ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীনের বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ শুরু: উদ্বেগে ভারত, আশঙ্কায় বাংলাদেশ
 
                 
নিউজ ডেস্ক
চীন তিব্বতের নিয়িংচি অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র নদীর উজানে বিশাল আকারের একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে। শনিবার (১৩ জুলাই) দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং নিজেই এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই প্রকল্প চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল জলবিদ্যুৎ অবকাঠামোগুলোর একটি, যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
নদীটি তিব্বতে ‘ইয়ারলুং সাংপো’ নামে পরিচিত হলেও ভারতে ও বাংলাদেশে তা ব্রহ্মপুত্র নামে প্রবাহিত হয়। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই প্রকল্পের ফলে নদীর নিম্নপ্রবাহে থাকা ভারত ও বাংলাদেশে পানির প্রবাহে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, যা কোটি কোটি মানুষের জীবিকায় সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটিতে পাঁচটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রধানত চীনের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করা হবে, তবে আংশিকভাবে তা তিব্বতের স্থানীয় চাহিদাও পূরণ করবে। চীন দাবি করেছে, প্রকল্পটি তাদের কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের কৌশলের অংশ এবং তিব্বতের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির উদ্বোধনের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, “আমরা এটি নজরদারিতে রেখেছি এবং ভারতের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেব।” এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নয়াদিল্লি চীনকে অনুরোধ করেছিল, যেন ব্রহ্মপুত্র নদীর উজানে কোনো প্রকল্প গ্রহণের সময় নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর স্বার্থ ক্ষুণ্ন না হয়।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য আশ্বস্ত করে জানিয়েছিল, এ প্রকল্পে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না এবং নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর সঙ্গে তারা যোগাযোগ রক্ষা করবে।
পরিবেশবিদদের মতে, এই ধরনের মেগা প্রকল্প তিব্বতের পরিবেশ-সংবেদনশীল মালভূমিতে দীর্ঘমেয়াদি এবং অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে। এর প্রভাব শুধু নদীর পানিপ্রবাহেই নয়, বরং আঞ্চলিক বাস্তুসংস্থান, জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্যের ওপরও পড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশে প্রবেশের পর গুরুত্বপূর্ণ কৃষি অঞ্চল ও নদনদীর পানির উৎস হিসেবে কাজ করে। নদীর প্রবাহ কমে গেলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের পানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই এই প্রকল্পটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাতেও নতুন উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
