ফের অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে বাড়ছে চীন-ভারত উত্তেজনা

ফের অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে বাড়ছে চীন-ভারত উত্তেজনা

ফের অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে বাড়ছে চীন-ভারত উত্তেজনা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

সাংহাই বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্য-প্রবাসী এক ভারতীয় নারীকে আটক করার ঘটনায় দিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে নতুন করে কূটনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশকে জন্মস্থান হিসেবে পাসপোর্টে উল্লেখ করার কারণেই ওই নারীকে আটক করা হয় বলে জানা গেছে।

লন্ডন থেকে জাপানে যাওয়ার পথে গত শুক্রবার সাংহাই বিমানবন্দরে পেমা ওয়াংজোম থংডক নামের ওই ভারতীয় নারীকে অভিবাসন কর্মকর্তারা আটক করেন। চীন অরুণাচল প্রদেশকে তাদের অঞ্চল হিসেবে দাবি করে এবং এটিকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ বলে অভিহিত করে বেইজিং। যদিও ভারত এই দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

গতকাল মঙ্গলবার ভারত এই আটকের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং স্পষ্ট করে বলেছে, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’।

এই অভিজ্ঞতাকে ‘অপমানজনক’ উল্লেখ করে থংডক সাহায্য চেয়ে সাংহাই ও বেইজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। ভারতীয় কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে ১৮ ঘণ্টা পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল থংডকের আটককে ‘স্বেচ্ছাচারী’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, চীন সরকার আন্তর্জাতিক আকাশভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে এবং তাদের এই কর্মের তারা কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘তাদের এই কাজ নিজস্ব আইনকেও লঙ্ঘন করে, যেখানে আইন অনুযায়ী যে কোনো দেশের নাগরিককে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ভিসা-মুক্ত ট্রানজিটের অনুমতি দেওয়ার বিধান আছে।’

যদিও চীন এই আটকের ঘটনা অস্বীকার করেছে। ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং জানান, চীনের সীমান্ত পরিদর্শন কর্তৃপক্ষ ‘আইন ও প্রবিধান মেনে তল্লাশি চালিয়েছে’।

তিনি দাবি করেন, আইন প্রয়োগ ছিল পক্ষপাতহীন এবং কোনো ধরনের দুর্ব্যবহার করা হয়নি। ওই নারীর (থংডক) আইনি অধিকার সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত ছিল এবং কোনো ধরনের ‘আটক’ বা ‘হয়রানি’ করা হয়নি। তিনি যোগ করেন, বিমান সংস্থা চায়না ইস্টার্ন থংডককে বিশ্রাম সুবিধা ও খাবার সরবরাহ করেছিল।

তবে মাও নিং অরুণাচল নিয়ে চীনের অবস্থানে অনড় থেকে বলেন, ‘ভারত কর্তৃক অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত “অরুণাচল প্রদেশ”কে চীন কখনো স্বীকৃতি দেয়নি।’

হিমালয় পর্বতমালায় ভারত ও চীনের মধ্যে ৩ হাজার ৪৪০ ডি-ফ্যাক্টো সীমান্ত রয়েছে, যা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) নামে পরিচিত। সীমান্তরেখা বরাবর অবস্থিত অরুণাচল প্রদেশ কয়েক দশক ধরেই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার অন্যতম কারণ। যদিও সম্প্রতি দুই দেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে কিছু বড় পদক্ষেপ নিয়েছিল, যার মধ্যে বিমান পরিষেবা পুনরায় চালু করা এবং সীমান্ত উত্তেজনা কমাতে টহল ব্যবস্থা নিয়ে একমত হওয়া অন্যতম।

গত আগস্টে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই দিল্লি সফরে এসে বলেছিলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর একে অপরকে ‘প্রতিপক্ষ বা হুমকি’ হিসেবে না দেখে ‘অংশীদার’ হিসেবে দেখা উচিত।

এমন বন্ধুত্বের আবহের মধ্যে পেমা থংডকের আটক স্বাভাবিকভাবেই ভারতে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে থংডক জানান, তিনি ১৪ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। এর আগেও বহুবার সাংহাই হয়ে যাতায়াত করেছেন, কিন্তু কখনো কোনো সমস্যার সম্মুখীন হননি। তবে এবার অভিবাসন কর্মকর্তা তাঁকে লাইন থেকে আলাদা করে নিয়ে জানান যে তাঁর পাসপোর্ট অবৈধ।

থংডকের অভিযোগ, ‘যখন আমি তাদের প্রশ্ন করার চেষ্টা করি, তারা বলে, “অরুণাচল ভারতের অংশ নয়” এবং তারা হাসতে থাকে। তারা এমন কথাও বলে, “আপনার চীনা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা উচিত, আপনি চীনা, ভারতীয় নন”।’

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *