ত্রিপুরাজুড়ে জেএসএসবিরোধী পোস্টার, উঠছে সন্ত্রাস ও চোরাচালান সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
 
                 
নিউজ ডেস্ক
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতী জেলার চাকমা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় ফের দেখা গেছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) বিরোধী পোস্টার। ‘সচেতন ত্রিপুরা জনজাতি’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এই পোস্টার সাঁটানো হয়।
গত ১৬ ও ১৭ জুন দক্ষিণ ত্রিপুরার শিলাছড়ি, মাস্টার পাড়া, আইলমারা বাজার, এজিরা আদাম, নতুন বাজার, জুরজুরি, রামভদ্রসহ একাধিক এলাকায় এই পোস্টার চোখে পড়ে। এর আগে আগরতলা শহরেও এ ধরনের পোস্টার দেখা গিয়েছিল।
পোস্টারে যা লেখা ছিল:
“ভারতবিরোধী জেএসএস (সন্তু) কে সাহায্য করবেন না”,
“পাকিস্তানের দালাল সন্তু লার্মাকে ত্রিপুরায় আশ্রয় দেবেন না”,
“নিজ জাতিকে হত্যা করছে সন্তু”,
“ভারত থেকে সন্তু লার্মার চোরাচালান বন্ধ করুন।”
এইসব পোস্টারে সন্তু লারমা ও তার নেতৃত্বাধীন জেএসএস গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানপন্থী মনোভাব, সন্ত্রাসে মদদ, অস্ত্র পাচার ও সীমান্ত চোরাচালানের মতো গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।
দীর্ঘদিনের অভিযোগের পুনরাবৃত্তি
১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর সন্তু লারমা ও তার অনুসারীরা চুক্তির আলোকে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ করে আসছে। চুক্তিতে আসল সমস্যার সমাধান হয়নি—এমন অভিযোগকে কেন্দ্র করে ১৯৯৮ সালে ইউপিডিএফ নামে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, চুক্তির বিরোধিতাকারী ছাত্র ও যুব নেতাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে বরং সহিংসতা ও দমননীতির আশ্রয় নিচ্ছেন সন্তু লারমা। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকলেও পাহাড়ে গণতান্ত্রিক চর্চা ও রাজনৈতিক মতবিরোধকে দমিয়ে রেখেছেন বলেও পোস্টারগুলোতে অভিযোগ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও সীমান্ত অপরাধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
পোস্টারদাতাদের দাবি, জেএসএস (সন্তু) গোষ্ঠী ত্রিপুরা ও মিজোরামকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র, গরু, বার্মিজ সিগারেট ও মাদক চোরাচালানে যুক্ত। কয়েক মাস আগে মিজোরামে সন্তু লার্মার অনুসারীরা অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বলে দাবি করা হয়েছে।
সচেতন চাকমা জনগণের অবস্থান
‘সচেতন ত্রিপুরা জনজাতি’ নামের সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদ, দেশবিরোধী তৎপরতা বা চোরাচালানকারীদের আশ্রয় চাই না। ত্রিপুরাকে অপরাধীদের নিরাপদ ঘাঁটি বানানোর ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া হবে না।”
এই আন্দোলন মূলত ত্রিপুরায় বসবাসরত চাকমা জনগণের একটি অংশের পক্ষ থেকে সংগঠিত হচ্ছে, যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কার্যক্রমকে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন।
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরায় জেএসএস (সন্তু) বিরোধী প্রচারণা নতুন কিছু নয়, তবে এবারের পোস্টারগুলোতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নাম উল্লেখ ও জেএসএস কর্তৃক “নিজ জাতিকে হত্যা” করার মতো অভিযোগ এবং পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের ইঙ্গিত স্পষ্টতই এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এতে বোঝা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংঘাত ও রাজনীতি কেবল বাংলাদেশের সীমান্তেই সীমাবদ্ধ নয়—ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও তার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া প্রবলভাবে অনুভূত হচ্ছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
