রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকারোক্তি দিলো মিয়ানমারের আরও দুই সেনা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রোহিঙ্গা গণহত্যায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি দিয়েছে দেশটির আরও দুই সেনা সদস্য। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দুই সৈনিকের আলোচিত জবানবন্দি প্রকাশের পর গণমাধ্যমের হাতে এসেছে সেনাদের বক্তব্যের নতুন ভিডিও ফুটেজ। যাতে আগের দুইজনসহ একসাথে চার সেনা সদস্যকে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দিতে দেখা যায়। জানা গেছে, নতুন দুই সেনা সদস্যও জবানবন্দি দেবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে।

সম্প্রতি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যায় দেশটির সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা নিয়ে দুই সেনা সদসস্যের স্বীকারোক্তির বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলছে বিশ্বজুড়েই। সেনাবাহিনীর গণহত্যার বর্ণনা দিয়ে অনেকটা দৃশ্যপটে আসেন তারা দুজন। তুলে ধরেন রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের বিস্তারিত বিবরণ। রাখাইনে কর্মরত সেনাবাহিনীর আরো দুজন মুখ খুলেছেন সেদেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে আলোচনায় আসা জাও নাইং তুন (৩০) ও মিও উইন তুন (৩৩)’র সাথে একসাথে ভিডিওতে স্বীকারোক্তি দিতে দেখা যায় তাদের।

তারা বলেন, ঔপনিবেশিক বাহিনীর মতো বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে নিপীড়ন করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বাহিনীর মধ্যেও জাতিগত ভিত্তিতে বৈষম্য করা হয়। বেশীরভাগ কর্মকর্তাই মাদকাসক্ত, মাদকের পৃষ্ঠপোষকতাও করে তারা। “অফিসাররা সব সময় বলতো, ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সবাই দাস।” সন্ত্রাসীদের মতো অস্ত্রের ব্যবহার করে বেসামরিক জনগণের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।

গণমাধ্যম বলছে, চারজনের মধ্যে দুজন আছেন বর্তমানে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জিম্মায়। বাকি দুজনও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জবানবন্দি দিবেন বলে জানা গেছে।

গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ন স্বাক্ষী হতে পারেন এই সেনারা, এমন মত মানবাধিকার কর্মীদের। ফোর্টিফাই রাইটস নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার সিইও ম্যাথিউ স্মিথ বলছেন, “এই প্রথম মিয়ানমার আর্মির ভেতরকার কারো বয়ান আমরা পাচ্ছি। সেনা সদস্যরাই গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের কথায় স্পষ্ট, রোহিঙ্গাদের নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়েই অভিযানে নেমেছিলো মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বিচারের প্রক্রিয়ায় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ”

সূত্র জানায়, এ চার সেনা সদস্যের জবানবন্দির ভিডিও ধারণ করেছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আরাকান আর্মি। দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের দূর্ভোগের কারণ হিসেবে রাখাইনদের সাথে বিভেদের অজুহাত দিয়ে আসছে মিয়ানমার। পরিহাস হলো, ভিন্ন সেই নৃ-গোষ্ঠীর সৌজণ্যেই কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছে রোহিঙ্গাদের ন্যায় বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা।

এর আগে, গত মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক টাইমস এবং কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন-সিবিসি ও একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছিলো, ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে মিয়ানমারে সেদেশের সেনাবাহিনী কর্তৃক হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান হত্যা, নির্যাতনসহ গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা স্বীকার করে নিজেদের জবানবন্দি দিয়েছে জাও নাইং তুন (৩০) ও মিও উইন তুন (৩৩) নামের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দুই সদস্য।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগষ্টে দেশটির আরাকান রাজ্যে একটি পুলিশ পোস্টে হামলার অভিযোগে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয় প্রায় সাড়ে ৭লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এর আগেও মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।

এ ঘটনার পর গতবছরের ১১ নভেম্বর ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। সম্প্রতি এ মামলায় নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে সহায়তার ঘোষনা দিয়ে কানাডা ও ইন্দোনেশিয়া।