অবরোধের নামে খাগড়াছড়ি জুড়ে ইউপিডিএফের তান্ডব, জনমনে আতঙ্ক
![]()
নিউজ ডেস্ক
চাঁদাবাজির অর্থ আদায় ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ৭ সেপ্টেম্বর রবিবার খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মানিকছড়ি উপজেলার তবলাপাড়ায় প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফ এর দু’ গ্রুপের বিরোধে সংগঠিত এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি জুড়ে অবরোধের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে সংগঠনটির সহযোগী সংগঠনগুলো।
কথিত দাবি আদায় না হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার প্রেস রিলিজ দিয়ে ঘটা করে খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং সাজেক সড়কে আধাবেলা অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও নারী আত্মরক্ষা কমিটি।

রাতেই অবরোধের সমর্থনে খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে মশাল মিছিলের নামে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। রাতভর আতঙ্কের পর ভোরের সূর্য উঁকি দেয়ার আগেই শুরু হয় ইউপিডিএফের তান্ডব।
খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং সাজেক সড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন, সড়কের পাশের সরকারি গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা তৈরী এবং জেলার অভ্যন্তরীন সড়কে চলাচলকারী সিএনজি-চাঁদের গাড়ি আটকে দিয়ে ভোগান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে এ অঞ্চলকে আতঙ্কের জনপদে রুপ দেয় ইউপিডিএফ।
সকাল ৬ টায় গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়ি এলাকায় সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অকটেন দিয়ে আগুন দেয়ার মাধ্যমে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।

এছাড়া, খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় টায়ারে আগুন দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে অবরোধকারী নামধারী ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা।
সকালে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের চেঙ্গীব্রিজ এলাকায় ও পানছড়ি সড়কের টেকনিক্যাল স্কুলের সামনে টায়ার ও গাছের গুড়ি ফেলে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। পরে পুলিশ গিয়ে আগুন নেভায় ও সড়ক থেকে প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নেয়। বিভিন্নস্থানে চোরাগোপ্তা পিকেটিংয়ের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।
সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে সাজেক উজোবাজার এলাকায় সড়কে টায়ারে আগুন দিয়ে সেখানে জড়ো হয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও নারী আত্মরক্ষা কমিটির সদস্যরা।

সকাল ৬ টা ৪০ মিনিটে রামগড় উপজেলার যৌথখামার-তৈচালা সড়কের এক স্থানে আগুন ও সড়কের পাশের সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বড় বড় গাছ কেটে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পালিয়ে যায় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। সাপ্তাহিক হাটের দিন হওয়ায় স্থানীয় জনসাধারনের কথা চিন্তা করে বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত হয়ে সড়কে প্রতিবন্ধকতা দূর করে এবং নিরাপত্তা দিয়ে বাজারগামী গাড়িগুলো পৌঁছে দেয়।
এদিকে, বাঘাইহাট ১০ নম্বর এলাকায়ও সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ইউপিডিএফ।
সকালে মারিশ্যা ৯ কিলো এলাকায় আগুন দিয়ে অবরোধের সমর্থনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।

এসব ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই পাহাড়ি জনপদে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, হঠাৎ করেই পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করছে আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনা প্রবাহের উপর নজর রাখেন এমন একজন এক্টিভিস্ট জানান, একদিকে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে দেশব্যাপী উৎকন্ঠায় রাক পার হয়েছে। এর ভেতরে পাহাড়ে অবরোধের নামে এমন তান্ডব চালানো কোন ভাবেই স্বাভাবিক ঘটনা নয়।
তিনি জানান, অবরোধের ডাক দিয়ে ধ্বংসলীলা চালানো কিংবা কোন গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার অপচেষ্টা কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।

খাগড়াছড়ির একজন সংবাদকর্মী জানান, গতরাতে অবরোধের সমর্থনে মশাল মিছিল করে শহরে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে। এরপর সকাল থেকেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন, সড়কের পাশের সরকারি গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়ি সড়কে সিএনজি চালকেদের কয়েকজনকে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী কর্তৃক হেনস্তাও করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, শহরের প্রবেশ পথের দুটি স্থানে অবরোধকারীরা যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। তবে পুলিশের তৎপরতায় তা সফল হয়নি। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নৈশ কোচগুলো নিরাপদে শহরে প্রবেশ করেছে এবং নিরাপত্তা জোরদারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইউপিডিএফের দুটি গ্রুপের মধ্যকার দ্বন্ধকে কেন্দ্র করে গত ৭ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে মানিকছড়ির তবলা পাড়ায় একটি গ্রুপ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করতে গেলে অপরপক্ষের সহায়তায় স্থানীয়রা কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে অবরুদ্ধে করে গণপিটুনি দেয়ার প্রচেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আটক করতে চাইলে ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপের সদস্যরা স্থানীয় কিছু উশৃঙ্খল যুবককে নিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর উপর হামলা করে। এতে নিরাপত্তাবাহিনীর ৫ সদস্য আহত হন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
মুলত, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের কোন্দল ঢাকতেই নতুন করে ইস্যু তৈরী করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলে ইউপিডিএফ।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।