সংবিধানবিরোধী আদিবাসী স্বীকৃতি দাবির মঞ্চে জেলা পরিষদ সদস্যের উপস্থিতি কেন?

সংবিধানবিরোধী আদিবাসী স্বীকৃতি দাবির মঞ্চে জেলা পরিষদ সদস্যের উপস্থিতি কেন?

সংবিধানবিরোধী আদিবাসী স্বীকৃতি দাবির মঞ্চে জেলা পরিষদ সদস্যের উপস্থিতি কেন?
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

বাংলাদেশের সংবিধান স্পষ্টভাবে সকল নাগরিককে সমান মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে—“বাংলাদেশে কেবলমাত্র ‘বাংলাদেশী’ নাগরিক” পরিচয়ই সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। সেখানে “আদিবাসী” শব্দটি কোনোভাবেই সংবিধানে নেই, বরং রাষ্ট্র পরিষ্কার ভাষায় “উপজাতি” বা “ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী” শব্দ ব্যবহার করে থাকে। এই প্রেক্ষাপটে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের আলোচনা সভায় একজন জেলা পরিষদ সদস্যের প্রধান অতিথি হয়ে অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ এবং গভীরভাবে উদ্বেগজনক।

জনপ্রতিনিধির চেয়ারে বসে হিসেবে ওই জেলা পরিষদ সদস্য দেবপ্রসাদ দেওয়ানের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব সংবিধানের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখা। তিনি সরকারি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সংবিধানবিরোধী কোনো কার্যক্রমে অংশ নেবেন না—এটি শুধু নৈতিক বাধ্যবাধকতাই নয়, সংবিধানের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকারও বটে। অথচ এই সভার মূল বার্তাই ছিল “বাংলাদেশ সরকার আমাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, তাই আন্দোলন চালাতে হবে”—যা সরাসরি রাষ্ট্রের সংবিধান ও ঘোষিত নীতির সাথে সাংঘর্ষিক।

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এই মঞ্চে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের নামে “আদিবাসী স্বীকৃতি” দাবিকে জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যা বহু বছর ধরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে বিতর্কিত ও রাজনৈতিকভাবে বিভাজন সৃষ্টিকারী ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত। একজন সরকারি পদধারী জেলা পরিষদ সদস্য যদি এমন বিতর্কিত এবং সংবিধানবিরোধী বক্তব্যধারী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হন, তবে তা শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত মতামত নয়—বরং তার পদ ও দায়িত্বের প্রতি চরম অবমাননা হিসেবে দেখা হবে।

সংবিধানবিরোধী আদিবাসী স্বীকৃতি দাবির মঞ্চে জেলা পরিষদ সদস্যের উপস্থিতি কেন?

রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের উচিত সংবিধান, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার স্বার্থে সতর্ক ও দৃঢ় থাকা, বিভাজনমূলক রাজনীতির মঞ্চে না দাঁড়ানো। অন্যথায়, এ ধরনের উপস্থিতি শুধু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে না, বরং সংবিধান ও রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ জাগাবে। জনপ্রতিনিধির আচরণ যখন তার শপথ ও দায়িত্বের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়, তখন সেটি কেবল নিন্দনীয় নয়—বরং তা আইনগতভাবে তদন্ত ও জবাবদিহির দাবি রাখে।

এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা এবং নিশ্চিত করা যে, রাষ্ট্রীয় পদে থাকা কেউ যেন ভবিষ্যতে কোনো সংবিধানবিরোধী বা রাষ্ট্রবিরোধী এজেন্ডার অংশ না হন। দেশের ঐক্য ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এ ধরনের উদাসীনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।

উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার (৯ আগস্ট) আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইছড়ি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত রাষ্ট্রবিরোধী ওই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাচালং সরকারি ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বর্তমান রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য দেবপ্রসাদ দেওয়ান। আলোচনা সভায় দেবপ্রসাদ দেওয়ান বলেন, আদিবাসী দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিন্তু বাংলাদেশ সরকার আদিবাসী হিসেবে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। স্বীকৃতির জন্য আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

You may have missed