বার্মাছড়িতে মিথ্যা অপপ্রচার: ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঢাকতে বিভ্রান্তির নাটক

বার্মাছড়িতে মিথ্যা অপপ্রচার: ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঢাকতে বিভ্রান্তির নাটক

বার্মাছড়িতে মিথ্যা অপপ্রচার: ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঢাকতে বিভ্রান্তির নাটক
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার লক্ষীছড়ি উপজেলার বার্মাছড়ি মুখ পাড়া—দীর্ঘদিন ধরে যেখানে ইউপিডিএফ সশস্ত্র তৎপরতা বজায় রাখতে চেয়েছে, সেই এলাকা আজ নতুন করে আলোচনায়। কারণ? বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল। কিন্তু এই নিরাপত্তা কার্যক্রমকে ঘিরেই ইউপিডিএফ তাদের নিজস্ব প্রচারমাধ্যমে গোঁজামিল তথ্য ছড়িয়ে দাবি করছে—আর্য কল্যাণ বনবিহারের জমি দখল করে সেনা ক্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে।

অথচ স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষ বলছেন—এমন দাবি পুরোপুরি মনগড়া এবং বাস্তবতা থেকে শত মাইল দূরের গল্প। বাস্তবতা হলো—এ এলাকায় ইউপিডিএফের সশস্ত্র কার্যক্রম বেড়ে ওঠার তথ্য পাওয়ার পর সেনাবাহিনী টহল কার্যক্রম জোরদার করেছে মাত্র। স্থায়ী ক্যাম্প নির্মাণের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

বার্মাছড়িতে সেনা ক্যাম্প নির্মাণের গুজব: ইউপিডিএফের উসকানিমূলক প্রচারণা

ইউপিডিএফের দাবি অনুযায়ী, সেনাবাহিনী নাকি স্থানীয়দের জমি দখল করছে। কিন্তু স্থানীয় প্রবীণ নেতৃত্ব, চেয়ারম্যান, বাজার কমিটির ব্যবসায়ী—কেউই এই প্রোপাগান্ডার সাথে একমত নন। বরং তারা বলছে—বছরের পর বছর ইউপিডিএফ এখানে “কমান্ড পোস্ট” তৈরি করে অস্ত্র মজুত এবং সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রণের কাজ চালিয়েছে। যে জমিকে তারা এখন “বিহারের জায়গা” দাবি করছে—সেটা কোনোদিনই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় ছিল না—বরং দীর্ঘদিন ইউপিডিএফের দখলে ছিল। আজ সেনাবাহিনী সেখানে টহল বাড়ানোয় তাদের কথিত আধিপত্য টিকছে না বলে অভিযোগ তুলছে দখলদাররাই।

লক্ষীছড়িতে সড়ক অবরোধর মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল কার্যক্রম ব্যাহত করার চেষ্টা ইউপিডিএফের

ইউপিডিএফের আরেক প্রচার—“সেনাদের কারণে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে”—এটিও সত্য নয়। বরং গত ২৪ অক্টোবর সকালে সশস্ত্র বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে ইউপিডিএফের সদস্যরাই রাতের আঁধারে খিরাম থেকে বার্মাছড়ি বাজারগামী সড়কের ১০-১২টি স্থানে গাছ কেটে, বাঁশ ফেলে, এমনকি বড় বড় গর্ত তৈরি করে পথ অবরোধ করে। উদ্দেশ্য ছিল—যাতে কোনোভাবেই নিরাপত্তা বাহিনী সশস্ত্র সমাবেশে পৌঁছাতে না পারে। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় সাধারণ মানুষ একসঙ্গে সড়ক মেরামত করে চলাচল স্বাভাবিক করে। অর্থাৎ জনগণের স্বার্থে যারাই কাজ করেছে—তারা সেনা সদস্য ও সাধারণ জনগণ; আর জনগণের চলাচল যাদের কারণে বিপর্যস্ত হয়েছে—তারা ইউপিডিএফের লোকজন।

লক্ষীছড়িতে সড়ক অবরোধর মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল কার্যক্রম ব্যাহত করার চেষ্টা ইউপিডিএফের

সবচেয়ে বিপজ্জনক অপপ্রচারটি হলো—“পাহাড়ি নারীরা সেনা সদস্যদের কারণে যৌন হয়রানির শিকার হবে”—এমন বিভীষিকা তৈরি করা। এটি দীর্ঘদিনের একটি পুরোনো মিথ্যা-বয়ান, যেটি সশস্ত্র গোষ্ঠী নিজেরাই নারীদের ভয় দেখিয়ে নিজেদের পাশ কাটানোর কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। বাস্তবে দেখা যায়—যখনই কোনো এলাকায় সেনার উপস্থিতি কমে, তখনই ইউপিডিএফ চাঁদাবাজি, অপহরণ, যৌন শোষণ ও সন্ত্রাস বৃদ্ধি করে। এই ভয়ভীতি দেখানো নারীসমাজের প্রতি প্রকৃত সহানুভূতি নয়—এটি জনগণের বিভক্তি তৈরির অতি কৌশলী রাজনীতি। স্থানীয়দের মন্তব্যেই প্রমাণ—

“সেনাবাহিনী এলাকায় থাকলে চাঁদাবাজি ও হয়রানি কমে”—এটাই সত্যিকারের বাস্তবতা।

এখানে আরেকটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে—ইউপিডিএফের সশস্ত্র কাঠামো টিকিয়ে রাখতে তাদের লাগবে ভয়, বিভ্রান্তি ও অস্থিতিশীলতা। সেনা টহল বাড়লে তাদের
• চাঁদাবাজি
• অস্ত্র জড়ো করা
• জিম্মি করে টাকা আদায়
• সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রণ
এসবই বাধাগ্রস্ত হয়। তাই তারা মিথ্যা গল্প দাঁড় করায়, ধর্মীয় অনুভূতি উসকায়, এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ায়—এটা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই ছাড়া কিছুই নয়।

লক্ষীছড়িতে সড়ক অবরোধর মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল কার্যক্রম ব্যাহত করার চেষ্টা ইউপিডিএফের

পাহাড়ের দুর্গম জনপদগুলোর সবচেয়ে বড় বাস্তবতা—এখানে মৌলিক সরকারি সেবা পৌঁছায় না, কিংবা দেরিতে পৌঁছায়। স্কুলে শিক্ষক থাকেন না, হাসপাতালে চিকিৎসক পাওয়া যায় না, রোগীকে শহরে নিতে হলে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। আর ঠিক সেখানেই সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে আছে মানুষের সবচেয়ে কাছে—নিরাপত্তার পাশাপাশি মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে। সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল কার্যক্রম বাড়ানো হলে নিয়মিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, স্কুল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দুর্গম গ্রামে খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা, বয়স্ক-অসহায় মানুষের দেখভাল—এসব আরও সহজ, দ্রুত ও নিয়মিত হয়। বহু এলাকায় সেনাবাহিনী রাস্তাঘাট, সেতু, পানির সংস্থান, সোলার লাইটিং—এমন উন্নয়নও করেছে, যা রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো গড়ে ওঠার আগেই মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে। পাহাড়ে বহু বাবা-মা স্বীকার করেন—সেনা সদস্যরা না থাকলে তাদের সন্তান আজ লেখাপড়া শেখার সুযোগ পেত না, বেঁচে ফিরত না অসুস্থতার পর। সেনা ক্যাম্প মানেই—চাঁদাবাজ ও অপরাধীদের ভয় কমে যায় সমাজে শান্তি-নিরাপত্তা ফিরে আসে। তাই সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এখানে কেবল সামরিক নিরাপত্তা নয়—এটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনধারায় মানবিক পরিবর্তনের ধারক। যারা প্রকৃত পাহাড়ি মানুষের অধিকার ও কল্যাণের কথা ভাবে, তারা জানে—সেনা ক্যাম্প কোনো ভয় নয়—বরং এটা এই অরণ্যের মাঝে বেঁচে থাকার বাস্তব ভরসা।

বার্মাছড়ি মুখের এই ঘটনাগুলো স্পষ্ট করে দেয়—ইউপিডিএফ জনগণের স্বার্থ নয়, নিজেদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের স্বার্থে লড়ছে। আর সেনাবাহিনী জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে দায়িত্ব পালন করছে। এ কারণেই স্থানীয়রা সেনা উপস্থিতিকে স্বস্তির প্রতীক হিসেবে দেখে—ভয়ের উৎস হিসেবে নয়। অপরদিকে ইউপিডিএফের সশস্ত্র ছায়া তাদের কাছে আতঙ্ক ছাড়া কিছু না।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *