‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু’
 
                 
এ. বি. চাকমা
পার্বত্য চট্টগ্রামের অভিজাত দেওয়ান পরিবারের সন্তান এবং বিশিষ্ট সমাজসেবক ও আন্তর্জাতিক সনদপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ এ. কে. দেওয়ান লিখিত ও তাঁর সহধর্মিনী, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের প্রথম মহিলা সংসদ সদস্য, শ্রীমতি সুদীপ্তা দেওয়ান কর্তৃক প্রকাশিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থটি আকারে ছোট হলেও বইটিতে পরিবেশিত তথ্যগুলো মৌলিক উৎস দ্বারা সমর্থিত। ফলে বইটির ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। তাই গ্রন্থটি সম্বন্ধে দু’ একটি কথা অবতারনা করার প্রয়োজন মনে করছি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর তারই ভুমিজ সন্তানদের দ্বারা গ্রন্থ রচনার শুভ সূচনা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে অগ্রসর জাতিসত্তা চাকমা জাতির রাজা ভুবন মোহন রায় কর্তৃক ১৯১৯ সালে ‘চাকমা রাজবংশের ইতিহাস’ গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে। কোন জাতির সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা আসে তাঁর গৌরবান্বিত অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য থেকে। রাজা ভুবন মোহন রায় চাকমা রাজবংশের অতীত ইতিহাসের বিবরণ তুলে ধরে তাঁর ইতিহাস চেনার স্বাক্ষর রেখে গেছেন এবং পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাঁর দায়িত্বও পালন করেছেন। রাজা প্রদর্শিত এ ইতিহাস রচনার উদ্যোগ পরবর্তীতে আরো অনেককে উৎসাহিত করে। তারই ফলশ্রুতিতে আমরা দেখি বিশ বছর পর ১৯৪০ সালে শ্রীমাধব চন্দ্র চাকমা কর্ম্মী রচনা করেন ‘শ্রী শ্রী রাজনামা বা চাকমা জাতির ইতিহাস’। তাঁর গ্রন্থে চাকমা জাতির উৎপত্তির ইতিহাস অনুসন্ধানের পাশাপাশি তিনি ‘চাকমা জাতি ও শিক্ষা বিস্তার’ এবং ‘পার্বত্য ত্রিপুরায় চাকমা জাতি’ শিরোনামে দুটি অধ্যায় সন্নিবেশ করে নতুন তথ্যের সন্ধান দেন। তাঁর পথ ধরে এগিয়ে আসেন নোয়ারাম চাকমা। ১৯৬২ সালে তিনি রচনা করেন ‘পার্বত্য রাজলহরী’ নামে তথ্যসমৃদ্ধ একটি ইতিহাস গ্রন্থ। তবে পাকিস্তান আমলের শেষপ্রান্তে এসে অনেকটা গবেষণা ধর্মী ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেন শ্রী বিরাজ মোহন দেওয়ান। তাঁর বইটি বেশ আলোচিত, পঠিত এবং সবশেষে বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ কর্তৃক পুরষ্কৃত হয় এবং তিনি হন সংবর্ধিত। বাংলাদেশ আমলে চাকমাদের মধ্যে ইতিহাস গ্রন্থ রচনার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে। ১৯৮১ সালে প্রানহরি তালুকদার লিখেছেন ‘ চাকমা রাজবংশের ইতিহাস’ এবং তার পরের বছর (১৯৮২) প্রকাশিত হয় পুণাবন চাকমার ‘চাকমা ইতিহাস’ গ্রন্থটি। কিন্তু চাকমা জাতির ইতিহাস নিয়ে সবচেয়ে বিশেষণধর্মী গ্রন্থ রচয়িতার দাবিদার নিঃসন্দেহে অশোক কুমার দেওয়ান। ১৯৯২ ও ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘চাকমা জাতির ইতিহাস বিচার, প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ডদ্বয় বিপুল পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। চাকমাদের মধ্যেই তিনি ভ্রমাত্মক, পরীক্ষা-নিরীক্ষাহীন ইতিহাস লেখার গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দিয়ে যুক্তি নির্ভর বিচার-বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষ বিজ্ঞান সম্মত ইতিহাস রচনা সূচনা করেন।
তবে উপরে বর্ণিত গ্রন্থগুলি শুধু চাকমা জাতির ইতিহাস কেন্দ্রিক। লেখকগণ কেউই নিজ সম্প্রদায় থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, ধর্ম ও সংস্কৃতি সকল বিষয়কে কেন্দ্র করে বহুমাত্রিক তথ্য সম্মলিত এবং বিশ্লেষণধর্মী গ্রন্থ রচনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন সিদ্ধার্থ চাকমা। ১৯৮৬ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত তার ‘প্রসঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রাম’ গ্রন্থটি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার অতীত ও বর্তমান সম্পর্কে জানার একটি আকর গ্রন্থ। এছাড়া এডভোকেট জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমার লিখিত ‘ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে পার্বত্য স্থানীয় সরকার পরিষদ’(১৯৯১) গ্রন্থটিও পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার একটি সফল প্রয়াস। লেখক বৃটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে সরকারি দলিল দস্তাবেজ, বিভিন্ন রিপোর্ট সমকালীন সংবাদপত্র এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাঁর মূল্যবান গ্রন্থটি রচনা করেন। এর পর পার্বত্য চট্টগ্রামের কীর্তিমান পুরুষ সাবেক রাষ্ট্রদূত শরদিন্দু শেখর চাকমার (এস এস চাকমা) কথা না বললে তাঁর লেখনীর প্রতি অবিচার করা হয়। তিনি নিজে ইতিহাসের ছাত্র এবং বাংলাদেশ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক ঘটনাবলীর প্রত্যক্ষদর্শী এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি জড়িত। তাঁর লেখার পরিধি বিস্তৃত। ইতিমধ্যে তাঁর ডজন খানেক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের বর্ণনায় অকপটতা, বস্তুনিষ্ঠতা ও স্বচ্ছতার ছাপ সুস্পষ্ট। তাঁর রচিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের একাল সেকাল’ ভারত বিভাগ ও জিন্নাহর ভূমিকা ‘মুক্তিযুদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রাম, দি আনটোল্ড স্টোরি’ উল্লেখযোগ্য।
এবার আসি আলোচ্য গ্রন্থাকারের সদ্য প্রকাশিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রসঙ্গে। প্রথমেই গ্রন্থটির কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা বলে রাখি। যেমন গ্রন্থে কোন সূচিপত্র প্রকাশ করা হয়নি। লেখক গ্রন্থটিতে আলোচিত বিষয়সমূহকে কোন অধ্যায় বা পরিচ্ছেদ আকারে বিন্যস্ত করেননি। গ্রন্থপঞ্জিতে মাত্র একটি সাময়িকী ও একটি সহায়ক গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন। ব্যবহৃত পত্রিকাগুলোকে পদ্ধতিগতভাবে গ্রন্থের শেষে সন্নিবেশ করলে আরও সুন্দর হতো। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ পরিকল্পনা সুন্দর তবে তাঁর সঙ্গে লেখকের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিত সুংযুক্ত করা যেতো। বইটিতে অত্যন্ত সংক্ষিপ্তাকারে তথ্যগুলো পরিবেশিত হয়েছে। লেখক আরও সময় নিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারতেন। কারন ফ্যাক্টস্, সোর্স এবং লেখকের বিশ্লেষণ এ তিনটি মিলে ফ্যাক্টসগুলো সজীব প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
তবে লেখক লেখালেখির জগতে নবীন হওয়াতে উপরোক্ত সীমাবদ্ধতা থেকে উপরে যেতে পারেন বা তার সীমাবদ্ধতাগুলো মার্জনীয়। তারঁ বইটি নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিচিতি: এভাগে আছে- ব্রিটিশ শাসনামল; পাকিস্তান শাসনামল। এর পরের ভাগে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম। তারপর আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামল নিয়ে আলোচনা। এর মধ্যে নতুন চাকমা রাজা ঘোষণা; বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য আসন সংরক্ষন; পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠন; উপজাতীয় ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বৈদেশিক বৃত্তি প্রদান; চট্টগ্রাম ও ঢাকায় উপজাতীয় ছাত্রদের জন্য বাড়ি বরাদ্দ; পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহনের সিদ্ধান্ত এবং জাতীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার অবশ্যই রক্ষা করা হবে- বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা শিরোনামে আলোচনা। সবশেষে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান ও উপজাতীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহের খাতওয়ারী ধারাবাহিক সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এরপর লেখকের বক্তব্যের সমর্থনে বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন সম্বলিত পেপার কাটিং।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সাথে ঘুরে ফিরে বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গটি টেনে আনা হয়। সদ্য স্বাধীন দেশ বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তিনি। তাঁর আজন্ম লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলার রূপকার তিনি। তাঁর জাদুকরী নেতৃত্বে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর বজ্রকন্ঠে ধ্বনিত একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের কাব্যিক ভাষণের জন্য তিনি প্রশংসিত, নন্দিত, আলোচিত ও সুবিখ্যাত। বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন দেশ বিনির্মাণে কাজে ব্যস্ত। নবীন এ রাষ্ট্রটির সম্মুখে তখন অন্তহীন সমস্যা। বহির্বিশ্বের স্বীকৃতি আদায়, যুদ্ধবন্দী সমস্যা, ভারত ও পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের ফিরিয়ে আনা, মুক্তিযুদ্ধে সুহৃদ ভারতীয় যৌথবাহিনী প্রত্যাহার, সীমানা নির্ধারণ, ছিটমহল সমস্যা, ধ্বংস-বিধস্ত অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, শুন্য রাজকোষ, নবগঠিত দেশের জন্য সংবিধান প্রণয়ন এমনি বহুমুখী সমস্যার সামনে দেশের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধু। ঠিক এমনিতর জটিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবেলায় ব্যস্ত রাষ্ট্রনায়কের সামনে ৪টি বিশাল দাবি নিয়ে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে হাজির হন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ। ফলে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সুদৃষ্টি দেওয়ার সময় ও সুযোগ হয়নি। বলা যায় একটু দম নিতেও দেওয়া হয়নি। পাহাড়ি নেতৃবৃন্দের পেশকৃত দাবিনামা সুবিবেচিত না হওয়া এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার সংবিধানে পৃথক জাতিসত্তার দাবি প্রত্যাখ্যান এবং সর্বশেষে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের ইতিহাস অনুষ্ঠিতব্য প্রথম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ১৬ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটিতে আয়োজিত এক জনসভায় বঙ্গবন্ধুর দ্ব্যর্থক ভাষণের কারনে বঙ্গবন্ধুকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার জন্য দায়ী করা হয়। কিন্তু তাঁর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে (১৯৭২-৭৫) পার্বত্য চট্টগ্রামে গৃহিত পদক্ষেপসমূহকে কখনও বিবেচনায় আনা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থকার সেই অনালোচিত, উপেক্ষিত বিষয়কে তথ্য উপাত্ত ও প্রমাণের সাহায্যে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর এ প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। লেখক এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘১৯৭৩ সন হতে ১৯৭৫ আগস্ট পট পরিবর্তন পর্যন্ত তথ্য বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে অত্র পার্বত্য জেলায় যে সমস্ত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদিত হয়েছে তা জনসাধারণের সম্মুখে তুলে ধরা একান্ত প্রয়োজন। তা নাহলে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যে বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার তা বিশ্বাসে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আগামী দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে একটি বিকৃত অংশে পরিনত হবে বিধায় এই বইটি লেখা হলো।’ (লেখকের কথা অংশ দ্রষ্টব্য)
লেখক তাঁর লেখার মধ্যে যতটুকু সম্ভব নিরপেক্ষতা রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর লেখাতে এর প্রতিফলন দেখতে পায়, তিনি লিখেছেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সম্পর্কে আওয়ামীলীগ সরকারকে সম্পূর্ণ দায়মুক্ত ভাবার সুযোগ যেমন নেই, তেমনি এই শাসনামলের ঘাড়ে পুরোপুরি দায় চাপানোর অবকাশও নেই। তাই প্রচলিত ধারনাটি বিশ্বাসে প্রতিষ্টিত হবার আগে এবং আগামী দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের একটি বিকৃত অংশে পরিণত হবার আগে যাচাই বাছাই এর প্রয়োজন আছে।’(পৃ.৮)
মুক্তিযুদ্ধে উপজাতীয়দের ভূমিকা বিশেষ করে মহিলাদের ভূমিকাকে তুলে এনেছেন যা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। তবে সবচেয়ে আলোচিত ১৯৭৩ সালে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণ-‘আজ থেকে আপনাদের উপজাতি থেকে জাতিতে প্রমোশন দিলাম’ সম্পর্কেও গ্রন্থকার নিজস্ব সারগর্ভ ব্যাখ্যা উপন্থাপন করেছেন। তিনি লিখেছেন,
‘বঙ্গবন্ধু বুঝাতে চেয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে কোন জাতিভেদ থাকবে না। একজন বাঙালি নাগরিক সাংবিধানিকভাবে যে সুযোগ, সুবিধা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করবে ঠিক তেমনিভাবে ভোগ করার অধিকার থাকবে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীদের। তাই অখন্ড জাতীয় স্বার্থে তাদেরকে ভোগ করার সমান অধিকার নিশ্চিত করতেই বাঙালিতে প্রমোশন দিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে বঙ্গবন্ধুর উক্ত ভাষণ উপজাতীয়দের মনে সন্দেহ এবং অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। যা আজো বিদ্যমান।’ (পৃ.৯)
লেখক তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে বঙ্গবন্ধুর সময়কালে পার্বত্য চট্টগ্রামে গৃহিত উপজাতি বান্ধব কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়েছেন। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সুদীপ্তা দেওয়ানকে মহিলা সাংসদ মনোনীতকরন, মুক্তিযুদ্ধে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের বিতর্কিত ভূমিকা সত্ত্বেও তার নাবালক পুত্রকে নতুন রাজা ঘোষণার মাধ্যমে রাজতন্ত্রের ঐতিহ্য সংরক্ষণ উল্লেখযোগ্য। তাঁর সময়ে উপজাতীয়রা পুলিশ, প্রশাসনে উচ্চতর পদে প্রমোশন সহ অনেকেই বৈদেশিক বৃত্তিসহ বিবিধ সুবিধা লাভে সমর্থ হন। লেখক এসব বিষয়ে তথ্য উপাত্তসহ বর্ণনার মাধ্যমে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
পরিশেষে লেখকের গ্রন্থটি পাঠ করে স্বাধীনতা পরবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে বলে আশা করা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে যে ধুম্রজাল তৈরী করা হয়েছে সে জাল ছিন্ন করে সত্যসিংহ বেরিয়ে আসুক এ প্রত্যাশা করছি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে অনুসন্ধিৎসু সত্যনিষ্ট গবেষকদের কাছে গ্রন্থটি সমাদৃত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। সর্বশেষে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বরণের ৩৬ বছর পর হলেও লেখক বিবেক তাড়িত হয়ে যে তথ্য প্রমান নির্ভর গ্রন্থ উপহার দিয়েছেন সেজন্য তিনি অবশ্যই ধন্যবাদার্হ। পরবর্তীতে তাঁর এ গ্রন্থটির সংশোধিতও পরিবর্ধিত সংস্করণ দেখতে পাবো এ আশা ব্যক্ত করছি।
ডা. এ. কে. দেওয়ান, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু
প্রকাশক – সুদীপ্তা দেওয়ান, আনন্দ বিহার এলাকা , তবলছড়ি, রাঙামাটি।
প্রথম প্রকাশ: জুন ২০১১, পৃ. দুই + ৭০, মূল্য দুইশত টাকা।
উৎসর্গ: সর্বালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে।
