মিয়ানমারে রাখাইনে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে একদিনে ৫০ জান্তা সেনা আহত
![]()
নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কিয়াউকফিউ এলাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ে একদিনে অন্তত ৫০ জান্তা আহত হয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীদের বরাতে বার্মা নিউজ ইন্টারন্যাশনাল এ খবর জানিয়েছে।
মিয়ানমারে আগামী ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাখাইনে সামরিক অভিযান জোরদার করেছে জান্তা বাহিনী। রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় আরাকান আর্মির সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় থাকায় রাখাইনে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছে। এসব কারণে দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গা পরিবার।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে বার্মা নিউজ ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, বর্তমানে কিয়াউকফিউ শহরের বাইরে অন্তত তিনটি স্থানে তুমুল যুদ্ধ চলছে। গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) আরাকান আর্মির হামলায় অন্তত ৫০ জন জান্তা আহত হয়।
প্রতিবেদন মতে, কিয়াকফিউ টাউনশিপ থেকে আহত এসব সেনাকে ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটি নৌযানে করে সিত্তে বন্দরে আনা হয়। এর তাদের গাড়িতে করে হাসপাতালে নেয়া হয়। জাহাজ থেকে সেনাদের নামানোর জন্য স্ট্রেচারও ব্যবহার করা হয়।
এদিকে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমের সাগাইং শহরে জান্তা সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে আবারও তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, টানা কয়েকদিন ধরে গোলাগুলি ও বিমান হামলায় বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। পালাতে বাধ্য হয়েছে শত শত পরিবার। এলাকায় ইন্টারনেট ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ চিত্র এখনও পরিষ্কার নয়।
পূর্বাঞ্চলীয় কারেনি রাজ্যের ডেমোসো শহরের দখল নিয়ে দাবি ও পাল্টা-দাবিতে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী বলছে, তারা শহরটির বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। অন্যদিকে জান্তা দাবি করছে, সরকারি বাহিনী এখনো শহরের প্রশাসনিক কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। এই দ্বন্দ্ব কেরেন্নি অঞ্চলে সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত করছে।
সেনা-বিদ্রোহীদের সংঘাতের কারণে থাই-মিয়ানমার সীমান্তে বাণিজ্যিক রুটও আক্রান্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষের জেরে মিয়াওয়াদি সীমান্ত শহরের সেতু বন্ধ করে দিয়েছে জান্তা সরকার। ফলে দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন থমকে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আটকে থাকায় সীমান্ত অঞ্চলের বাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচনের আগে সেনা সরকার যেকোনো মূল্যে নতুন ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে। উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে আক্রমণ জোরদার করে তারা একটি সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করতে চাচ্ছে। তবে এই অভিযানে সেনাদের ব্যাপক প্রাণহানির খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা জান্তার মনোবলকে দুর্বল করে দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
জান্তা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, নির্বাচনের আগে যতটা সম্ভব এলাকা পুনর্দখলে নিতে চায় তারা। আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। যার ফলে সংঘর্ষ দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তক্ষয়ী আকার নিচ্ছে।
রাখাইনে ১৭টি টাউনশিপ রয়েছে। বর্তমানে ১৭টির মধ্যে ১৪টি টাউনশিপ নিয়ন্ত্রণ করছে আরাকান আর্মি। জান্তার দখলে আছে মাত্র তিনটি। সেগুলো হচ্ছে- রাজধানী সিত্তে বা আকিয়াব, গভীর সমুদ্রবন্দর ও তেল-গ্যাস পাইপলাইনের শহর কিয়াকফিউ ও মানাউং।
এর মধ্যে কিয়াকফিউ কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চীনের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা গভীর সমুদ্রবন্দর ও তেল-গ্যাস পাইপলাইন এখানেই অবস্থিত। এ কারণে জান্তা এখানে বারবার সামরিক শক্তি পাঠাচ্ছে। তবে ওই অঞ্চল থেকে পিছু হটেনি আরাকান আর্মিও।
অন্যদিকে সিত্তে শহরে গোলাবর্ষণ ও অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। যদিও আরাকান আর্মি এখানে সেখানে সরাসরি আক্রমণে যায়নি। সংঘর্ষ ছাড়াও রাখাইনের খাদ্য সংকট পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করেছে। খাদ্যের অভাব ও হতাশায় সম্প্রতি অন্তত দুজন আত্মহত্যা করেছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।