সেনাবাহিনী পাহাড়ে সার্বভৌমত্ব অখণ্ডতা বজায় রেখেছে

সেনাবাহিনী পাহাড়ে সার্বভৌমত্ব অখণ্ডতা বজায় রেখেছে

সেনাবাহিনী পাহাড়ে সার্বভৌমত্ব অখণ্ডতা বজায় রেখেছে
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

শান্তি চুক্তির সবগুলো ধারা যদি কার্যকর হতো, তা হলে পাহাড়ের সমস্যা অনেক কমে যেত। শান্তি চুক্তির এই ধারায় সমস্যা রয়েছে সাংবিধানিক সাংঘর্ষিকতাও রয়েছে। ১৯৯৭ সালে যে চুক্তি হয়েছে, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে প্রয়োজনের পরিবর্তন হয়েছে, সেখানকার মানুষের ধারণার পরিবর্তন হয়েছে, তাই এই শান্তি চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন বা পুনর্বিবেচনা একান্তই প্রয়োজন। এটা পুনর্মূল্যায়ন না করা গেলে পাহাড়ের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। অনেকেই অনেক কথা বলবেন- আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চাই, সেনাবাহিনীর উপস্থিতি চাই না, কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম স্পেশাল প্লেস। এখনো সেনাবাহিনী পাহাড়ে সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা বজায় রেখেছে। আদিবাসী, নৃগোষ্ঠী, সেটেলার, সেটেলাম বাঙ্গালী শব্দগুলো বাদ দিতে হবে। শুধু মাত্র চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের নিয়ে আলোচনা না করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জাতি-গোষ্ঠীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে শান্তি আলোচনার তাগিদ দেন বক্তারা।

গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত রিটায়ার্ড আর্মফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে (রাওয়া) হেলমেট হলে আয়োজিত ‘সমস্যা সঙ্কুল পার্বত্য চট্টগ্রাম : শান্তির অন্বেষণ’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার কোনো সভাপতি ও বিশেষ অতিথির ব্যবস্থা না থাকায় অতিথিদের স্বগত জানান রাওয়ার প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব:) আবদুল হক।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেজর জেনারেল (অব:) কামরুজ্জামান। তিনি পার্বত্য অঞ্চলের শাসন ও শাসকদের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সময়ে এসে এখানে যে সমস্যা আছে এর সাথে ভারত জড়িত। এ কারণে সমস্যার সমাধান হবে না যদি না আমরা দেশপ্রেম জারি রাখি। এ ছাড়া বিদেশী গোয়েন্দাদের প্রলোভন ও জাল থেকে মুক্ত থাকতে হবে।

আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, শান্তিবাহিনী ১৯৭৬ সালের আগে বাংলাদেশে কোনো আগ্রাসন চালায়নি। ফলে মনে হচ্ছে ভারত একটি অস্ত্র হাতে রেখেছে, যেটি সময় সুযোগ মতো ব্যবহার করছে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। যে সময়ে ভারতের পছন্দের সরকার ক্ষমতায় থাকবে না তখন তারা এই অস্ত্র ব্যবহার করবে। এই যে ভারতীয় আগ্রাসনের সাথে আমাদের স্থানীয় একটি গ্রুপ জড়িত আছে। এটা শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা না। আমাদের রাজনীতিবিদদের একটি অংশ ভারতের আগ্রাসনের সহযোগী। যার বড় নাম ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এটা আমাদের মনে রাখা দরকার। আপনারা হয় জানেন, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার ছিলেন কৃষ্ণ শ্রীনিবাস। তিনি তার লেখা ‘ দ্যা জামদানী রেভুলোশন’ এ লিখেছেন। বাংলাদেশে তার দায়িত্ব শেষ উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা তাকে বলেন, পাহাড়ে আসলে শান্তি বাহিনী বলতে কিছু নেই। আপনারা (ভারত) বলবেন, এটা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৈরি, যা অপরাধ হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজেদের স্বার্থে করছে। শেখ হাসিনার এই প্রস্তাবের জবাবে তিনি আরো লিখেছেন, শান্তি বাহিনী নেই, এটা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না।

তার মানে আমি যেটা বলতে চাই তা হলো- বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের যে পরিকল্পনা তার বড় একটি ডকট্রিন হলো শেখ হাসিনা ও তার সমর্থকরা। এটা যদি আমরা না বুঝতে পারি তা হলে আসল সমস্যাই বুঝতে পারবো না। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে যাচাই করছে। আমরা আশা করছি আগামী চার মাস পর নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসবে তাদের ক্ষেত্রে ভারত তার এই অস্ত্র ব্যবহার করবে। এই বিষয় সেনাবাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। সেনাবাহিনীর প্রকৃত ইতিহাস দেখি ১৯৭১ সালের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে গত ৫৪ বছর ধরে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। আমাদের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ রাখতে সেনাবাহিনী বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে কিন্তু সেনাবাহিনী সেটি গোপন রাখে। প্রকাশ না করার পেছনে কারণ থাকতে পারে সরকার প্রকাশ করতে দেয়নি। কিন্তু এখন এই ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তাদের প্রকাশ করা উচিত আজ পর্যন্ত কত সেনা কর্মকর্তা ও সেনাসদস্য পার্বত্য চট্টগ্রামে শহীদ হয়েছেন। তাদের নাম জাতির জানা দরকার। তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন দিয়েছেন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, গত ১৫ বছর ভারতের দালাল ক্ষমতায় ছিল। তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সেনাবাহিনী বিতর্কিত হয়েছে। কিছু সংখ্যক সেনা কর্মকর্তার উচ্চাভিলাষ ও সরকারের কারণে বিতর্কিত হয়েছে। ফলে জনগণের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। একটা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব টিকে থাকতে পারে না যদি সেনাবাহিনীর সাথে দূরত্ব থাকে। কাজেই এই দূরত্ব মিটাতে হবে। এই দূরত্ব মেটাতে এই তিন পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনীর বীরত্বের কথা জনগণকে জানাতে হবে। ফলে জনগণ আপনাদের পাশে দাঁড়াবে।

পাহাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর বিষয় তিনি বলেন, পাহাড়ে যারা বসবাস করছেন তাদের ধর্মীয় পরিচয় নয়, বা যারা সমতল থেকে গেছে এটা বিষয় নয়। বরং নিজেদের মেলামেশা দরকার। এখানে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করতে হবে। যেখানে সমতল ও পাহাড়ের মানুষ থাকবে। এ ছাড়া অবশ্যই সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়াতে হবে, যাতে করে জরুরি যেকোনো মুহূর্তে তারা সাড়া দিতে পারে।

রাওয়া চেয়ারম্যান কর্নেল (অব:) আবদুল হক বলেন, আমি প্রথমেই সেনাবাহিনীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এর সাথে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অবদানকেও এখানে অস্বীকার করার কিছু নেই। দুর্গম পার্বত্য এরিয়ায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া সেখানে টিকে থাকা অসম্ভব ছিল। হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে, অনেকে আহত নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪০০ জনের মতো শহীদ হয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য। আমরা তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ্ তাদের শহীদ হিসাবে তাদেরকে জান্নাত দান করুন, আমীন।

তিনি বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সমস্যা, আজকের কোনো নতুন সমস্যা নয়, বহু দিনের সমস্যা। এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেই অংশটুকু বাংলাদেশের ভবিষ্যতে রাখা যাবে কি না সন্দেহ আছে। আন্তর্জাতিক চক্রান্তের শিকার, এটা স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, দেশের শত্রুদের চক্রান্ত, তারা করতেই থাকবে, ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু সেটা থেকে বাঁচার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, আমাদের জাতীয় ঐক্য। এই সব বিষয়ে দল-মত-বর্ণ নির্বিশেষে ছবিটা নিয়ে আসেন। সবাইকে একত্র হতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের এক-দশমাংশকে রক্ষা করার জন্য জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পলিটিশিয়ানদের একত্রিত হতে হবে। আরেকটা জিনিস বলছি। এটা কি শুধু সেনাবাহিনীর সমস্যা? আজ পর্যন্ত, এখন পর্যন্ত সবাই মনে করে এটা সেনাবাহিনীর সমস্যা। এখানে রক্ষা করার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর, বানুমালী লাগবে না। বানুমালী স্থানগুলোর জন্য সেনাবাহিনী। মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ থাকে, সেনাবাহিনী সেখানে প্রশাসন চালানোর জন্য। তা হলে দেশের অন্যান্য অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব কি? ইন্ডিয়ার কাশ্মির এটা কি শুধু সেনাবাহিনী সেখানে দায়িত্ব পালন করছে? আজকে ৭৭ বছর ধরে অকুপাইড কাশ্মিরকে তারা ধরে রেখেছে। এটা কি অনলি ফর মিলিটারি? আমাদের এই চিন্তাটা আজকে আমরা দুটাতে চাই আপনাদের মাথায় সবার জন্য। এই জন্য আজকে শুধু মিলিটারিকে নিয়ে এখানে হয় নাই। আমরা এই অনুষ্ঠানটা করছি সবাইকে নিয়ে। এখানে সামরিক-বেসামরিক বুদ্ধিজীবীরা আছেন, সামরিক-বেসামরিক নেতারা আছেন, এখানে সাংবাদিকরা আছেন, আরো অন্যান্য স্টেকহোল্ডার আছেন। আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আজকে এই কথাগুলো সারা বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনালভাবে প্রচার হচ্ছে এবং হবে। আপনাদের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা যখন কথা বলবেন, এই জিনিসটা গুরুত্ব দিবেন। ইট ইজ নো ওয়ান মিলিটারি প্রবলেম। এটাকে আমরা সম্মিলিতভাবে, সমন্বিতভাবে আমরা এটাকে ওপরে রাখবো। বাংলাদেশ ভ্রমণ

দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যার কেন্দ্রে, মূল সমস্যা তৈরি করা এবং এই সমস্যাকে জিইয়ে রাখা, সব কিছুর জন্য একটা মাত্র রাষ্ট্র দায়ী (ভারত)। বাকিরা হয়তো ছোটখাটো ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, আমাদের সমস্যাটা হলো ভাসুরের নাম মুখে নিতে খুব লজ্জা করে। কলকাতায় ৯২ সালের পরে তো আর কখনো ভিসা দেয়নি আমাকে ওরা। আমাকে কলকাতা প্রেস ক্লাবে জিজ্ঞেস করেছে, বাংলাদেশের এক নম্বর সমস্যা কী? আমি বললাম বাংলাদেশের এক নম্বর সমস্যা হলো ভারত। বলে দুই নম্বর সমস্যা? আমি বলি এটাও ভারত। তিন নম্বর সমস্যা? আমি বলি এটাও ভারত। চার নম্বর সমস্যা? আমি বলি এটাও ভারত। তা হলে কতক্ষণ চলবে ভারত? অন্তত ৮৪ শতাংশ সমস্যা ভারতের মাধ্যমে। ৮৪ নম্বর পর্যন্ত চলবে ভারত এর পরে হলো আমাদের বেকারত্ব, দারিদ্র্য, কাণ্ডজ্ঞানহীনতা, লোভ ইত্যাদি। তিনি আরো বলেন, ৯৭ সালে শান্তি চুক্তির আগে রামগড় থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত যাওয়ার পথে রাস্তার দুই পাশে আমি অসংখ্য কবর দেখেছিলাম। আমি জিজ্ঞেস করেছি এগুলো কাদের কবর? বলছে এগুলো সন্তু লারমা বাহিনীর হাতে নিহত সব বাঙালিদের কবর। বলেন কি? এগুলো তো আমরা কিছুই জানি না ঢাকায়। জানানোর উদ্যোগও তো কেউ কখনো নেয়নি। নিশ্চয় দুই পক্ষেই মরেছে। কিন্তু বাঙালিরা যে হাজার হাজার মারা গেছে। ২০ থেকে ২৫ হাজার বাঙালি। তাদের জন্য পৃথিবীতে এক ফোঁটা অশ্রু কারো চোখ থেকে পড়ে নাই কোনো দিন।

যুগান্তর সম্পাদক বলেন, মাছের জন্য যেমন পানি দরকার সেনাবাহিনীর জন্য তো তেমন জনসমর্থন দরকার। না হলে তো সে মুভ করতে পারবে না, সেই মুভের রাস্তাটা তৈরি করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু এরশাদ গুচ্ছগ্রাম ফর্মুলা নিয়ে আসছিলেন। গুচ্ছগ্রাম ফর্মুলা দিয়ে ভারতের হাতে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম তুলে দেয়া হয়। কারণ গুচ্ছগ্রাম যে সারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যে বাঙালিরা ছিল সেগুলোকে ক্লোজ করে রাস্তার দুই পাশে শরণার্থী ক্যাম্পে জায়গা দেয়া হলো। বাংলাদেশের সর্বনাশ হয়ে গেল। এবং যত ইন্টারন্যাশনাল সুযোগ-সুবিধা সব হলো চাকমাদের জন্য। মারমা, গারো, হাজং কারো জন্য কিচ্ছু নাই। আর বাঙালিরা তো মানুষই না। কোন এনজিও বাঙালিদের পাশে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড আছে? দেখাতে পারবেন না।

অপরিকল্পিত পদক্ষেপের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের অশান্তি দূর করা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি আরো বলেন, কেন ভারতকে বলে দেয়া যায় না যে আমার বাংলাদেশের মাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে যদি একটা বুলেট ফোটে তোমার মাটিতেও আরেকটি বুলেট ফুটবে। এই কথা বলতে লজ্জা কিসের, ভাসুরের নাম নিতে সমস্যাটা কোথায়? আমাদের গণমাধ্যম তো সন্তু লারমার চামচ দিয়ে চিনি খায় আর ভারতীয় বুদ্ধিজীবীরা যেহেতু বাংলাদেশে জাকিয়ে বসেছে এই আধিপত্যবাদের সেবাদাস বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এবং এরাই পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মূল পৃষ্ঠপোষক। আমাদের দেশের যে বুদ্ধিজীবীরা বছরের পর বছর লিখেছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর দরকার নেই। আমাদের যে বুদ্ধিজীবীরা লিখছে সেনাবাহিনী তো খামোখা বার্ডেন ভারতের মতো বন্ধুরাষ্ট্র আমাদের পাশে। আমরা সেনাবাহিনীকে কেন এই সাদা হাতিটা পালতেছি। তা তখন আমরা বুক চেপে পত্রপত্রিকায় লিখতাম যে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ছিল আছে এবং থাকবে।

সিএসডি সম্প্রতি জোট সমন্বয়ক থোয়াইং চিং মং শাক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সমস্যা সেগুলো তুলে ধরতে চাই। পার্বত্য চট্টগ্রাম বললেই মনে করি, চাকমা। শন্তুলারমার একটা বাহিনী ছিল- জেএসএস। সেই জেএসএস থেকে আজ সাতটা দল তৈরি হয়েছে। এই দলগুলো তৈরির পেছনে কারণ কী? আমরা রাঙ্গামাটি লিজ দিয়েছি চাকমাদের হাতে, বান্দরবানকে লিজ দিয়েছি মারমাদের হাতে, আর খাগড়াছড়িকে লিজ দিয়েছি ত্রিপুরাদের হাতে। কিন্তু আমাদের বলা হয় উপজাতি। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। এই পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার স্বাদ নিতে পারিনি, জুলাই ২৪ এর স্বাধীনতার স্বাদও নিতে পারিনি। তার একমাত্র কারণ এই তিনটি জাতির কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম লিজ দেয়া আছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে, নয় তো পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হতেই থাকবে। এই ষড়যন্ত্রের কারণ অনেক, তা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। পাহাড়ের যারা বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবে, তাদের বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে কেউ ভাবে না। কিন্তু আমরা আলোচনায় বসি, শন্তু লামরাসহ যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাদের সাথে। তাদের উসকানিতে তৈরি হচ্ছে নাথান বমসহ অনেক সংগঠন।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী, নৃগোষ্ঠী, সেটেলার, সেটেলার বাঙালি শব্দগুলো বাদ দিতে হবে। আপনারা ঢাকায় বসে বসে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন- পাহাড়ি বাঙালি বলেন, মানে কী? আপনিও পাহাড়ি, আমিও পাহাড়ি, যে পাহাড়ে বসবাস করে তারাই পাহাড়ি। আমরা কখনো বলিনি, আপনারা সমতলের বাঙালি, কেন আমাদের আলাদা করে বলা হবে। আমাদের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নামে বলা হোক। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা নিরসনে সবার মধ্যে সমবণ্টন করতে হবে। পাহাড়ে ভূমিহীনদের ভূমির ব্যবস্থা করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা কেন্দ্রীয় স্বপ্ন না দেখে সব জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। তবেই পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বা পশ্চিমারা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করতে পারবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে বাংলাদেশ আর্মির উল্লেখ করে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) মাহমুদ হোসেন বলেন, আমি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে সাত বছর ফ্লাইং করেছি। তখন আমি দেখেছি বাংলাদেশ আর্মি পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা বজায় রাখতে কত প্রাণ দিয়েছে, সে কারণে এখনো পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি অংশ হিসেবে রয়েছে। তিনি বলেন, অনেকেই অনেক কথা বলবেন- আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চাই, আর্মির উপস্থিতি চাই না, কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম স্পেশাল প্লেস। এখানে আর্মির কারণেই সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা এখনো বজায় রয়েছে।

শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা তখন ৪০০ ক্যাম্পে ফ্লাইং করেছি। সেই ক্যাম্পের সংখ্যা কোথায় নেমে এসেছে। আমি দেখেছি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরসহ অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর বিভাগের লেফটেন্যান্ট ক্যাপটেনদের যে ধরনের কমিটমেন্ট ছিল এখন সেই কমিটমেন্ট আছে কি না আমি জানি না। আগে পাহাড়ের যে ইতিহাস আমাদের পড়ানো হতো সেই ইতিহাস প্রেক্ষাপট এখনো পড়ানো হয় কি না এটা আমি জানি না। এগুলো দেখার বিষয় আছে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ১৯৮০ সাল অথবা ১৯৯০ এর দিকে যে ব্যবস্থাপনা ছিল সে অর্ডারটা আমাদের এস্টাবলিস্ট করতে হবে। নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে তাদেরকে বোঝাতে হবে। তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো আর কোনো ষড়যন্ত্র করতে পারবে না।

পার্বত্য অঞ্চলে আমাদের যে বাঙালিরা আছে তাদের মধ্যেও তেমন নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারনি। সেটা গড়ে তুলতে হবে। সম্প্রতি যে ঘটনাটা ঘটেছে একই ঘটনা ২০১৭ সালেও ঘটেছিল। তখনো কিন্তু এক গুজবের উপরে বহু মারামারি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই গুজবটা কারা ছড়ায় আমরা কিন্তু জানি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ইন্ধনে সেখানে ইউপিডিএফসহ যে সশস্ত্র বাহিনীগুলো আছে তারা এই গুজবগুলো ছড়ায়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে গুজব ছড়ানোর যে তাদের মিডিয়া, সেটি খুব শক্ত। তিনি বলেন, পত্রিকায় হেডলাইন হচ্ছে ১৪৪ ধারা উঠে গেছে পাহাড়িরা আতঙ্কে। আতঙ্ক হচ্ছে তাদের জিনিসপত্র ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সেখানে কি বাঙালিরা নেই?

তিনি বলেন, পাহাড়ে কোনো সমস্যা হলে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা একপেশে বিবৃতি বা মন্তব্য করেন। তারা নিজেরা না বুঝে, না জেনে যে বিবৃতি দেয়া শুরু করে, তাতে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মনে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া জন্ম দেয়। বুদ্ধিজীবীদের একপেশে বিবৃতি দেয়া থেকে বিরত রাখতে সেনাবাহিনী বা সশস্ত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে একটা ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তিনি বলেন, শান্তি চুক্তির সবগুলো ধারা যদি কার্যকর হতো, তাহলে পাহাড়ের সমস্যা অনেক কমে যেত। শান্তি চুক্তির এই ধারায় সমস্যা রয়েছে সাংবিধানিক সাংঘর্ষিকতাও রয়েছে। আমি মনে করি, ১৯৯৭ সালে যে চুক্তি হয়েছে, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে প্রয়োজনে পরিবর্তন হয়েছে, সেখানকার মানুষের ধারণার পরিবর্তন হয়েছে, তাই এই শান্তি চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন বা পুনর্বিবেচনা একান্তই প্রয়োজন। এটা পুনর্মূল্যায়ন না করা গেলে পাহাড়ের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। পাহাড়ের সমস্যায় সশস্ত্রবাহিনীকেই শুধু সংযুক্ত করলে হবে না আমাদের দেশের মানুষদেরও এখানে সংযুক্ত করতে হবে। গত ৫০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে উন্নয়ন বাজেট দেয়া হয়েছে, সেই পরিমাণে আমার জেলায় তো দেয়া হয়নি, তবে কেন পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনো উন্নত হয়ে ওঠেনি সে বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, পাহাড়িদের মধ্যে নেতৃত্বের সঙ্কট রয়েছে। পাহাড়ে গুজব ছড়ায় ইউপিডিএফ এবং পার্শ্ববর্তী দেশ। গণমাধ্যমে একপেশে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। পাহাড়ে কিছু হলে না বুঝে না জেনে একদল বুদ্ধিজীবী বিবৃতি দিতে শুরু করেন। শান্তি চুক্তি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এটা পুনর্মূল্যায়ন ও পুনঃবিবেচনা প্রয়োজন।

চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজ বলেন, প্রকৃত সত্য যে, আমরা বাঙালিরা, যারা ওখানে আছি, তাদের মধ্যেও সে রকম কোনো নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। এই নেতৃত্বটা গড়ে উঠতে হবে। এই যে ঘটনা রিসেন্টলি ঘটল, এই ঘটনা একই, একদম হুবহু একই ঘটনা, ২০১৭ সালে আমি ডিসি থাকার সময়ও ঘটেছিল। তখনও কিন্তু এক গুজবের উপরেই বহু ভাঙচুর, বহু মারামারি হয়েছে এবং এই গুজবটা কারা ছড়ায়, আমরা খুব ভালোভাবেই জানি যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের ইন্ধনে, ভারতের ইন্ধনে, এই ইউপিডিএফ এবং ওখানে যারা সশস্ত্র গ্রুপ আছে, তারা নিজেরা এটা ছড়ায়। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, তাদের এই ছড়ানোটা আমাদের যে মিডিয়া, এই মিডিয়া খুব ভালোভাবেই খায়।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, ১৯৯৭ সালে যেই চুক্তি হয়েছে, এই দীর্ঘ সময়ে, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে, সেখানকার নিড চেঞ্জ হয়েছে, সেখানকার মানুষের ধারণা চেঞ্জ হয়েছে। এই শান্তি চুক্তিটার পুনর্বিবেচন বা পুনর্মূল্যায়ন একান্তভাবে প্রয়োজন। এটা যদি আমরা মূল্যায়ন না করতে পারি, তাহলে আমাদের এই বিচার সিচুয়েশন কোনো মতেই আমরা সমাধান করতে পারব না।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।