অনুসন্ধান: ধর্মকে পুঁজি করে বন বিভাগের জমি দখল ইউপিডিএফের, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা

অনুসন্ধান: ধর্মকে পুঁজি করে বন বিভাগের জমি দখল ইউপিডিএফের, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা

ধর্মকে পুঁজি করে বন বিভাগের জমি দখল ইউপিডিএফের, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার লক্ষীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি, যুগ যুগ ধরে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফের সশস্ত্র ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির ক্যাডারদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপনের বিরোধীতা করে স্থানীয় জনসাধারনকে অস্ত্রের মুখে আন্দোলনে বাধ্য করার পরিপ্রেক্ষিতে এক সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরেই দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের বিরোধীতা করে সরব অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ইউপিডিএফ তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর সদস্যরা। শুরুতে আর্য কল্যাণ বন বিহারের জমি দখল করে অবৈধ ভাবে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে বলে মিথ্যাচার করা হলেও পরবর্তীতে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের জন্য নির্ধারিত জমির পাশ্ববর্তী বন বিভাগের সরকারী জমি দখল করে সেখানে ‘মঙ্গল মিত্র বৌদ্ধ বিহার’ নামে আরেকটি বিহার নির্মানের ঘোষনা দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা চালায় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। এরই প্রেক্ষিতে আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে বেসামরিক প্রশাসনের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সেনাবাহিনীর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া কর্মীদের উপস্থিতিতে স্থানীয় এলাকাবাসীর নিকট তাদের দাবির স্বপক্ষের প্রমাণাদি দাখিলের আহবান করা হলে তারা তা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়।

ধর্মকে পুঁজি করে বন বিভাগের জমি দখল ইউপিডিএফের, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৬-২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের ইন্ধনে সৃষ্ট সহিংসতার অংশ হিসেবে গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার এলাকায় ইউপিডিএফ সশস্ত্র সদস্যদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিন জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর যুবক নিহত হওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসে নিরাপত্তাবাহিনী। পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় স্থায়ী সেনা ক্যাম্প না থাকায় সেখানে দীর্ঘমেয়াদী অভিযানের পরিকল্পনা করে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। ঘটনাস্থল ও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে জানা গেছে, ওই দিন (২৮ সেপ্টেম্বর) বর্মাছড়ি এলাকার বিভিন্ন পাড়া থেকে সশস্ত্র ক্যাডাররা রামসু বাজারে এসে সেনাবাহিনী ও সাধারণ জনগণের ওপর হামলা ও গুলি চালায়। এই ঘটনার পর চলতি মাসের ১৮ অক্টোবর থেকে খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে এবং মূল ক্যাম্প থেকে দূরে অস্থায়ী পেট্রোল বেস স্থাপন করে অভিযানের কার্যক্রম জোরদার করে।

অভিযানকালে সেনা টহল দল বর্মাছড়ির একটি খালি জঙ্গলী এলাকায় অস্থায়ী পেট্রোল বেস স্থাপন করে। সেনাবাহিনী সূত্র নিশ্চিত করেছে, স্থাপিত ওই পেট্রোল বেসটি বনবিভাগের সংরক্ষিত এলাকা অর্থাৎ চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার খিরাম অংশের জমির অন্তর্ভুক্ত এবং এটি বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বিহার থেকে আনুমানিক ৫০০ মিটার পশ্চিমে অবস্থিত বলে।

ধর্মকে পুঁজি করে বন বিভাগের জমি দখল ইউপিডিএফের, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা

এদিকে, সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ও অভিযানের কারণে ইউপিডিএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দ্রুত তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা বর্মাছড়ির ঘাঁটি ছেড়ে দুর্গম কালাপাহাড় অঞ্চল ও পার্বত্য অঞ্চলের বাহিরে ফটিকছড়ির দুর্গম অঞ্চলে অবস্থান নেওয়াসহ নিজেদের অবস্থান বদলের চেষ্টা করে।

দীর্ঘমেয়াদী সেনা অভিযানের কারণে ভবিষ্যতে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে চাঁদা আদায় কার্যক্রম এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় ইউপিডিএফ স্থানীয় নিরীহ জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে অস্থায়ী সেনা পেট্রোল বেস স্থাপনের বিরুদ্ধে চিরাচরিত কৌশল হিসেবে এলাকার জনগণ, মহিলা এবং শিশুদের জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে জমায়েত করে আন্দোলনে নামায়। বনবিভাগের সংরক্ষিত জমিতে স্থাপিত অস্থায়ী পেট্রোল বেসের স্থানটিকে বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বিহারের অংশ হিসেবে দাবি করে ব্যাপক অনলাইন প্রচারণা এবং বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় পোস্টার লাগিয়ে পাহাড়ি জনগণকে উত্তেজিত করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে।

ধর্মকে পুঁজি করে বন বিভাগের জমি দখল ইউপিডিএফের, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা

এরই ধারাবাহিকতায় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা গত ২৪ অক্টোবর বর্মাছড়ি অস্থায়ী পেট্রোল বেসের সামনে নিরীহ উপজাতি মহিলা, শিশু ও পুরুষদের জমায়েত করে এবং সেনা সদস্যদের সাথে আক্রমনাত্নক আচরণ করে। তারা বর্মাছড়িতে স্থাপিত অস্থায়ী পেট্রোল বেস আর্য কল্যাণ বিহারের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করে এবং সেনাবাহিনী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে কিন্তু সেসময় তাদের দাবির স্বপক্ষে কোন প্রকার জমির প্রমাণাদি উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়।

সরজমিনে গিয়ে দেখো যায়, বর্মাছড়ি এলাকাটি একটি পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকা, যার একছত্র নিয়ন্ত্রন করছে ইউপিডিএফ এবং নিকটবর্তী স্থানে কোন সেনা ক্যাম্প না থাকার কারণে ইউপিডিএফ দীর্ঘ সময় ধরে সশস্ত্র দলের ক্যাম্পসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে। একই সাথে বর্মাছড়ি এলাকাটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে ফটিকছড়ি হয়ে সমতলের যোগসূত্র হবার কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশের অভ্যন্তরে ইউপিডিএফ এর অস্ত্র চোরাচালানের রুট হিসেবেও ব্যবহার হয়ে আসছে।

ধর্মকে পুঁজি করে বন বিভাগের জমি দখল ইউপিডিএফের, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা

গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে, ইউপিডিএফ সশস্ত্র দলের অর্থ সম্পাদক অর্কিড চাকমা হেডম্যানসহ স্থানীয় পাড়া প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, ওই পেট্রোল বেসটির চারপাশের জমি ‘ব্যাকডেট’ করে কিয়াং ঘরের (আর্য কল্যাণ বিহার) জন্য কৃত দলিল তৈরি করা হবে। একইসাথে ভিক্ষু সংঘের পক্ষ থেকে বিবৃতি প্রদানের ধামাকা ঘটিয়ে সেখানে ব্যাপক ধর্মীয় আয়োজনের মাধ্যমে বিষয়টিকে আন্দোলনকারীদের কাছে বৈধতা অর্জনের ভাবে উপস্থাপন করা হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

ধর্মকে পুঁজি করে বন বিভাগের জমি দখল ইউপিডিএফের, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা

গোয়েন্দা নজরদারিতে আরও উঠে আসে, ইউপিডিএফ প্রধান প্রসিত বিকাশ খীসা ২৭-৩০ অক্টোবরের মধ্যে আর্য কল্যাণ বিহারে একটি বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশ দেন, যাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে জোরপূরবক ১০ থেকে ১৫ হাজার পাহাড়ি মানুষের জড়ো করা হবে। এ আয়োজনকে সফল করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে লিফলেট বিতরণ শুরু করা হয় এবং অনলাইন ও অফলাইনভাবে প্রচারণা চালানো হয়। এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে চলমান অভিযানকে বিতর্কিত করতে সেনাবাহিনীর অভিযানের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান করার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের এক অধ্যাপক ও খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার জ্যোতিমারা বুদ্ধিস্ট ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের এক ধর্মীয় নেতা অংশ নেওয়ার সম্ভাবনার কথা গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া যায়।

ধর্মকে পুঁজি করে বন বিভাগের জমি দখল ইউপিডিএফের, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা

একই সময়ে ইউপিডিএফ’র দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত অনলাইন কর্মী ও সমমনা ধর্মীয় নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাবাহিনী ও বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার শুরু করে, যার ফলে তাত্ত্বিকভাবে স্থানীয় পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকমুখী বির্তকের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতির বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয়েছে যে, ইউপিডিএফ গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে খাগড়াছড়ি ও গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় যে নাশকতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় তারা পুনরায় পার্বত্য অঞ্চলকে অশান্ত করে তোলা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠনের একটি রাষ্ট্রদ্রোহী এবং নাশকতামূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রসীত বিকাশ খীসা ও মাইকেল চাকমাসহ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে আছে, তাঁরা পরিকল্পিতভাবে দেশীয় ও বিদেশি শক্তি, কিছু বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে রামসু বাজারে নিহতদের ঘিরে ‘মৃতদেহের রাজনীতি’ এবং ‘ঘৃণার রাজনীতি’ ব্যবহারের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এ ক্ষেত্রে নারী ও শিশুকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে, যা মাঠ পর্যায়ের সেনা নেতৃত্বকে অত্যন্ত ধৈর্য্য ও পেশাদারিত্ব প্রদর্শনে বাধ্য করছে।

ধারনা করা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর ধৈর্য্য ও পেশাদারিত্বকে কাজে লাগিয়ে ইউপিডিএফ পার্বত্য অঞ্চলকে এক অনিবার্য সংঘাতময় অঞ্চলে রূপ দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা নিজ জাতিগোষ্ঠীর জনগণের উপর গুলি চালিয়ে হত্যা করার মত (রামসু বাজারে ইউপিডিএফের গুলিতে তিনজন স্বজাতির যুবক নিহত হয়) জঘন্য কার্যক্রমের দায়ভার সেনাবাহিনীর উপর চাপিয়ে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে আন্তর্জাতিকীকরণ করার জন্য প্রতিনিয়ত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ধর্মকে পুঁজি করে বন বিভাগের জমি দখল ইউপিডিএফের, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা

এদিকে, ইউপিডিএফ সৃষ্ট এই সমস্যার সমাধানে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জোন অধিনায়ক, এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে স্থানীয় প্রশাসন মনে করছে। যার প্রেক্ষিতে ঘটনার পর আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর ২০২৫) জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর জোন অধিনায়কগণ এবং দেশের প্রথমসারির প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উপস্থিতিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, হেডম্যান-কারবারিসহ আন্দোলনকারীদের সাথে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এসময় তাদের কাছে দাবির স্বপক্ষে দলিল দাখিলের আহবান করলেও তারা তা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়।

ধর্মকে পুঁজি করে বন বিভাগের জমি দখল ইউপিডিএফের, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা

বৈঠকে উপস্থিত সরকারি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউপিডিএফ কর্তৃক মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দাবি করা হয়েছে যে অস্থায়ী পেট্রোল বেসটি বিহারের সংরক্ষিত জমিতে স্থাপিত হয়েছে; তবে সংশ্লিষ্ট সরকারি দলিলাদি ও বনবিভাগের নথি পত্র ঘেঁটে দেখা যায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পটি বনবিভাগের জমিতে করার হচ্ছে এবং উক্ত দলিলাদি বনবিভাগের নিকট সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া বনবিভাগের নথি অনযায়ী এটাও পরিস্কার যে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা ধর্মকে ব্যবহার করে বিহার নির্মানের নামে বনবিভাগের জমি দখল করার চেষ্টা করছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারের সার্বিক ঘটনাটি খাগড়াছড়ির সংবেদনশীল ধর্ষণ ইস্যুর ন্যায় ধর্মীয় বিষয় ও আবেগকে পুঁজি করে পাহাড় অশান্ত করার প্রচেষ্ঠার একটি পুনরাবৃত্তি মাত্র। এই ধরনের প্ররোচনামূলক কার্যক্রম ও ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে সংগঠিত আন্দোলন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা বড় ধরনের অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারলে তা বৃহত্তর ভৌগোলিক ও সামাজিক অঙ্গনে প্রভাব ফেলতে পারে।

স্থানীয় সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ মনে করেন, এই রাজনৈতিক অপকৌশল ও সমস্যার সমাধানে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি সংস্থার সমন্বিত এবং দ্রুত পদক্ষেপই একমাত্র বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষা করতে পারে।

বার্মাছড়িতে মিথ্যা অপপ্রচার: ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঢাকতে বিভ্রান্তির নাটক

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিজ দেশের নিরীহ নাগরিকদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান পরিচালনা করা কোন পেশাদার সেনাবাহিনীর কাম্য হতে পারে না। সেনাবাহিনী সর্বদা সকল ধর্ম এবং গোষ্ঠীর ধর্মীয় এবং সামাজিক মূল্যবোধকে সম্মান করে এবং অভিযান পরিচালনাকালে এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে সকল স্তরের কমান্ডারদের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনীর মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কমান্ডার এবং সৈনিকদের বারংবার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড়া করানোর জন্য ইউপিডিএফ এবং অঙ্গ সংগঠন সমূহ পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট ইস্যু এবং ঘটনার অবতারণা করছে। সেনাবাহিনী সামগ্রিক বিষয়টি অনুধাবন করে তা অত্যন্ত ধৈর্য্য এবং পেশাদারিত্বের সাথে প্রতিটি ঘটনা মোকাবেলা করে যাচ্ছে। তবে ইউপিডিএফ কর্তৃক পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা কোন বিচ্ছিন্ন সাময়িক প্রচেষ্টা নয়, বরং অত্র অঞ্চলের উদীয়মান ভূ-রাজনীতির অপকৌশলমাত্র বলে সেনাবাহিনী মনে করে।

সেনাবাহিনী বারবার উল্লেখ করেছে যে, তারা সব ধর্ম ও গোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধকে সম্মান করে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় একটি অবশ্যম্ভাবী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এড়াতে সেনাবাহিনী বর্মাছড়িতে স্থাপিত অস্থায়ী পেট্রোল বেস অন্যত্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং পার্বত্য অঞ্চলে আরো কঠোর সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

সেনাবাহিনী আরও জানায়, পার্বত্য অঞ্চলে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিকরা ইউপিডিএফ সহ সকল রাষ্ট্র বিরোধী সংগঠনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে মাতৃভূমির অখন্ডতা রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব দৃঢ়তার সাথে পালন করতে দেশবাসীর নিকট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রসঙ্গত, বর্মাছড়ি এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই ইউপিডিএফের সশস্ত্র কার্যক্রম ও অস্ত্রচোরাচালানের সম্ভাব্য রুট হিসেবে পরিচিত; তাই বর্তমান অভিযান স্থানীয় স্তরে আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও ভবিষ্যতে অস্থিরতা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে অভিমত রয়েছে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *