ভারত মহাসাগরে সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এআই ডেটা সেন্টার, অস্বীকার গুগলের

ভারত মহাসাগরে সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এআই ডেটা সেন্টার, অস্বীকার গুগলের

ভারত মহাসাগরে সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এআই ডেটা সেন্টার, অস্বীকার গুগলের
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

গুগল এ বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে একটি ক্লাউড চুক্তি স্বাক্ষরের পর এশিয়া, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যবর্তী ভারত মহাসাগরের দূরবর্তী আউটপোস্ট ক্রিসমাস আইল্যান্ডে একটি বৃহৎ এআই ডেটা সেন্টার তৈরি করার পরিকল্পনা করছে বলে রয়টার্সের পর্যালোচিত নথি এবং কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জানা গেছে।

ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই ক্ষুদ্র দ্বীপের ডেটা সেন্টারের পরিকল্পনা আগে কখনো প্রকাশ করা হয়নি এবং এর আকার, খরচ ও সম্ভাব্য ব্যবহারসহ অনেক বিবরণই গোপন রয়ে গেছে।

তবে সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সুবিধাটি দ্বীপটির জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ হবে। কারণ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা ক্রমবর্ধমানভাবে দ্বীপটিকে ভারত মহাসাগরে চীনের সাবমেরিন এবং অন্যান্য নৌ কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্টলাইন হিসেবে দেখছেন।

ক্রিসমাস আইল্যান্ড শায়ার (স্থানীয় পরিষদ) কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন এবং কাউন্সিল সভার রেকর্ড অনুযায়ী, গুগল ডেটা হাবটি নির্মাণের জন্য দ্বীপের বিমানবন্দরের কাছে জমি লিজ নিতে আলোচনা চলছে, যার মধ্যে একটি স্থানীয় খনি কম্পানির সঙ্গে এর শক্তির প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করার চুক্তিও রয়েছে।

অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেডের মালিকানাধীন গুগল জানিয়েছে, এই প্রকল্পটি অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিকে ডিজিটাল স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য সাবসি কেবল অবকাঠামো সরবরাহের কাজের অংশ। কম্পানিটি কথিত প্রকল্পটির আকারকে ছোট করে দেখিয়েছে।

গুগলের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ক্রিসমাস আইল্যান্ডে ‘একটি বৃহৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডেটা সেন্টার’ নির্মাণ করছি না।

পরিকল্পনা নথিগুলোর তথ্য অনুসারে, গুগল ক্রিসমাস আইল্যান্ডকে এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য একটি ‘অতিরিক্ত ভবিষ্যত কেবল সিস্টেম’ প্রস্তাব করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্রিসমাস আইল্যান্ডের একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, গুগল ডিজেল ও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে একটি ৭-মেগাওয়াট ডেটা সেন্টারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি শক্তি সরবরাহের চুক্তির অনুরোধ করেছে। গুগল তার শক্তির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি।

অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিশ্চিত করেছে, গুগলের প্রস্তাবটি ক্রিসমাস আইল্যান্ডে একটি ডেটা সেন্টার স্থাপনের জন্য এবং এর মধ্যে একটি সাবসি কেবলের মাধ্যমে দ্বীপটিকে ডারউইনের সঙ্গে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বিবৃতিতে ডিপার্টমেন্ট অব ইনফ্রাস্ট্রাকচার রয়টার্সকে বলেছে, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পের শক্তির প্রয়োজনীয়তা স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসার সরবরাহের ওপর প্রভাব না ফেলে যাতে পূরণ হয়, তা নিশ্চিত করতে বিভাগ গুগলের সঙ্গে আলোচনা করছে।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগ এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সামরিক বাহিনীর মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি সাম্প্রতিক টেবিলটপ যুদ্ধ গেম আঞ্চলিক সংঘাতের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার জন্য ক্রিসমাস আইল্যান্ডের ভূমিকাকে প্রতিরক্ষার সম্মুখসারির মতো গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরেছে। বিশেষ করে, মনুষ্যবিহীন অস্ত্র সিস্টেম বা ড্রোন উৎক্ষেপণের সুবিধার জন্য দ্বীপটির গুরুত্ব অপরিসীম।

এই যুদ্ধ গেমগুলো পরিচালনা করা সাবেক মার্কিন নৌ কৌশলবিদ ব্রায়ান ক্লার্ক, যিনি বর্তমানে হাডসন ইনস্টিটিউটের একজন ফেলো, রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চীন বা অন্য কোনো প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংকটের সময় ক্রিসমাস আইল্যান্ডে একটি অগ্রবর্তী ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ নোড থাকা অত্যাবশ্যক হবে।

ক্লার্কের মতে, ‘ডেটা সেন্টারটি আংশিকভাবে আপনাকে সেই ধরনের এআই-সক্ষম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল করার সুযোগ দেবে যা ভবিষ্যতে আপনার প্রয়োজন। বিশেষ করে যখন আপনি নজরদারি মিশন, লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিতকরণ মিশন এবং এমনকি সরাসরি সংঘাতের জন্যও মনুষ্যবিহীন সিস্টেমের ওপর নির্ভর করবেন।’

তিনি আরো উল্লেখ করেন, সাবসি কেবলগুলো স্যাটেলাইটের চেয়ে যোগাযোগের জন্য অধিক ব্যান্ডউইথ এবং বেশি নির্ভরযোগ্যতা প্রদান করে, কারণ সংকটের সময় চীন স্যাটেলাইট যোগাযোগ বা স্টারলিংক জ্যাম করবে বলে ধরে নেওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, ‘যদি আপনার ক্রিসমাসে একটি ডেটা সেন্টার থাকে, তবে আপনি ক্লাউড অবকাঠামোর মাধ্যমেই সেই কাজগুলোর অনেক কিছু করতে পারবেন।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগ গত জুলাই মাসে গুগলের সঙ্গে একটি তিন বছরের ক্লাউড চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ব্রিটেনের সামরিক বাহিনীও সম্প্রতি গুগলের সঙ্গে একই ধরনের একটি ক্লাউড চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানকে জোরদার করবে বলে তারা জানিয়েছে।

গুগল গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশগত অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে যাতে ক্রিসমাস আইল্যান্ডকে উত্তর অস্ট্রেলিয়ার ডারউইন শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করে প্রথম সাবসি কেবলটি তৈরি করা যায়, যেখানে মার্কিন মেরিন কর্পস বছরের ছয় মাস অবস্থান করে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed