রাঙামাটির কাউখালীর ওসি-এসআই ও বনকর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার নির্দেশ - Southeast Asia Journal

রাঙামাটির কাউখালীর ওসি-এসআই ও বনকর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার নির্দেশ

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

আটককৃত আসামীকে বিনা বিচারে তিনদিন অবৈধভাবে থানা হাজতে আটকে রাখার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় রাঙামাটি কাউখালী থানার ওসি তদন্ত রফিকুল ইসলাম, এসআই শেখ মোঃ জাবেদ ও কাউখালীস্থ বনবিভাগের খাসখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দেবনাথ বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট্ কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেছেন আদালত। রাঙামাটির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ এর আদালত গত ১৩ ই আগষ্ট এক আদেশে এই সুপারিশ প্রদান করেন। এর আগে গত ৯ই আগষ্ট কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহিদ উল্ল্যা সহ সংশ্লিষ্টদেরকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে এই ব্যাপারে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেছিলো আদালত।

আদালতের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, রাঙামাটির কাউখালী থানার এসআই শেখ মোঃ জাবেদ মিয়া গত ৬ই আগষ্ট সন্ধ্যায় একটি তক্ষক সহ মোঃ রাকিব হোসেন একজনকে গ্রেফতার করেন এবং জব্দ তালিকা প্রস্তুত করেন। উক্ত তালিকার শেষাংশে উল্লেখ করা হয়, উক্ত আসামীকে জব্দকৃত আলামতসহ তিনি খাসখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দেবনাথ এর নিকট হস্তান্তর করেন। এর পরের দিন ৭ই আগষ্ট উক্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা বিপুলেশ্বরের আবেদনের প্রেক্ষিতে আসামীকে তিন দিন থানা হাজতে আটকে রাখেন।

বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ধারা ৪৫ এর বলা হয়েছে এই আইনের বিধানবলীর সহিত অসঙ্গতিপূর্ন না হওয়া সাপেক্ষে এই আইনের অধীন অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপীল ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট্ বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হইবে। অর্থাৎ পুলিশের সম্মুখে কোন বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর অধীনে আমল যোগ্য অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ যেকোনো ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেফতার করিতে পারিবেন। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৬১ ধারা অনুসারে কোনো পুলিশ অফিসার বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারকৃত কোন ব্যক্তিকে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় যুক্তিসঙ্গত সময় অপেক্ষা অধিককাল আটক রাখিবেন না এবং ১৬৭ ধারা অনুযায়ী কোন ম্যাজিষ্ট্রেটের বিশেষ আদেশ না থাকলে এরূপ সময় গ্রেফতারের স্থান হইতে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত সময় বাদ দিয়া চব্বিশ ঘন্টার অধিক হইবেনা। অর্থাৎ পুলিশ বিনা পরোয়ানায় আমলযোগ্য কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার অধিক সময় আটক রাখিতে পারিবেন না। এছাড়াও একই আইনের ১৫৫ ধারায়ও একই ধরনের কথা উল্লেখ রয়েছে।

আদালত উল্লেখ করেন নথিদৃষ্টে দেখা যায়, আসামী মোঃ রাকিব হোসেন বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৬(১) ধারায় অপরাধ করিয়াছেন। অত্র আইনের ধারা ৪৩ এ বলা হয়েছে ধারা ৩৬ এর অধীন সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য ও অজামিন যোগ্য হইবে এবং উক্ত ধারা ব্যতীত অন্যান্য ধারার অধীনে সংঘটিত অপরাধ আমল অযোগ্য জামিনযোগ্য ও ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষে আপোষ যোগ্য। সমস্ত বিচার বিশ্লেষন করে আদালত এই মর্মে উপনীত হনযে, ঘটনা সংঘটনকালীন সময়ে অফিসার ইনচার্জ (দায়িত্বপ্রাপ্ত) পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং এসআই জাবেদ মিয়া আসামীকে বিনা বিচারে তিন দিন থানা হাজতে আটকে রেখে একটি গুরুত্বর অপরাধ সংঘটন করেছেন। একই সাথে খাসখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দেবনাথ আসামী রাকীব হোসেনকে থানা হাজতে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার আবেদনের মাধ্যমে কাউখালী থানা কর্তৃপক্ষকে আসামী বিনা বিচারে থানায় আটকে রাখার অপরাধে প্রলুব্ধ রাখার শামিল অপরাধ করেছেন। সুতরাং উপরোক্ত বিষয় বিবেচনা করে ঘটনা সংঘটনকালীন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম, এসআই জাবেদ মিয়াসহ উক্ত অপরাধে জড়িত সংশ্লিষ্টরা সহ খাসখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দেবনাথ এর বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করেছেন আদালত।

এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইজি-পুলিশ হেডকোয়াটার্স, ডিআইজি-চট্টগ্রাম রেঞ্জ, পুলিশ সুপার রাঙামাটি জেলা, বন সংরক্ষক রাঙামাটি সার্কেল ও ডিএফও ঝুম নিয়ন্ত্রণ বনবিভাগকে অনুলিপি প্রদানের আদেশও দিয়েছেন সিনিয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কগনিজেন্স আদালত এর বিচারক আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ।