চলিক দল সেই কাজ বাস্তবায়ন হতে দিতে চাইছে না।
এই ঘটনাটি শুধু ঋতুপর্ণার ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, বরং এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি চিরাচরিত সংকট। উন্নয়নকে থামিয়ে রাখা, পাহাড়ি জনগণের জীবনমান উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। সরকারের উচিত এই ধরনের প্রতিবন্ধকতাগুলো অতিক্রম করে উন্নয়ন নিশ্চিত করা, যাতে পাহাড়ি জনগণও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মৌলিক সুবিধাগুলো পায়।
এখন প্রশ্ন হলো—ঋতুপর্ণা চাকমার মতো একজন দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব যদি তার নিজ গ্রামে বাসস্থানের জন্য সমস্যায় পড়েন, তাহলে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ কিভাবে ন্যায়বিচার পাবে?
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।